সোনালী অতীত থেকে আজ ধুসর বর্তমানে প্রবীণ যাত্রী শিল্পী রমা মুখোপাধ্যায়। বড় বাড়ি ছেড়ে ঠাঁই হয়েছিল রাস্তার ধুপড়িতে। সেখানেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ৮০ ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধা। অসুস্থ অবস্থাতেই পড়েছিলেন সেখানে। তারপর রমাদেবীর পরিচয় জানতে পেরে গোঘাট-২ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধক্ষ্য মকবুল হোসেন নিজের মা পরিচয় দিয়ে রমাদেবীকে হাতপাতালে ভর্তি করেন।
অসুস্থ হলেও রমা মুখোপাধ্যায়কে আইনগত সমস্যার ভয়ে দেখেও কেউ দেখছিল না। শেষে গোঘাট থানার কামারপুকুর চটি এলাকার স্থানীয় দোকানীরা খবর দেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা গোঘাট-২ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধক্ষ্য মকবুল হোসেনকে। তিনি খবর পেয়েই চলে আসেন ঘটনাস্থলে।
মকবুলই ওই বৃদ্ধাকে কামারপুকুর গ্রামীন হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু অজ্ঞাতপরিচয় হওয়ায় হাসপাতালে রমাদেবীকে ভর্তিতে অসুবিধা হচ্ছিল। তখন মকবুল হোসেন তাঁর বাড়ির ঠিকানা দিয়ে নিজের মা পরিচয়ে ওই বৃদ্ধাকে হাসপাতালে ভর্তি করান।
চমকের আরও বাকি ছিল। বৃদ্ধা একটু সুস্থ হলেই বেরিয়ে আসে তাঁর পরিচয়। তিনি জানান তার নাম রমা মুখোপাধ্যায়। অতীতের খ্যাতনামা যাত্রাশিল্পী। একসময় কলকাতার নানা অপেরাতে চুটিয়ে যাত্রা করেছেন। বিয়েও করেন আরেক যাত্রা শিল্পী পঞ্চানন মুখোপাধ্যায়কে। আদি বাড়ি হুগলির হরিপাল গোপীনগরে। নিজের অর্থে গোঘাট খাটোগ্রামে বাড়ি তৈরি করেছিলেন। কামারপুকুরেও প্রচুর অপেরায় অভিনয় করেছেন। বয়স হয়ে যাওয়ায় কলকাতা ছেড়ে কামারপুকুরে একটি যাত্রাপার্টি তে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু পঞ্চাননবাবুর মৃত্যুর পরই নেমে আসে অন্ধকার। পঞ্চাননবাবুর প্রথম পক্ষের ছেলে রমাদেবীদের বাড়ির দখল নিয়ে তাঁকেই ভিটেমাটি ছাড়া করে বলে অভিযোগ।
এরপর রমা দেবী কামারপুকুর এলাকায় একটি ঝুপড়িতে আশ্রয় নেন। পেটের দায়ে কামারপুকুর চটি এলাকায় ভিক্ষা করতে শুরু করেন। গত কয়েকদিনের গরমে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। মকবুল জানান, রমাদেবীকে কোনও হোমে স্থানান্তরের চেষ্টা চলছে। জীবনের বাকি দিনগুলোয় তাঁকে শান্তিতে রাখতেই এই উদ্যোগ।