Advertisment

গাছের মগডালে কোয়ারেন্টাইন শয্যা বাংলায়

করোনা মোকাবিলায় শহুরে সচেতন বাসিন্দাদের অনেকেই যা করতে ব্যর্থ, তাই করলেন পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামের এই সাত জন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

পুরুলিয়ায় গাছের মগডালে কোয়ারেন্টাইনে সাত যুবক।

করোনা আতঙ্ক জারি। তারই মধ্যে গ্রামের সাত যুবক ফিরেছেন চেন্নাই থেকে। সতর্ক গ্রামবাসীরা প্রশাসনের সহায়তায় ওই সাত যুবককে প্রথমেই পাঠায় হাসপাতালে। চিকিৎসকরা হোম কোয়ারেন্টানে থাকতে বলেন ওই সাত জনকে। কিন্তু, মাটির বাড়িতে থাকার ঘর নেই। অগত্যা, গাছেই মাচা করে হল কোয়ারেন্টাইন। গত কয়েকদিন ধরে সেই মাচাতেই বাস চেন্নাই ফেরত যুবকদের। পুরুলিয়ার বলরামপুরের ভাঙিডি গ্রামে গেলেই এখন এই দৃশ্য চোখে পড়বে।

Advertisment

বাঁস ও কাঠ দিয়ে মাটি থেকে প্রায় আট ফুট উচ্চতায় আম গাছে তৈরি করা হয়েছে মাচা। প্লাসটিক ও মশারি দিয়ে মাচা মুড়ে ফেলা হয়েছে। মোবাইল সচল রাখতে সেই মাচাতেই রয়েছে বৈদ্যুতিক প্লাগ পয়েন্ট। আপাতত বহাল তবিয়তেই কোয়ান্টাইন দশা কাটাচ্ছেন চেন্নাই ফেরত পুরুলিয়ার সাত যুবক। এখানেই শেষ নয়, সতর্কতা হিসাবে মুখে সবসময় মাস্ক পড়ে রয়েছেন তাঁরা। জামাকাপড় নিজেরাই ধুচ্ছেন। এককথায় করোনা মোকাবিলায় শহুরে সচেতন বাসিন্দাদের অনেকেই যা করতে ব্যর্থ, তাই করলেন পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামের এই সাত জন।

কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব দেখে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেয় পুরুলিয়ার এই সাত পরিযায়ী শ্রমিক। গাড়ির কারখানায় ৫০০ টাকা রোজে কাজ করেন এঁরা। গত রবিবারই ট্রেনে করে খড়গপুরে আসেন সাতজন। সেখান থেকেই বাসে বলরামপুর। ২২-২৪ বয়সী এই যুবকদের গ্রামে আসার খবর ছড়াতেই অতঙ্কিত হয়ে পড়েন গ্রামবাসীরা। তারপরই গাছেই কোয়ান্টাইনে থাকার ব্যবস্থা করা হয়।

চেন্নাই ফেরত বিজয় লায়া সানডে এক্সপ্রেসকে ফোনে বলেন, 'গাছেই দিনের বেশিরভাগ সময় কাটাচ্ছি। খাবার নেওয়া বা অন্য প্রয়োজন ছাড়া নিচে নামছি না। সংক্রমণ যাতে না ছড়িয়ে পড়ে তার জন্যই এই পদক্ষেপ। এতে, গ্রামবাসীরাও খুশি।'

আরও পড়ুন: তেহট্ট জীবাণুমুক্ত করতে কলকাতা থেকে যাচ্ছে স্প্রিংকলার গাড়ি ও হ্যান্ড মেশিন

গাচ কোয়ারেন্টাইনে থাকা আরেক যুবক বিজয় লাহার কথায়, 'গ্রামবাসীরাই প্রশাসনের সহায়তায় আমাদের হাসপাতালে পাঠালো। সেখান থেকেই ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকতে বলা হয়। কিন্তু, আমাদের মাটির বাড়িতে বাড়তি ঘর নেই। তাই গাছেই আলাদা থাকার ব্যবস্থা গ্রামবাসীরা করে দিয়েছেন। '

ভাঙিডি গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, 'অন্যদের যাতে ভাইরাস গ্রাস না করে তাই আলাদা করে রাখার ব্যবস্থা। বাড়িতে ঘর নেই। তাই এই বিকল্প পদ্ধতিতে ওদের রাখা হয়েছে। তবে, প্রয়োজনীয় সবকিছু সেখানে আমরা দিয়ে আসছি।' প্রশাসন আইসোলেশনের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করবে বলে আশা গ্রামবাসীদের। কোয়ারেন্টাইনে থাকা দীনবন্ধু সিং সর্দার বলেন, 'আমাদের খাবার আলাদা থালা, কাপড় ধোয়ার সাবান গ্রামবাসীরাই দিচ্ছেন।'

লকডাউনে সবচেয়ে সমস্যায় পরিযায়ী শ্রমিকরা। কাজ বন্ধ হওয়ায় টাকা মিলছে না। বাড়ি ফিরতে পারলেও পুরুলিয়ার এই সাত শ্রমিকও গত কয়েকদিনের কাজের টাকা পাননি। তবে, প্রিয়জনদের কাছে ফিরতে পেরেই স্বস্তিতে তাঁরা।

রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী তথা বলরামপুরের বিধায়ক শান্তিরাম মাহাতো বলেন, 'অযোধ্যা পাহাড়ের কাছে এই ধরনের ব্যবস্থা চালু আছে। হাতি তাড়াতে এই উদ্যোগ করা হয়। আমি সাত যুবকের ফেরার কথা শুনেছি। দেখা যাক কী করতে পারি।' রবিবারই দুপুরেই অবশ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই সাত জনকে সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে স্থানান্তরিত করা হয়।

Read the full story in English

coronavirus purulia West Bengal
Advertisment