পেশায় স্কুলশিক্ষক। অথচ বাড়িতেই বেআইনিভাবে চালাচ্ছিলেন কুড়ি লিটারের জারবন্দি পরিস্রুত জলের কারখানা। তাঁর বাড়ি থেকেই জারবন্দি জল নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে মালদা শহরের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছিল। দিনের পর দিন ধরে চলছিল এই ব্যবসা। কিন্তু সেই জলের গুণগতমান যাচাই করবে কে! খবর পেয়ে ছুটে আসেন জেলা খাদ্য নিরাপত্তা দফতরের কর্তারা। গুণগত মান যাচাইয়ের পর সিল করে দেওয়া হল সমরেন্দ্রনাথ দাস নামে মালদার গান্ধী পার্ক এলাকার বাসিন্দা ওই শিক্ষকের বেআইনি জলের কারখানা।
শুধু ওই শিক্ষকের বাড়িই না। মালদা এলাকায় এরকম আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় বেআইনি কুড়ি লিটারের জারবন্দি জলের কারখানা চলছে। তার মধ্যে গুণগত মান যাচাইয়ের পর কয়েকটি কারখানা বুধবারই বন্ধ করে দিয়েছেন জেলা খাদ্য নিরাপত্তা দফতরের আধিকারিকরা। এই বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি, অভিযুক্ত জল কারখানার মালিকদের তাঁরা নির্দিষ্ট ধারায় জরিমানাও করেছেন।
বুধবার সকাল থেকেই শুরু হয়েছিল অভিযান। সারাদিন ধরে মালদা শহরের বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি চালান খাদ্য দফতরের আধিকারিকরা। সব মিলিয়ে প্রায় সাতটি বেআইনি জলের কারখানার বিরুদ্ধে তাঁরা বুধবার আইনত ব্যবস্থা নিয়েছেন। আর তা করতে গিয়ে মালদা শহরের অলি-গলিতে যেভাবে ব্যাঙের ছাতার মত বাড়ির মধ্যে বেআইনি জলের কারখানা গড়ে উঠেছে, তা দেখে রীতিমতো অবাক হয়ে গিয়েছেন আধিকারিকরা। তাঁদের কাছে অভিযোগ আছে, এখনও মালদা শহরে এমন কারখানা আরও বেশ কয়েকটি চলছে। সেই সব কারখানাও বন্ধ করে দেওয়া হবে। সেই জন্য তাঁরা লাগাতার অভিযান চালাবেন বলেই খাদ্য দফতরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন।
খাদ্য নিরাপত্তা দফতরের আধিকারিকরা আরও জানান, অতীতে এনিয়ে বারবার সতর্ক করা হয়েছিল। তারপরও কিছু বেআইনি জলের কারখানার মালিক তাতে কান দেননি। তাই আর তাঁরা কোনওরকম ঢিলেমিতে নারাজ। কারণ, এর সঙ্গে মানুষের স্বাস্থ্যের বিষয়ও জড়িত। সেজন্য বেআইনি জলের কারখানার বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযান চলবে।
আরও পড়ুন- ফের বাড়ল রান্নার গ্যাসের দাম, কলকাতায় সিলিন্ডার এখন ১,০৭৯ টাকা
কীভাবে চলছিল এই কারবার? খাদ্য নিরাপত্তা দফতরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, বাড়ির ট্যাংকে মজুত করা জল ট্যাপকলের মাধ্যমে জারবন্দি করে সরবরাহ করা হচ্ছিল মালদা শহরের অলিগলিতে। গান্ধী পার্ক, ঘোড়াপির, মালঞ্চপল্লি-সহ মালদা শহরের বেশ কিছু এলাকার বাড়িতেই চলছিল এভাবে জারবন্দি জলের কারবার। অভিযুক্তদের না-ছিল কারখানা চালানোর কাগজপত্র। না-ছিল কারখানায় পানীয় জলের ব্যবহার সংক্রান্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা।
এই ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিরাপত্তা দফতরের আধিকারিক প্রশান্তকুমার বৈদিক বলেন, 'মালদা শহরে ১২টি বৈধ পরিস্রুত পানীয় জলের কারখানার অনুমোদন আছে। এর বাইরে যেভাবে বেআইনি কুড়ি লিটারের জারবন্দি জলের কারখানা চলছে, তাতে আমরা রীতিমতো উদ্বিগ্ন। বেআইনি কারখানাগুলো সিল করে দেওয়া হয়েছে। আইনি নোটিস দিয়েছি। এরকম অভিযান লাগাতার চলবে।'