রাজ্যের খনি অঞ্চলের বেতাজ বাদশা রাজু ঝাকে খুনের কিনারা এখনও করতে পারেনি পুলিশ। তবে ঘটনার চার দিন পর এটুকু স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, নিখুঁত পরিকল্পনা করেই খুন করা হয়েছে ইডি-র ডাক পাওয়া রাজু ঝাকে। এই খুন কাণ্ডে যে ঝাড়খণ্ডের সুপারি কিলারদের কাজে লাগানো হয়েছিল সেটাও সিসিটিভির ফুটেজ থেকে একপ্রকার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। নীল রঙের দামি চারচাকা গাড়িতে চড়ে থাকা সুপারি কিলাররা শনিবার পরিকল্পনা মাফিকই রাজু ঝা সওয়ার থাকা সাদা রঙের ফরচুনা গাড়িটির পথ অনুসরন করে। আর তা স্পষ্ট ভাবে ধরা পড়েছে এই রাজ্যের কাঁকশার বাঁশকোপা টোল প্লাজার সিসিটিভি ফুটেজে।
ওই দিন রাত পৌনে আটটা নাগাদ রাজু ঝয়েদের গাড়ি পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড়ে দাঁড়ায়। প্রায় একই সময়ে রাজু ঝায়েদের গাড়ির কাছে এসে দাড়ায় সুপারি কিলার-বাহী নীল রঙের চারচাকা গাড়িটি। তারপর সুপারি কিলাররা এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে ওই জায়গায় গাড়ি থেকে নেমেই পর পর গুলি চালিয়ে রাজু ঝার শরীর ঝাঁঝরা করে দিয়েই পালিয়ে যায়। তবে কি কারণে এত নিখুঁত পরিকল্পনা কষে রাজু ঝা কে হতাা করা হল তার পুরোটা এখনও রহস্যে মোড়াই আছে।
কয়লা পাচার মামলায় রাজু ঝার ইডি দফতরে হাজিরা দেওয়ার দিন ছিল গত সোমবার। তার ঠিক একদিন আগে অর্থাৎ গত শনিবার শক্তিগড়ে কলকাতা মুখী ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একটি ল্যাংচার দোকানের সামনে সাদা রঙের ফরচুনা গাড়িতে সওয়ার থাকা অবস্থায় খুন হন।
ওই দিন রাজু ঝা ফরচুনা গাড়ির চালকের বাম পাসের আসনে বসে ছিলেন। রাজু খুন হওয়ার সময়ে ওই একই গাড়ির পিছনের আসনে বসে ছিলেন রাজু ঝার সহযোগী ব্রতীন মুখোপাধ্যায় ও সিবিআইয়ের তদন্তাধীন গরু পাচার মামলায় ফেরার অভিযুক্ত আব্দুল লতিফ। আর আব্দুল লতিফ যে ঘটনার দিন অর্থাৎ ১ এপ্রিল রাজু ঝার সঙ্গে একই গাড়িতে ছিল সেটা শক্তিগড় থানায় দায়ের করা ফরচুনা গাড়ির চালক নুর হোসেনের
অভিযোগ থেকে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
কয়লা কারবারী খুনের ঘটনার দিন গভীর রাতে আততায়ীদের ব্যবহৃত নীল গাড়িটির হদিশ পায় শক্তিগড় থানার পুলিশ। ওই গাড়িটিতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ আগ্নেআস্ত্র ,কার্তুজ ও একাধিক নম্বর প্লেট পায়। তার পর থেকেই তদন্তকারী শীটের সদস্যদের তদন্তের যাবতীয় কেন্দ্র বিন্দুতে থাকে ওই নীল চারচাকা গাড়িটি। ওই গাড়িতে চেপে এসেই ঝাড়খণ্ডের সুপারি কিলাররা খুনের ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়েছে, এমনটা ধরে নিয়ে তদন্তকারী পুলিশের একটি দল পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডে পৌছায়। তার পরেই গত সোমবার জেলা পুলিশ সুপার সংবাদ মাধ্যমে বলেন, 'খুব শিঘ্র ব্রেক থ্রু হবে।'
তবে ঘটনার চারদিন অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরও কোনও 'ব্রেক থ্রু' মেলেনি। সূত্রের খবর, ঝড়খণ্ডের বিভিন্ন জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে তদন্তকারীরা এটুকু নিশ্চিৎ হয়েছেন যে ১লা এপ্রিল খুব ভোরে ওই নীল চারচাকা গাড়িটি ঝাড়খণ্ডে গিয়েছিল। তারপর ওই দিনই দুপুর দুপুর ঝাড়খণ্ডের কোনও এক ডেরা থেকে সুপারি কিলারদের চাপিয়ে নিয়ে একই নীল চারচাকা গাড়ি এই রাজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এই রাজ্যের দুর্গাপুরের কাঁকশার বাঁশকোপা টোল প্লাজার সিসিটিভি ফুটেজে আবার দেখা গেছে, ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৬টা ১মিনিটে বর্ধমানমুখী রোডে বাঁশকোপা টোল প্লাজা ক্রস করে বেরিয়ে আসছে সাদা রঙের একই ফরচুনা গাড়িটি। এর ঠিক ২১ মিনিট পরেই একই লেন ধরে কাঁকশার বাঁশকোপা টোলপ্লাজা ক্রস করে শক্তিগড় থানার বাজেয়াপ্ত করা আঁততায়ীদের ব্যবহৃত একই নম্বরের (WB 06P 3454) নীল চারচাকা গাড়িটি। এই সবের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের অনুমান সুপারি কিলারবাহী নীল চারচাকা গাড়িটি কাঁকশার বাঁশকোপা থেকেই রাজু ঝা সওয়ার থাকা ফরচুনা গাড়িটিকে অনুসরণ করা শুরু করে। শক্তিগড়ে ল্যাংচার দোকানের সামনে রাজু ঝায়েদের গাড়ি দাঁড়াতেই সুপারি কিলাররা নীল গাড়ি থেকে নেমে গুলি চালিয়ে রাজু ঝায়ের শরীর ঝাঁঝরা করে দিয়ে পালায় ।
এই খুনের ঘটনার পর মামলা রুজু করে তদন্তে নেমে পুলিশ কর্তারা ও ফরেন্সিক দল মিলে নীল চারচাকা গাড়িটির পরীক্ষা নিরীক্ষা চালান। তাতে তারা নিশ্চিৎ হন গাড়িটির ইঞ্জিন ও চ্যাসিজ নম্বায় ট্যাম্পারিং করা হয়েছে। তদন্ত চালিয়ে পুলিশ কর্তারা এও জনেছেন,নীল গাড়িটি চোরাই গাড়ি। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দিল্লির জয়পুরী থেকে চুরি হয় গাড়িটি। চুরি হয়ে যাওয়া গাড়ির মালিক হয়িয়ানার গুরগাঁওয়ের জনৈক বাসিন্দা।
এদিকে ইডির নজরে থাকা কয়লা করবারী রাজু ঝা খুন হওয়ার পর আরো বিপাকে গরু পাচার মামলায় সিবিআই এর স্ক্যানারে থাকা আব্দুল লতিফ। জানা গিয়েছে, গরুপাচার মামলায় সিবিআইয়ের চার্জশিটে নাম ওঠার পর, আসানসোলের সিবিআই স্পেশাল কোর্ট আবদুল লতিফের বিরুদ্ধে জামিনঅযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। কিন্তু, এর পরেও আদালতে আত্মসমর্পণ বা হাজির হওয়া কোনওটাই লতিফ করেনননি। উল্টে তিনি গা ঢাকা দেন। তাঁকে ফেরার ঘোষণা করা হয়। এই অবস্থার মধ্যেই সামনে আসে কয়লা করবারী রাজু ঝা খুন হওয়ার দিন ঘটনাস্থলে ও একই গাড়িতে আব্দুল লতিফের উপস্থিতি। তাই এবার আদালতের নিয়ম মেনে সিবিআই আব্দুল লতিফের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে সূত্রে খবর।
।