আচ্ছা, এত গরম লাগছে কেন? আবহাওয়া দফতরের হিসেব বলছে, গত কয়েক দিনে শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করছে ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রির মধ্যে। শেষ-বৈশাখে তো এমনটাই হওয়ার কথা। এতে তো অভ্যস্ত কলকাতার আমজনতা। তা-ও তো এখনও চল্লিশ পেরোয়নি শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। জেলায় জেলায় তো গড়ে ৪৩-৪৪ এ ব্যাট করছে গরম। সে তুলনায় এই ৩৭-৩৮ আর এমন কী? তবু এত গরম লাগছে কেন, কেন মনে হচ্ছে, প্রাণটা বেরিয়ে যাওয়াই যা বাকি এই হাঁসফাঁস অবস্থায়? আছি টালায় বা টালিগঞ্জে, ধর্মতলা বা বালিগঞ্জে, অথচ কেন মনে হচ্ছে গরমটা রাজস্থানের মরুভূমির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে হেসেখেলে?
রহস্যভেদে মোদ্দা কথাটা হল, 'Real Feel Temperature’। সেটা কী বস্তু? পারদের তাপমাত্রা অনুযায়ী যতটা গরম লাগার কথা, আসলে তার চেয়ে ঢের বেশি গরম লাগছে বাস্তবে। এই 'আসল' গরমের অনুভূতিটাই হল 'রিয়েল ফিল টেম্পারেচার', এক বিজ্ঞানভিত্তিক আবহাওয়া-সূচক। যা নির্ধারণ করে দেয়, কাগুজে হিসেবের পারদের ওঠানামায় যতটা গরম বা ঠান্ডা লাগার কথা, আসলে তার থেকে কতটা বেশি গরম বা ঠান্ডা লাগছে।
আরও পড়ুন: বাড়বে গরম, জ্বালাপোড়ায় ভুগবে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গ
কীভাবে ঠিক হয় এই 'রিয়েল ফিল টেম্পারেচার'? অনেকগুলো ফ্যাক্টর আছে। জটিল গাণিতিক ফর্মুলা দূরে সরিয়ে রেখে সোজা বাংলায়, আবহাওয়ার অনেকগুলো উপাদানের ওঠাপড়ার উপর নির্ভরশীল এই 'আসল গরমের অনুভূতি'। বাতাসের গতি কেমন, বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমান কতটা, আপেক্ষিক আর্দ্রতাই বা কত শতাংশ, সূর্যালোকের প্রখরতা, আকাশে মেঘের আনাগোনা...সব কিছুর চুলচেরা হিসেবের পরই নির্ধারিত হয় 'রিয়েল ফিল টেম্পারেচার'। এই প্রত্যেকটি বিষয়ের গতিপ্রকৃতিই গত কয়েকদিন ধরে 'আসল' গরমের সূচক বাড়িয়ে দিয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় 'ফণী' বাংলায় মাথা তুলতে না পারলে কী হবে, বাতাসে বাড়িয়ে দিয়ে গেছে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ। ফলে হইহই করে বেড়েছে আপেক্ষিক আর্দ্রতা। রাস্তায় বেরোলেই তাই ঘেমেনেয়ে স্নান। সঙ্গে যোগ করুন আকাশে মেঘের নিরুদ্দেশ থাকার সিদ্ধান্ত, এবং আন্দ্রে রাসেলের স্টাইলে সূর্যের বেপরোয়া ব্যাটিং। সব মিলিয়ে হাওয়া-অফিসের হিসেব ৩৭-৩৮ বললেও 'রিয়েল ফিল টেম্পারেচার' কিন্তু চল্লিশ ছাড়িয়ে ৪৪-৪৬ এর মধ্যে ঘুরছে। এবং এই গরমটাই অনুভব করছি আমি-আপনি। এমনিতে ৩৮, আসলে ৪৩। বা তারও বেশি। যাঁদের ফোনে আবহাওয়া অ্যাপ রয়েছে, খুলে দেখতে পারেন - আসল তাপমাত্রা ৩৩, কিন্তু মনে হচ্ছে ৪৫। বেশি গরম তো লাগবেই। বেশি অস্বস্তি তো হবেই।
আরও পড়ুন: ঘাম ও অস্বস্তিকর গরম ফিরছে বাংলায়
অস্বস্তির প্রসঙ্গ যখন উঠল, 'অস্বস্তি সূচক'-এর বিষয়ে দু-চার কথা না লিখলেই নয়। পরিভাষায় যাকে আবহাওয়াবিদরা বলেন 'Discomfort Index’। তাপমাত্রার পাশাপাশি বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ মাথায় রেখে তৈরি হয় এই সূচক। আবহাওয়াবিদদের মতে, যা ৫৫ শতাংশ পেরোলেই গরমজনিত অস্বস্তি বাড়তে শুরু করে। তা এই অস্বস্তি সূচক গত কয়েকদিন ধরে ৬৫-র কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে। কারণ, বাতাসে জলীয় বাষ্প এবং ফলত আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়া। ঘাম শুকোচ্ছে না। শুকনো গরমে এত কষ্ট হয় না, ঘাম হয় না অত। হলেও শুকোয় তাড়াতাড়ি। সেটা হচ্ছে না। ৪৪-৪৬ ডিগ্রির 'আসল গরম', সঙ্গে অস্বস্তি সূচক ৬০ ছাড়িয়ে যাওয়া। প্রাণ কি আর সাধে ওষ্ঠাগত?
অতঃকিম? গ্রীষ্মকালে আবার গান ধরা দরকার ভীষ্মলোচন শর্মার! যাঁর আওয়াজখানা হানা দেবে বাংলা থেকে সোজা বরুণদেবের দরবারে।
কী গান? ধুস, এটা কোন প্রশ্ন হলো?
'আল্লা ম্যাঘ দে পানি দে'!