রাজ্যের গোয়েন্দা কর্তাকে তন্ন তন্ন করে খুঁজে বেড়াচ্ছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দার দল। এডিজি সিআইডি জামিনের জন্য আদালতে আদালতে ছুটে বেড়াচ্ছেন। নিজে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। সৌজন্যে সারদা চিট ফান্ড তদন্ত। যার আগাপাশতলা রাজনীতির গন্ধে 'ম' 'ম' করছে। এ যেন কানামাছি খেলা চলছে।
রাজীব কুমারের বাড়িতে যখন সিবিআই হানা দিয়েছিল তখন হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছিল কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্মতলায় ধরনায় বসেছিলেন। তারপর থেকে অত্যন্ত সন্তর্পণে পা ফেলছেন সিবিআই কর্তারা। কলকাতায় সিবিআই আধিকারিকদের আনাগোনা বাড়ছে। কিন্তু একজন আইপিএস অফিসার যে ভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন দেশের গোয়েন্দা সংস্থাকে তা কিন্তু দেশে রেকর্ড হয়ে থাকবে। বেশ কয়েকজন শিল্পপতি বিদেশে পালিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। কিম্তু রাজীব কুমার দেশের মধ্যে যে ভাবে ঘুরপাক খাচ্ছেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে এর মধ্যে অন্য গল্প খুঁজছেন।
আরও পড়ুন কে এই রাজীব কুমার, যাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছে সিবিআই?
রাজ্যের তৎকালীন মন্ত্রী মদন মিত্র শরীর খারাপ বলেও কিন্তু ছাড় পাননি সারদা চিটফান্ড মামলায়। তাবড়-তাবড় সাংসদ গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু একমাত্র ব্যতিক্রম কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার। আইনি পথে মামলা লড়ার অধিকার সবার আছে। রাজীববাবুরও আছে। কিন্তু এটা যখন সাধারণ নাগরিকের ক্ষেত্রে হয়! তখন তার হাল কি হয় সকলেরই জানা। এটাও দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কাছে সব থেকে বড় প্রশ্ন। রাজীব কুমারের অভিযানে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার খরচের পরিমাণও বাড়ছে। যত দিন যাবে তত খরচ বাড়বে। এটা কি তদন্ত, না ইগোর লড়াই প্রশ্ন সেখানেও।
অনেকের মতে, যে কোনও তদন্তের ক্ষেত্রে সময় লাগতে পারে। কিন্তু তা যেন সঠিক হয়। সময়েই তা বোঝা যাবে। সারদা মামলা প্রথমে তদন্ত করেছে রাজ্যের সিট। পরে সুপ্রিম কোর্টের তত্বাবধানে তদন্ত হাতে নেয় সিবিআই। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা অভিযোগ করে সীট অনেক তথ্য গোপন করেছে। তখন সিটের প্রধান ছিলেন রাজীব কুমার। তাই রাজীব কুমারকে হেপাজতে নিতে চায় তদন্তকারী সংস্থা।
আরও পড়ুন ‘রাজীব কুমারের প্রাণহানির আশঙ্কা’!
সিবিআইয়ের দাবি, রাজীব কুমার কোথায় তা জানার কথা তাঁর উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের। তাদের কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। তারা উল্টে রাজীব কুমারের বাড়িতে চিঠি দিয়েছে। এডিজি সিআইডি ছুটিতে বলেই দায় সেরেছেন তারা। এটা কোনও সাংবিধানিক পরিকাঠামোয় সম্ভব নয় বলেই মনে করে অভিজ্ঞ মহল। সরকারের জরুরি প্রয়োজনে কি এই পদ্ধতি চলতে পারে? না এটা সম্ভব। প্রশ্ন তাহলে কেন এই লুকোচুরি? সাধারণ মানুষ কোনও ঘটনায় অভিযুক্ত হলে যে কোনও তদন্তকারী সংস্থা তার সন্ধান না পেলে তার পরিবারের কি হাল করে তা কারও অজানা নয়।
সারদা তদন্তের আড়ালে বিজেপি ও তৃণমূলের কৌশলের কথাও আজ সর্বজনবিদিত। বিজেপি নেতারা বলছে কেউ ছাড় পাবে না। তৃণমূলের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার। একদিকে কেন্দ্রীয় সরকার ও অন্য দিকে রাজ্য সরকার। এরাজ্যে ২০১৯ লেকসভা ভোটে ১৮টি আসন পেয়ে অক্সিজেন পেয়েছে বিজেপি। তাই ২০২১ বিধানসভায় জোর লড়াই। কিন্তু সিবিআই ও রাজীব কুমারের লুকোচুরি খলা ভারতীয় গণতন্ত্রে বিশেষ উদাহরণ হয়ে থাকবে। তার পরিণতি ভবিষ্যৎ জানান দেবে।