ডিসেম্বরের তিনটে রথই এখন বাংলা জয় করতে বিজেপির বড় ভরসা। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ এই রথকে ঘুরিয়ে রাজ্যে পদ্ম চাষ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ৯ ডিসেম্বর গঙ্গাসাগর থেকে তৃতীয় দফার ছাড়া রথটি কলকাতা সংলগ্ন ১৪টি লোকসভা কেন্দ্রে ঘুরবে। এই রথ যাত্রার রুট ম্যাপ ছাড়াও, দেড় মাসের পরিকল্পনা প্রস্তুত। রথের মাধ্যমে কীভাবে জনমানসে প্রভাব বিস্তার করতে চায় বিজেপি, শুনলে অবাক হবে গেরুয়া বিরোধী শিবিরও।
আরও পড়ুন: নেতাজি-গান্ধিজিকে ছিনিয়ে নেওয়া হবে, স্পষ্ট জানালেন দিলীপ ঘোষ
৫ ডিসেম্বর তারাপীঠ, ৭ ডিসেম্বর কোচবিহার ও ৯ ডিসেম্বর গঙ্গাসাগর, পর্যায়ক্রমে তিনটে রথযাত্রা শুরু হবে। গঙ্গাসাগর রথযাত্রার বিস্তারিত কর্মসূচি প্রস্তুত করে ফেলেছে বিজেপি। সামগ্রিক ভাবে এই রথের দায়িত্বে রেয়েছেন বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি ডঃ সুভাষ সরকার। তিনি বলেন, "মোট ১৪টি লোকসভা কেন্দ্র পরিক্রম করবে রথ। মথুরাপুর, ডায়মন্ড হারবার, জয়নগর, যাদবপুর, বসিরহাট, বারাসাত, ব্যারাকপুর, দমদম, শ্রীরামপুর, হুগলি, আরামবাগ, হাওড়া, কলকাতা উত্তর ও কলকাতা দক্ষিণ। এই রথের সঙ্গে প্রায় দেড় হাজার দলীয় কর্মী থাকবেন। সকাল নটার মধ্যে তাঁরা প্রস্তুত হয়ে যাবেন। ঠিক ১০টার মধ্যে রথ গন্তব্যের দিকে যাত্রা শুরু করবে।" রথযাত্রা সফল করার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় আগাম প্রচারের কর্মসূচিও থাকছে প্রতি ক্ষেত্রে।
রথের প্রধান উদ্দেশ্যই হল ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে সাধারণের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন। সেই লক্ষ্য পূরণ করতে প্রতিদিন যাত্রাপথে তিন ধরনের সভার আয়োজন করা হবে। সেই সভায় দলের নানা স্তরের নেতৃত্ব বক্তৃতা দেবেন। রথ চলাকালীন রাজ্য নেতৃত্ব পালা করে তাতে যোগ দেবেন, পাশাপাশি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও দফায় দফায় রাজ্যে আসবেন। অন্য রথের মত গঙ্গাসাগরেও ৯ ডিসেম্বর এই রথের সূচনা করবেন অমিত শাহ। সুভাষবাবু জানান, দিনে তিন ধরনের সভা হবে। একটি বড় সভা, যেখানে ৫০ হাজারের ওপর জমায়েত করার টার্গেট রয়েছে। এই বড় সভাগুলো সব দুপুরের পর হবে। মাঝারি সভায় লক্ষ্য ২০ হাজারের ওপর। পাশাপাশি দিনে দু-একটা ছোট সভা হবে রথকে কেন্দ্র করে। কমপক্ষে সেখানে ৫ হাজার মানুষের সমাবেশ করতে হবে।
শুধু রাজনৈতিক সভা নয়, জনসংযোগের জন্য যাত্রা পথে সম্বর্ধনা দেওয়া হবে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে। এমনকী বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি কর্মীরা রথের আগমনকে স্বাগত জানাবে। কাদের সম্বর্ধনা দেওয়া হবে? সুভাষবাবু বলেন, "সংশ্লিষ্ট এলাকার সেনাবাহিনীর শহিদ, সমাজে শহিদ, দলের শহিদ, এলাকার প্রতিথযশা মানুষ, মণীষীদের পরিবার, নামজাদা খেলোয়াড়, ভাল শিল্পী, ভাল পড়ুয়াসহ সমাজের নানা স্তরের গুণীজনকে সম্বর্ধনা দেওয়া হবে।" এই সম্বর্ধনার মাধ্যমে তৃণমূল স্তরে জনসংযোগ মজবুত করতে চাইছে গেরুয়া শিবির।
আরও পড়ুন: অনুব্রতের রাখাল-বাগাল বক্তব্য শোনার পরেও সংযত দিলীপ ঘোষ
দেড় হাজার কর্মী নিয়ে প্রতিদিন রথের যাত্রা সেটা কিন্তু কম কথা নয়। দুপুরের আহারের জন্য প্যাকেট রাখা হবে। যেখানে দুপুরের সভা হবে সেখানে খাওয়াদাওয়া সেরে নেওয়া হবে। যাতে খুব একটা সময় নষ্ট না হয়। রথ সকাল ১০ টায় বের হয়ে সারা দিন নানা কার্যক্রমের পর রাত ৮ টা নাগাদ ইতি টানবে।
সুভাষবাবু জানান, দেড় মাসের যাত্রা পথে স্বাস্থ্য যাতে বাধা না হয় তার জন্য অ্যাম্বুলেন্স থাকবে রথের সঙ্গে, থাকবেন আইনজীবীও। পথচলতি আইনি গেরো বাঁধলে জট ছাড়ানোর জন্য সেই ব্যবস্থাও রেখেছে গেরুয়া শিবির। ওদিকে গাড়ির স্বাস্থ্য বিগড়ে গেলেও চিন্তা নেই, দক্ষ মেকানিকের দলও থাকছে। যাতে তড়িঘড়ি মেরামত করা যায়। দেড় মাসের যাত্রাপথ বলে কথা!
রথের যাত্রা শুরু হওয়ার পর মথুরাপুর, ডায়মন্ড হারবার, যাদবপুর, বারুইপুর, জয়নগর, এর পর উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট, বারাসাত, ব্যারাকপুর, দমদম, পানিহাটি, বারাসত, রাজারহাট, গোপালপুর, কামারহাটি, বরানগর, হাওড়া, বালি, হুগলি, হাওড়া শহর কেন্দ্রিক লোকসভা। শেষে উত্তর কলকাতা ও দক্ষিণ কলকাতা। কলকাতা উত্তর ও দক্ষিণ কেন্দ্রে রথকে কেন্দ্র করে বিশেষ ভাবে আরও প্রচারের উদ্যোগ নেবে বিজেপি।