কাল থেকে আগামি ১৪ দিনের জন্য বন্ধ লোকাল ট্রেন পরিষেবা। জেলায় জেলায় করোনার চেন ভাঙতে নবান্নের এই সিদ্ধান্ত। আর এভাবে আয়ের অন্যতম উৎস বন্ধ হওয়ায় ফের অথৈ জলে রেল হকাররা। এদিন পূর্ব রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের বীরাটি স্টেশনে গিয়ে দেখা গিয়েছে হকারদের মধ্যে চাপা উদ্বেগ। স্টেশনেই ফুচকার স্টল নিয়ে বসা এক ব্যবসায়ীর মন্তব্য, ‘পূর্ণ লকডাউনের পর ট্রেন চালু হলে ফের পুঁজি জোগাড় করে ব্যবসা ঘুরাবার চেষ্টা করছিলাম। আবার পথে বসতে হচ্ছে।‘
বারাসাত কদম্বগাছি থেকে লোকাল ট্রেনে যাত্রা করে কখনও বিরাটি, কখনও দুর্গানগর, কখনও আবার বেলঘরিয়ায় গামছা, তোয়ালে, টেবিল কভার ফেরি করেন এক হকার। বিরাটি স্টেশনের দুই নম্বর প্ল্যাটফর্মে খানিকটা হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে সেওি ভদ্রলোক। তাঁকে এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে, খানিকটা বিরক্তি নিয়ে তাঁর জবাব, ‘একাংশের অসচেতনতার কারণে প্রতিবার মাশুল দিতে হচ্ছে আমাদের।‘ করোনা যবে থেকে পরভাব বাড়িয়েছে, তবে থেকেই তিনি ট্রেনে দেখতেন অধিকাংশ মাস্কহীন ভাবেই যাত্রা করছেন। এমন অভিযোগ করেন ওই হকার।
কখনও প্ল্যাটফর্মে বসে, কখনও আবার ট্রেনে উঠে পেন, ফাইল বিক্রি করা এক যুবক এগিয়ে এসে বলেন, ‘শুধু ফ্রি-তে চাল, ডালে পেট ভরবে? নুন, তেল, আলু এগুলো কিনতে খরচ নেই?’
তবে শুধু রেল হকাররা এই সিদ্ধান্তে যারপরনাই বিপাকে শহরতলি থেকে কলকাতা ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করা যাত্রীরাও। প্রতিদিন মছলন্দপুর থেকে ট্রেনে বিধাননগর নেমে সল্টলেক অফিসে যাতায়াত করা এক যুবকও বেশ উদ্বিগ্ন এই সিদ্ধান্তে। তাঁর মন্তব্য, ‘যাঁদের বাড়ি থেকে কাজ আর সরকারি কর্মী, তাঁদের কাছে এই সিদ্ধান্ত শাপে বর।কিন্তু আমাদের মতো যারা অত্যাবশকীয় পণ্য সরবারহের সঙ্গে যুক্ত তাঁদের কী হবে?’ এমন অনেকেই রেল বন্ধের সিদ্ধান্তে তাঁদের কী হবে, প্রশ্ন তুলেছেন।
কিন্তু চিকিৎসকরা বলছে, ক্রমশ জাঁকিয়ে বসা কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ রুখতে ট্রেন বন্ধ রাখা মাস্টার স্ট্রোক। বেশি মানুষের যাতায়াত বা জমায়েত এমন পরিষেবা দিন কয়েক বন্ধ থাকলে কিছুটা কমবে করোনা গ্রাফ। তাই দেরিতে হলেও নবান্নের এই সিদ্ধান্তকে অভিবাদন জানিয়েছেন তাঁরা।
বৃহস্পতিবার থেকে আপাতত আগামি ১৪ দিনের জন্য লোকাল ট্রেন বন্ধ। বুধবার রাজ্য সরকার বিবৃতি দিয়ে একথা জানিয়েছে। তবে রেলের তরফে জানানো হয়েছে, পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত রাজ্যের সমস্ত লোকাল ট্রেন পরিষেবা বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ থাকবে।