কাঁথির নাবালিকা ধর্ষণ মামলায় নয়া মোড়। 'ভালোবাসার সম্পর্ক থাকলে নির্যাতিতা তরুণীকে বিয়ে করুন অভিযুক্ত।' প্রধান বিচারপতির এজলাসে এমনই সওয়াল করলেন কাঁথির নির্যাতিতার আইনজীবী। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি শ্রীপ্রকাশ শ্রীবাস্তবের এজলাসে মঙ্গলবার কাঁথির নাবালিকা ধর্ষণ মামলার শুনানি ছিল। মামলার শুনানি শেষে হলেও রায়দান স্থগিত রেখেছেন বিচারপতি। তবে এই মামলায় এদিন অভিযুক্তের আইনজীবীকে ভর্ৎসনা করেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির এক নাবালিকাকে দিঘার একটি হোটেলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের ছাত্রনেতা শুভদীপ গিরির বিরুদ্ধে। এরপর ধর্ষণের ভিডিও দেখিয়ে নাবালিকাকে ব্ল্যাকমেল করার অভিযোগ ওঠে ওই যুবকের বিরুদ্ধে। পরে মেয়েটির অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মামলা রুজু করে। নির্যাতিতার পরিবারকে অভিযোগ প্রত্যাহারে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর ঘটনার জল গড়ায় আদালত পর্যন্ত। তবে এরই মধ্যে নিম্ন আদালতে আগাম জামিনের আবেদন করেন অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্রনেতা শুভদীপ গিরি। কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ অবিলম্বে অভিযুক্ত শুভদীপ গিরিকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়।
এদিকে সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের পরে ওই অভিযুক্তের আইনজীবী জানান তাঁর মক্কেল আত্মসমর্পণ করবেন। যদিও এখনও ওই অভিযুক্ত আত্মসমর্পণ করেননি বা পুলিশও তাকে গ্রেফতার করেনি। মঙ্গলবার ওই মামলার শুানানিতে প্রধান বিচারপতি অভিযুক্তের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, 'সিঙ্গল বেঞ্চে আপনারা বলেছিলেন শুভদীপ গিরি আত্মসমর্পণ করবেন। আবার জামিনের আবেদন করছেন।
আরও পড়ুন- আমরা চোর হলে, তোরা ডাকাত’, বিরোধীদের বেনজির আক্রমণ মমতার
দুই আদালতে আপনাদের দু'রকম অবস্থান কেন?' প্রধান বিচারপতির প্রশ্নের উত্তরে এদিন অভিযুক্তের আইনজীবী জানান, আদালতে সেই প্রতিশ্রুতি আইনজীবীরা দিয়েছিলেন নাকি আদালত সেটি নথিভুক্ত করেছিল, তা স্পষ্ট নয়। তবে অভিযোগকারী তরুণী ও অভিযুক্তের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল বলে এদিন আদালতে জানিয়েছেন তিনি।
তবে সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপচিত রাজাশেখর মান্থার নির্দেশের জেরে তাঁর মক্কেলের আগাম জামিন পেতে সমস্যা হচ্ছে বলেও এদিন জানান অভিযুক্তের আইনজীবী। এরই পাশাপাশি রাজ্যের তরফে এদিন প্রধান বিচারপতিকে জানানো হয়, ইতিমধ্যেই নির্যাতিতার গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তবে নির্যাতিতার পরিবারই তদন্তের কাজে সহযোগিতা করছে না বলে অভিযোগ পুলিশের।
আরও পড়ুন- অনুব্রতহীন বীরভূমে নয়া কোর কমিটি গঠন মমতার, ঢুকলেন দুই ‘কেষ্ট-বিরোধী’ নেতা
এদিন নির্যাতিতার আইনজীবী মামলার শুনানিতে বলেন, 'পকসো আইনে মামলা হয়েছে। এই বিশেষ আইনের অনেক ক্ষমতা রয়েছে। ইতিমধ্যেই নির্যাতিতা তরুণী আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছেন। তাঁকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। পরে গর্ভপাত করাতে বাধ্য করানো হয়। সত্যিই যদিও ওঁদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক থেকে থাকে তবে অভিযুক্ত তো নির্যাতিতাকে বিয়ে করতে পারেন।' মঙ্গলবার উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনেছেন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব। মামলার শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত রেখেছেন তিনি।