ছোট থেকেই বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কারের নেশা তার। একাধিকবার পুরস্কৃতও হয়েছে এর স্বীকৃতি স্বরূপ। ইতিমধ্য়ে একটি পেটেন্টও দখলে এসেছে ছোট্ট মেয়েটির। আর এবার করোনা সংক্রমণ থেকে সাধারণ মানুষকে রেহাই দিতে নয়া আবিষ্কার করলেন বর্ধমানের মেয়ে দিগন্তিকা বসু।।
পূর্ব বর্ধমানের মেমারির বিদ্যাসাগর স্মৃতি বিদ্যামন্দির শাখা ২-এর একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিগন্তিকা বোস। ৮দিনের প্রচেষ্টায় সে আবিষ্কার করে ফেলেছে নভেল করোনা সংক্রমণরোধী বিশেষ মুখোশ (মাস্ক)। দিগন্তিকা অর নাম রেখেছে- 'Pure air provider and virus destroyer mask'। দিগন্তিকার কথায়, "যে দিন লকডাউন ঘোষণা করল। জানলাম, পরীক্ষা হবে না। সেই তখন থেকেই ভাবতে ভাবতে মাথায় এসেছে এই ব্যাপারটা। এর জন্য় বিশেষ পড়াশুনাও করেছি। সাত-আট দিন সময় লেগেছে। দেখতে পাচ্ছি, সাধারণ মাস্ক পড়ে সকলে ঘুরছে। কিন্তু, এতে ভাইরাস আটকায় না। তাই আবিষ্কারের প্রচেষ্টা।"
দিগন্তিকার বাবা সুদীপ্ত বোস জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই এই আবিষ্কার ভারত সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের 'কোভিড-১৯ সলিউশন চ্যালেঞ্জট-এর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। মন্ত্রকের ভাইরোলজিস্টরা এই আবিষ্কার নিয়ে খুবই আশাবাদী। অপরদিকে ভারত সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের অধিভুক্ত স্বশাসিত সংস্থা ন্যাশনাল ইনোভেশন ফাউন্ডেশন ইন্ডিয়ার বিজ্ঞানীরা কীভাবে এটা সম্ভব হচ্ছে তা খতিয়ে দেখছেন। ওড়িশার বীর সুন্দর সাই ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির আইডিয়া ইনোভেশন শাখার 'হ্যাক ফর কোভিড-১৯ 'এর তালিকা ভুক্ত হয়েছে এই আবিষ্কার।
আরও পড়ুন: করোনায় আর্থিক সাহায্য মমতার, মোদীর তহবিলে দিলেন ৫ লক্ষ টাকা
দিগন্তিকাই ব্য়াখ্য়া দিয়েছে তাঁর এই বিশেষ মাস্কের। কি সেই আবিষ্কার? সে জানাচ্ছে, এটি একটি বিশেষ ধরনের মুখোশ (মাস্ক) যা পরে প্রশ্বাস নিলে ধূলিকণা ও ভাইরাস মুক্ত বাতাস ফুসফুসে প্রবেশ করবে না। অপর দিকে নভেল করোনা পজেটিভ কোনও ব্যক্তি এটা পরে নিঃশ্বাস ত্যাগ করলে বা হাঁচলে বা কাশলে তা থেকে নির্গত ড্রপলেট এর মধ্যে থাকা করোনা ভাইরাস বা অন্য কোনো ভাইরাসকেও প্রতিনিয়ত নষ্ট করে দেবার ক্ষমতা রাখে এই মাাস্কে। ফলে সংক্রমণের সম্ভাবনা কমে যাবে।
কী করে কাজ করে এই মাস্ক?
এই মাস্ক দুইটি অংশে বিভক্ত। প্রথম অংশে রয়েছে দুটি একমুখী ভাল্ব এবং দ্বিতীয় অংশে রয়েছে দুটি আধার। প্রথমে প্রশ্বাস গ্ৰহণের সময় বাতাস থেকে ধূলিকণা, জলকণাকে আটকে দেয় ও ভাইরাস এর লিপিড প্রটিনকে ধ্বংস করে বিশুদ্ধ বাতাস একমুখী ভাল্ব-এর মধ্য দিয়ে মাস্কের ভিতর দিয়ে ফুসফুসে যায়। আবার নিঃশ্বাস ত্যাগ করার সময় অন্য একটি একমুখী ভাল্ব-এর ভিতর দিয়ে বেরিয়ে আর একটি আধারের ভিতরে প্রবেশ করে। ফলে ওই আধারের মধ্যে বিশেষ প্রযুক্তির সাহায্যে মাত্র কয়েক সেকেন্ডে ভাইরাসের লিপিড প্রটিন-এর স্তরটি ভেঙে দেওয়া যায়। ফলে ভাইরাস নষ্ট হয়ে যায়। তা আর সংক্রমণ ঘটাতে পারে না। এর ফলে নভেল করোনা পজেটিভ ব্যক্তি এই মাস্ক ব্য়বহার করলে তার থেকে নির্গত ড্রপলেটে আর ভাইরাসের অস্তিত্ব থাাকবে না।
নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে বঙ্গ তনয়ার এই নয়া আবিষ্কার গবেষণায় নবদিগন্ত খুলে দিতে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।