Advertisment

ছোট বোনের বিয়ে দেওয়া হল না রাজেশের, লাদাখের ফোন পেয়ে শোকে পাথর বীরভূমের গ্রাম

ভারত-চিন সীমান্তে লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে চিনা বাহিনীর আক্রমনে শহিদ হয়েছেন বীরভূমের মহম্মদ বাজারের বেলগড়িয়া গ্রামের তরতাজা যুবক রাজেশ ওরাং।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

রাজেশ ওরাং

লকডাউন না হলে বাড়িতে ফেরার কথা ছিল। চিনা লাল ফৌজের আক্রমনে সব ওলট-পাটল হয়ে গেল। সেনাবাহিনী থেকে ফোন এসেছিল বীরভূমের মহম্মদ বাজারের বেলগড়িয়া গ্রামের বাড়িতে। ফোনে দুঃসংবাদ পেয়ে পুরো গ্রাম শোকে পাথর হয়ে যায়। ভারত-চিন সীমান্তে লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে চিনা বাহিনীর আক্রমনে শহিদ হয়েছেন বীরভূমের মহম্মদ বাজারের বেলগড়িয়া গ্রামের তরতাজা যুবক রাজেশ ওরাং। বয়স মাত্র ২৬ বছর।

Advertisment

পুরো বেলগড়িয়া গ্রামে শোকের ছায়া। রাজেশের বাবা সুভাষ ওরাং, মা মমতা ওরাং। বাবা চাষ-আবাদের কাজ করতেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে এখন সেই কাজও করতে পারেন না। সংসারের আশা-ভরসা ছিলেন বড় ছেলে রাজেশ। পরিবারে দুই বোন ও এক ভাই। এক বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আর এক বোনের বিয়ের কথা চলছিল। সিপাই পদে ছিলেন রাজেশ। সন্তান হারানোর কথা জানতে পেরে মাঝে মাঝেই জ্ঞান হারাচ্ছেন রাজেশের মা-বাবা। এক ফাঁকে চোখের জল মুছতে মুছতে শোকবিহ্বল সুভাষ ওরাং বলেন,  'দেশের জন্য ছেলে শহিদ হওয়ায় আমি গর্বিত।'

একমাত্র রোজগেরেকে ঘিরেই ওরাং পরিবারের যত আশা। মঙ্গলবার বিকেলে গ্রামের বাড়িতে ফোন এসেছিল লে-র আর্মি হাসপাতাল থেকে। তাঁর জ্যাঠতুতো ভাই অভিজিত ওরাং বলেন, "ফোনে জানিয়ে দেয় দাদা শহিদ হয়েছে। প্রথমে জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। মঙ্গলবার বিকেলে মৃত্যু হয় হাসপাতালে। খুব ভাল স্পোর্টসম্যান ছিল। দাদার প্রথম থেকেই ইচ্ছা ছিল সেনাবাহিনীতে কাজ করার। সিউড়ি কলেজে পড়ার সময় লোক নিয়োগ চলছিল। সিউড়িতেই মাঠ হয়েছিল। তখনই চাকরি পেয়ে যায় আর্মিতে।"

অভিজিতের কথায়, "২০১৫ সালে আর্মিতে যোগ দেয় দাদা। প্রথম পোস্টিং ছিল জম্মু। তারপর দু'বছর ধরে রয়েছে লাদাখে। বাড়িতে আসার কথা ছিল। লকডাউন হওয়ায় ওর বাড়ি ফেরা আটকে যায়। নতুন বাড়ি বানিয়েছে। সেই বাড়ির অনেক কাজ বাকি রয়েছে। এক বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এক বোনের বিয়ে দেওয়ার কথা চলছিল। আমরা বিশ্বাস করতেই পারছি না। দাদা নেই।"

মহম্মদবাজারের মালাডাং সেহেরাখুরি বংশীধর হাইস্কুলে পড়াশুনা রাজেশের। ওই স্কুলেরই ছাত্র ছিলেন পাশের খয়রাগুড়ি গ্রামের অক্ষয় মন্ডল। অক্ষয় বলেন, "আমাদের থেকে দু-তিন বছরের সিনিয়র ছিল। একই স্কুলে পড়তাম। এবার সরস্বতী পুজোর সময় এসেছিল। আমার সঙ্গে রাজেশদার কথাও হয়েছিল। বলেছিল, বাড়িটা কমপ্লিট করতে হবে। মিলিটারিতে পরীক্ষা দেব বলে একসঙ্গে আমরা প্র্যাকটিস করতাম। লোকেদের যে কোনও প্রয়োজনে সাহায্য করত। মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতে ভালবাসত। খুব ভাল ফুটবল খেলত।"

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

India china Birbhum West Bengal
Advertisment