তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। সিঙ্গুর নিয়ে বুধবারই মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন যে, সিঙ্গুর থেকে টাটাদের তিনি নন, তাড়িয়েছে সিপিএম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিস্ফোরক মন্তব্যের পর থেকেই তাঁকে 'মিথ্যাবাদী' বলে একযোগে তোপ দেগেছে বাম, কংগ্রেস, বিজেপি নেতৃত্ব। বৃহস্পতিবার বিরোধীদের সুরেই সুর মেলালেন জমি আন্দোলনের সময় সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।
কী বলেছেন মাস্টারমশাই?
২০০৬ সালে সিঙ্গুরে টাটাদের ন্যানো কারখানা স্থাপণের জন্য জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়েছিল। যার প্রতিবাদে মুখর হয়েছিলেন অনিচ্ছুক জমিদাতারা। গড়ে ওঠে আন্দোলন। যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই সময় সিঙ্গুরের বিধায়ক ছিলেন জোড়া-ফুলের রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। স্থানীয়দের কাছে যিনি মাস্টারমশাই নামেই পরিচিত। জমি অধিগ্রহণের বিরোধীতায় তিনিও মুখর ছিলেন। দলনেত্রীর সঙ্গে জমি অধিগ্রণের নানান প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
প্রতিবাদ আন্দোলনের জেরে ২০২৮ সালের অক্টোবরে টাটা গোষ্ঠী ন্যানো কারখানা সিঙ্গুর থেকে গুজরাটের সানন্দে স্থানান্তর করেছিল। যার দায় বাম, বিজেপি, কংগ্রেস সহ একাংশের রাজ্যবাসী তৃণমূলের ঘাড়েই দিয়ে থাকে। ২০১১-তে রাজ্যের ক্ষমতায় এলেও জোড়া-ফুল সরকার ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'শিল্প বিরোধী' তকমা জোটে।
সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। ফলে ফের জমি আন্দোলনের স্মৃতি উস্কে দিতে মরিয়া মমতা। বুধবার সিঙ্গুর থেকে দাদা বিদায়ের দায় ঝেড়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, 'আরে টাটাকে আমি তাড়াইনি। তাড়িয়েছে সিপিএম। ওরা জোর করে কৃষকদের জমি নিয়েছিল। আমরা সেই জমি ফিরিয়ে দিয়েছি।' তবে এ রাজ্যে শিল্পের পক্ষেও তাঁর সরকার বলে জানিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবি নিয়েই বিতর্ক বেঁধেছে। এ দিন জমি আন্দোলনের সময় (২০০৬) সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য মমতার বক্তব্যের বিরোধীতা করেছেন। বলেছেন, 'শুধুমাত্র সিপিএমের জন্য টাটা চলে গেছে এটা আমি বিশ্বাস করি না। সিঙ্গুর আন্দোলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ আমাদের সবার ধরনার জেরেই টাটারা রাজ্য ছেড়ে চলে যায়।'
কেন হঠাউ মুখ্যমন্ত্রী বলছেন তৎকালীন শাসক সিপিএমের জন্য টাটারা রাজ্য ছেড়েছিল? মাস্টারমশাইয়ের যুক্তি, 'তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর সামনে শাসক ও আন্দোলনকারীদের যে চুক্তি হয়েছিল, সেই চুক্তি বাতিল করে দিয়েছিল সিপিএমের পলিটব্যুরো। সম্ভবত সেজন্য মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সিপিএম টাটাদের তাড়িয়েছে।' তবে মমতার কথার যুক্তু মানতে নারাজ তিনি। বলেছেন, 'কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ঠিক বলছেন না। কারণ, সেই চুক্তির কপি কখনও টাটাদের কাছে পৌঁছয়নি। কারখানার গেটের সামনে ঘটে যাওয়া একের পর এক ঘটনার জেরেই টাটারা সিঙ্গুর ছেড়েছিল।'
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে সিঙ্গুরের প্রাক্তন বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। ভোটেও লড়েছিলেন প্রায় ৯০ বছরের মাস্টারমশাই। তবে একদা ছাত্র বেচারাম মান্নার কাছে পরাজিত হন তিনি। পরে বিজেপির নানা কর্মসূচি থেকেক তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়। জানিয়েছিলেন, বিজেপি-র কাজকর্মের সঙ্গে তিনি মানিয়ে নিতে পারছেন না। তাঁকে পদ্ম শিবির বিশেষ সম্মান দেয় না বলেও আক্ষেপ করেছিলেন।
সিঙুর থেকে টাটাদের আমি তাড়াইনি। তাড়িয়েছে সিপিএম। বুধবার বিকেলে শিলিগুড়িতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে তোলপাড় শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যা বলছেন বলে একযোগে আক্রমণ শানিয়েছে বাম – বিজেপি কংগ্রেস। এবার তাদের দাবিকেই সমর্থন করলেন সিঙুর আন্দোলনের অন্যতম নেতা রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার সকালে মাস্টারমশাই বলেন, মমতার ধরনার জন্যই টাটারা সিঙুর ছেড়ে চলে গিয়েছে।
এদিন মাস্টারমশাইকে বলতে শোনা যায়, ‘শুধুমাত্র সিপিএমের জন্য টাটা চলে গেছে এটা আমি বিশ্বাস করি না। সিঙুর আন্দোলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ আমাদের সবার ধরনার জেরেই টাটারা সিঙুর ছেড়ে চলে যায়।’
তিনি বলেন, ‘তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর সামনে শাসক ও আন্দোলনকারীদের যে চুক্তি হয়েছিল, সেই চুক্তি বাতিল করে দিয়েছিল সিপিএমের পলিটব্যুরো। সম্ভবত সেজন্য মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সিপিএম টাটাদের তাড়িয়েছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ঠিক বলছেন না। কারণ, সেই চুক্তির কপি কখনও টাটাদের কাছে পৌঁছয়নি। কারখানার গেটের সামনে ঘটে যাওয়া একের পর এক ঘটনার জেরেই টাটারা সিঙুর ছেড়ে চলে যান।’
বলে রাখি, বুধবার শিলিগুড়িতে সরকারি বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে মমতা বলেন, ‘আরে টাটাকে আমি তাড়াইনি। তাড়িয়েছে সিপিএম। ওরা জোর করে কৃষকদের জমি নিয়েছিল। আমরা সেই জমি ফিরিয়ে দিয়েছি।’