কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ভারত জোড়ো যাত্রার মাধ্যমে তার নেতৃত্বের ক্ষমতা প্রমাণ করেছেন। এমনটাই দাবি তৃণমূল সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহার। সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিনহার ভবিষ্যৎদ্বাণী , তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারীতে শুরু হওয়া গান্ধীর ৩৫৭০-কিলোমিটার দীর্ঘ পদযাত্রা কংগ্রেসকে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তাদের সংখ্যা দ্বিগুণ করতে সহায়তা করবে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস ৫২টি আসন জিতেছিল।
শত্রুঘ্ন সিনহা বলেছেন, 'ভারত জোড়ো যাত্রা খুব ভালো সাড়া পাচ্ছে। রাহুল গান্ধীর ক্যারিশমা কাজ শুরু করেছে, এবং তিনি মানুষের কাছ থেকে চমৎকার সাড়া পাচ্ছেন। আমি মনে করি যে গান্ধীর যাত্রা আগামী লোকসভা নির্বাচনে সংসদে কংগ্রেসের আসনসংখ্যা দ্বিগুণ করতে সাহায্য করবে।'
“এটি সত্যিকার অর্থে একটি ‘যাত্রা’ কারণ গান্ধী বিজেপি নেতাদের ‘রথযাত্রার’ বিপরীতে হাঁটছেন। লাখ লাখ মানুষ তার সমর্থনে এগিয়ে আসছে। তিনি তার নেতৃত্বের গুণাবলী প্রমাণ করেছেন। জনগণ তাকে নেতা হিসেবে গ্রহণ করেছে। এবং, যারা তাকে ‘পাপ্পু’ বলে ঠাট্টা করেছিল এবং তাকে সিরিয়াসলি নেয়নি তারা ভুল প্রমাণিত হয়েছে,” তিনি যোগ করেছেন।
শত্রুঘ্ন সিনহা, প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ, তাঁর প্রাক্তন দলের সঙ্গে মতবিরোধের পরে খুব স্বল্প সময়ের জন্য ২০১৯ সালে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৭০ এবং ৮০-র দশকের জনপ্রিয় এই অভিনেতা চলতি বছরের শুরুতে তৃণণূলে যোগ দিয়েছিলেন এবং হিন্দিভাষী অধ্যুষিত পশ্চিমবঙ্গের শিল্প শহর আসানসোল থেকে বিরাট ব্যবধানে উপনির্বাচনে জয় পেয়ে সাংসদ হন।
তৃণমূল সাংসদের দাবি, 'বিজেপি নেতারা গান্ধীকে নিয়ে ঠাট্টা করছেন, কিন্তু পেটে আগুন থাকলে তাদেরও পায়ে হেঁটে একই যাত্রা করতে দিন। রাহুল গান্ধীর ম্যাজিক স্পেল আগামী নির্বাচনে কাজ করবে, আমি বিষয়টি উপলব্ধি করছি এবং আমি চাই এটা ঘটুক।'
গুজরাট নির্বাচনের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে, টিএমসি নেতা বলেছিলেন যে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল 'কিংমেকার' হিসাবে আবির্ভূত হবেন। বলেন, 'গুজরাটে কেজরিওয়াল হয় কিং বা কিংমেকার হিসেবে আবির্ভূত হবেন। গুজরাটে বিজেপির হাওয়া মন্দা। বিজেপি প্রতিবার হিন্দুত্ব বা রামমন্দির ইস্যুকে সামনে রেখে জিততে পারবে না। কেজরিওয়াল কারেন্সি নোটে দেবী লক্ষ্মী এবং ভগবান গণেশের ছবির দেওয়ার মাধ্যমে মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছেন।'
গত সপ্তাহে, কেজরিওয়াল দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য নোটে ভগবান গণেশ এবং দেবী লক্ষ্মীর ছবি ছাপানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে আবেদন করেছিলেন। যা কার্যত বিজেপির‘হিন্দুত্ব স্কুল অফ পলিটিক্স’-এর বিরুদ্ধে কেজরিওয়াল বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে। শত্রুঘ্নর মতে, 'কেজরিওয়ালের চ্যালেঞ্জ বিজেপি এখন ফেলতেও পারছে না, গিলতেও পারছে না।'
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি "গেম-চেঞ্জার" হবেন বলে আশাবাদী শত্রুঘ্ন সিনহা। এছাড়াও তাঁর আশা, তৃণমূল এবং কংগ্রেসের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত হবে। বলেন, “রাজনীতিতে শেষ কথা নেই। আজ, সম্পর্ক ভাল না মানেই আগামীকাল একই অবস্থা থাকবে এমনটা নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, প্রধান বিরোধী দলগুলো একত্রিত হলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন হবে।'
আসন্ন লোকসভায় দেশবাসী সঠিক নেতাকেই বেছে নেবেন বলে আশাবাদী শত্রুঘ্ন সিনহা। তাঁর কথায়, 'প্রত্যেক নির্বাচনেই কে হবেন প্রধানমন্ত্রী এই প্রশ্নটি উঠেছিল। একবার আপনি রাজনৈতিকভাবে শীর্ষে পৌঁছালে, সংখ্যা এবং ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে এটি নির্ধারণ করা হবে। দেশ কখনই থেমে থাকে না, সরকার পরিবর্তন হতে থাকে এবং নতুন নেতৃত্ব আসে।'
সিনহা, অটল বিহারী বাজপেয়ীর এনডিএ সরকারের একজন মন্ত্রী, জোর দিয়েদাবি করেছেন যে পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, কার্নাটক, কেরালার মতো রাজ্যগুলিতে বিজেপি-বিরোধী দলগুলির শক্তি বূড়ছে। সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা 'নিখোঁজ' বলে গত সপ্তাহেই পোস্টার পড়েছিল আসানসোলে। সেই নিয়ে শত্রুগ্ বলেন, 'এর জন্য দায়ী বিজেপি। কারণ উপনির্বাচনে পরাজয় ওরা এখনও হজম করতে পারেনি। আমি দুর্গাপূজার সময় আমার নির্বাচনী এলাকায় ছিলাম, গত সপ্তাহ পর্যন্ত সেখানেই ছিলাম। ছট-ও আমি আসানসোলেই কাটাচ্ছি। নিয়মিত আমি আসানসোলে থাকছি, আমার বিশ্বাস মানুষ এই মিথ্যে প্রচারের বিরুদ্ধে জবাব দেবে।'