নারদার পর এবার এলএলএমে বেআইনি ভর্তি, অভিযোগের মুখে সাংসদ অপরূপা পোদ্দার

নারদা-কাণ্ডের পর এবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলএমে 'বেআইনি' রি-অ্যাডমিশন নিয়ে অভিযোগে জড়ালেন তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দার।

নারদা-কাণ্ডের পর এবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলএমে 'বেআইনি' রি-অ্যাডমিশন নিয়ে অভিযোগে জড়ালেন তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দার।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
aparupa podder

জড়িয়েছেন নারদা-কাণ্ডে, এবার অপরূপা পোদ্দার জড়ালেন এলএলএমে রি-অ্য়াডমিশনের দুর্নীতির অভিযোগে।

নারদা-কাণ্ডের পর এবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলএমে কোর্সে ভর্তি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে নাম জড়াল আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ অপরূপা পোদ্দারের। অভিযোগ, সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূতভাবে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে রি-অ্যাডমিশনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে এই সাংসদকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের (ইসি) বৈঠকে বিশেষভাবে পাশ করানো হয়েছিল এই ভর্তির সিদ্ধান্ত। এসএফআই ওই সাংসদের ভর্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করেছে। তবে এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।

Advertisment

discollegiate notice এই রোল নম্বর ১৩ ছিল অপরূপা পোদ্দারের

২০১৬-১৮ শিক্ষাবর্ষে অপরূপা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে 'মাস্টার অফ ল' বা এলএলএম কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু একদিনও ক্লাস না করায় তাঁকে প্রথম সেমেস্টারের পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয়নি, ডিসকলেজিয়েট ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে তিনি পুনরায় ভর্তির আবেদন করেন। গত ৬ ফেব্রুয়ারি (আইটেম নম্বর ২৮৪) বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল বা পরিচালন সমিতি সিদ্ধান্ত নেয়, বিষয়টি সম্পর্কে আইনি পরামর্শ নেবে।

Advertisment

নজীরবিহীনভাবে পরে এক সভায় পরিচালন সমিতি সিদ্ধান্ত নেয়, অপরূপার জন্য হুগলি মহসীন কলেজে এলএলএম কোর্সে একটি আসন বাড়িয়ে "স্পেশ্যাল কেস" হিসাবে ভর্তি নেওয়া হবে। শিক্ষামহলে প্রশ্ন ওঠে, মেধা তালিকার তোয়াক্কা না করে কেন অপরূপার জন্য এই আসন বাড়ানো হয়? তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ বলেই কি এই সুবিধা?

the university of burdwan বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত

এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্যর অভিযোগ, "তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ বলেই বেআইনিভাবে ভর্তি করা হয়েছে অপরূপা পোদ্দারকে। একজন সাংসদ কিভাবে রেগুলার কোর্সে ভর্তি হতে পারেন? এই ভর্তি নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছি। তবে সর্বত্র আপাদমস্তক দুর্নীতি চলছে, তদন্ত করবে কে?"

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির সভায় যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা কি বেআইনি? জানতে চাওয়া হয়েছিল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিমাই সাহার কাছে। উপাচার্য বলেন, "এটা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে পারব না।" ফের প্রশ্ন ছিল, এই সিদ্ধান্ত কি আপনার সময়ে, না তার আগে হয়েছে? পুনরায় তাঁর জবাব, "মন্তব্য করব না।" যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই অপরূপাকে বিষয়টি জানার জন্য ফোন করা হয়েছিল। ফোন ধরেই তাঁর জবাব, "এখন একটা অনুষ্ঠানে আছি। পরে ফোন করুন।" কিন্তু তারপর থেকে আর তাঁকে ফোনে পাওয়া যায় নি।

the university of burdwan 01 পরিচালন পরিষদের সিদ্ধান্তের আরেক অংশ

চলতি বছরে শুধু কলকাতা নয়, রাজ্য জুড়ে কলেজে ছাত্র ভর্তি নিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। ওই ঘটনায় বেশ কয়েকজন ছাত্রনেতাকে গ্রেপ্তারও করেছিল পুলিশ। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়েরও বিভিন্ন কলেজে ছাত্র ভর্তি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী কলেজে হঠাৎ পরিদর্শনেও গিয়েছেন। কিন্তু জেলার কলেজগুলোতে পুলিশের বিজ্ঞপ্তি ছাড়া তেমন পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।

তারপর তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি জয়া দত্তকে সরিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সভাপতি করা হয় তৃণাঙ্কর ভট্টাচার্যকে। অপরূপার এলএলএমে ভর্তি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "বিষয়টি আমার জানা নেই।"

সূত্রের খবর, অপরূপা ২০১৬ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসের এলএলএম কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন। প্রথম সেমেস্টারের পরীক্ষা ছিল ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে। কিন্তু প্রথম ছ'মাসের একদিনও আরামবাগের সাংসদ একটি ক্লাসেও হাজির ছিলেন না। তাই আইন বিভাগ তাঁকে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেয়নি। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭-তে আইন বিভাগ বিজ্ঞপ্তি জারি করে, রোল নম্বর ১৩-র হাজিরা না থাকায় ডিসকলেজিয়েট করা হয়েছে। সূত্রের খবর, সেই সময় বিশেষ চাপ দেওয়া হয়েছিল আইন বিভাগের ওপর। কিন্তু চাপের কাছে নতিস্বীকার করেননি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। ওই সূত্রের দাবি, এই ঘটনার পর বিভাগীয় প্রধানকে সরে যেতে হয়েছিল।

জানা গিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী, প্রথম সেমেস্টারে পরীক্ষায় বসার জন্য কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ হাজিরা থাকা প্রয়োজন। বিশেষভাবে বিবেচনা করে উপাচার্য পাঁচ শতাংশ কমাতে পারেন। কিন্তু কোনওভাবেই তা ৭০ শতাংশের কম হবে না। সেখানে তৃণমূল সাংসদ একদিনও হাজির ছিলেন না। এক্ষেত্রে বার কাউন্সিলের অনুমোদন পর্যন্ত বাতিল হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিভাগের জনৈক অধ্যাপক জানান, এভাবে পরীক্ষা দিতে না পারলে কোনও ভাবে রি-অ্যাডমিশন সম্ভব নয়। প্রার্থীকে ফের ভর্তির পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। তারপর সে নতুন করে এলএলএম পড়তে পারবে। কিন্তু নিয়মকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সাংসদের বাড়ির কাছে হুগলি মহসীন কলেজের আইন বিভাগে একটি সিট বাড়িয়ে তাঁকে রি-অ্যাডমিশনের অনুমতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতি।

ওই অধ্যাপক আরো জানান, এক্ষেত্রে ক্লাসের প্রথম সেমেস্টারের অ্যাটেনডেন্স রেজিস্টারে কিছুদিনের হাজিরা 'ম্যানেজ' করার দাবিও এসেছিল বিভিন্ন মহল থেকে। কিন্তু তা করা হয়নি। তাই কোপ পড়েছিল বিভাগীয় প্রধানের ওপর। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সাংসদের রি-অ্যাডমিশনের জন্য চাপ এসেছিল "ওপর মহল" থেকে। তখন আইন বিভাগ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল, ভর্তি সংক্রান্ত বিষয় দেখে ফ্যাকাল্টি অফ আর্টস।

Education tmc