Relation of Congress CPIM and TMC after loksabha election: প্রদেশ কংগ্রেসকে কার্যত সাইনবোর্ড বানিয়ে ছেড়ে বহুদিন আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি করেছেন। বিধানসভায় শূন্য কংগ্রেস, গত কয়েকবছরে বাম নেতাদের আনুগত্যের ওপর ভর করে রাজ্য রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। এবারের লোকসভা নির্বাচনে সেই চেষ্টাও কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। গনির গড় থেকে কোনওমতে একটা আসন বাগানো কংগ্রেস নেতৃত্ব এই অবস্থায় রাজনৈতিক পরজীবীর মত নতুন আশ্রয় খুঁজতে এখন বদ্ধপরিকর। এজন্য এতদিনের লাগাতার বিরোধিতা জলাঞ্জলি দিতেও দু'বার ভাবতে নারাজ কংগ্রেস নেতারা। তাঁরা এখন চাইছেন ২৯ লোকসভা আসন পাওয়া তৃণমূল কংগ্রেসের ঘাড়ে চেপে পরবর্তী নির্বাচনী বৈতরণীগুলো পার হতে।
আর, সেই কারণে এবার বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে কংগ্রেস হাইকমান্ড। আর, এর ফলে তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক ধন্দ। বিশেষ করে বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক কী হবে, তা নিয়ে ধন্দ বেড়েছে। কংগ্রেস হাইকমান্ডের সুবিধা করে দিয়ে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের দ্বন্দ্বের সবচেয়ে বড় বাধাও এবারের নির্বাচনে দূর হয়ে গিয়েছে। সেই বাধা হলেন, প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি (WBPCC)-র 'অন্তর্বর্তীকালীন' প্রধান অধীর চৌধুরী। তিনি গত লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা ছিলেন। বহরমপুরের পাঁচবারের সাংসদ। তাঁর তৃণমূল বিরোধিতা কংগ্রেস হাইকমান্ড উপেক্ষা করতে পারছিল না। কিন্তু, এবার অধীর চৌধুরী লোকসভা নির্বাচনে হেরে গিয়েছেন। ফলে, এবার কংগ্রেস-তৃণমূল সম্পর্কে বড় বাধাও উধাও হয়ে গিয়েছে।
তবে, প্রদেশ কংগ্রেস এখনও তৃণমূলের সঙ্গে জোট নিয়ে দ্বিধায়। এমনিতেই বামেদের সঙ্গে জোটের জেরে জোটের দায় মেনে কংগ্রেসের জন্য অতি সামান্য রাজনৈতিক জমিই রাজ্যে ছাড়া হয়েছিল। তবে, বাম এবং কংগ্রেস নির্বাচনের আগে একসঙ্গে বেশ কয়েকটা সভা করেছে। বিশেষ করে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সেই অবস্থান থেকে ঘুরে তৃণমূলের হাত ধরা মানে, কার্যত প্রদেশ কংগ্রেসের কাছে আত্মহত্যার শামিল। একইসঙ্গে ব্যাপারটা রাজ্যে বামেদের থেকে কংগ্রেসের দূরে সরে যাওয়াও বোঝায়। কারণ, রাজ্যে কংগ্রেসের হাত ধরে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে একমঞ্চে ওঠার চেষ্টা করা রাজ্য রাজনীতিতে বামেদের কাছে লালবাতি জ্বলে যাওয়ার শামিল।
এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবারই, সনিয়া গান্ধীর দূত হিসেবে প্রবীণ কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদাম্বরম রাজ্য সচিবালয় নবান্নে, টিএমসি সুপ্রিমো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। টিএমসি সূত্রে খবর, দুই নেতা কংগ্রেস এবং টিএমসি, কীভাবে আসন্ন সংসদীয় অধিবেশনে ক্ষমতাসীন বিজেপি-নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারকে পর্যুদস্ত করতে পারে, তার পদক্ষেপ এবং কৌশল সমন্বয় করার ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। এই পরিস্থিতিতে আগামী ২৪ জুন, ১৮তম লোকসভার প্রথম অধিবেশন শুরু হতে চলেছে। কংগ্রেস ছাড়াও, টিএমসি এবং সিপিএম জাতীয়স্তরে বিরোধী ভারত জোটের অন্যতম শরিক।
রাজ্যে কুস্তি, দিল্লিতে দোস্তির এই আবহে শুক্রবার এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছে প্রদেশ কংগ্রেসের বর্ধিত রাজ্য কমিটি। সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে দলের পরাজয়ের পর্যালোচনা সেখানে হয়েছে। বামপন্থীদের সঙ্গে জোট বাধার সময় তৃণমূল এবং বিজেপি উভয়ের বিরুদ্ধেই কংগ্রেস লড়াইয়ের কথা বলেছিল। যদিও, সেই ঘোষণার পরও কংগ্রেস ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের তুলনায়, ভোটের ভাগ খুব বেশি বাড়াতে পারেনি। উলটে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ২০১৯ সালের তুলনায় এবার দুটি থেকে একটিতে নেমে এসেছে।
এই পরিস্থিতিতে শুক্রবারের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে উপস্থিত প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের বেশিরভাগই বলেছেন যে, রাজ্যের নির্বাচনে কংগ্রেসের একাই লড়া উচিত। কেবল বিজেপিই নয়। টিএমসির বিরুদ্ধে কংগ্রেস যাতে লড়াই করতে পারে, তা নিশ্চিত করা উচিত। একইসঙ্গে, বৈঠকে উপস্থিত কংগ্রেস নেতারা এমনটাও বলেছেন যে, বামেদের সঙ্গে জোটের ফলে কংগ্রেসের ভোটের ভাগ বাড়তে পারে। কিন্তু, তাতে কংগ্রেসের দীর্ঘমেয়াদি কোনও লাভ হবে না। বলাই বাহুল্য যে, বৈঠকে উপস্থিত নেতারা সকলেই অধীরপন্থী।
বৈঠকে উপস্থিত এক প্রবীণ কংগ্রেস নেতা বলেছেন, 'আমরা বলছি না যে আমাদেরও সিপিএমের (CPIM)-এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। কিন্তু, অন্তত আমাদের সিপিএম (CPIM) বা বামেদের (LF) সঙ্গে জোট বাধা উচিত নয়। কারণ, এতে কংগ্রেস দীর্ঘমেয়াদিভাবে লাভবান হবে না। আমাদের বুঝতে হবে যে রাজ্যের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ আজ অবধি বামফ্রন্টকে মেনে নিতে পারে না। কারণ, বামেরা এখানে ৩৪ বছর শাসন করেছে। আমরা কেন ৩৪ বছরের বোঝা বহন করব? এটা আমাদের কাছে কষ্টদায়ক।'
যাইহোক, 'অন্তর্বর্তী' প্রদেশ কংগ্রেস (ডব্লিউবিপিসিসি) সভাপতি অধীর চৌধুরী-সহ প্রদেশ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা জনসমক্ষে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। কারণ, অধীর চৌধুরী লোকসভা নির্বাচনে টিএমসির ইউসুফ পাঠানের কাছে বহরমপুর গড় হারানোর পরে দলেই যথেষ্ট দুর্বল হয়ে পড়েছেন। এই হারের জেরে, কেন তিনি রাজ্যে টিএমসির বিরোধিতা করেছিলেন, বৈঠকে তার ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন অধীর।
কংগ্রেসের রাজনৈতিক অবস্থানের ব্যাপারে তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, 'আমরাও একসময় কংগ্রেসে ছিলাম। একইসঙ্গে সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস ছেড়ে টিএমসি গঠন করেছিলেন। সেটা বামেদের বিরুদ্ধে একা লড়াই করার জন্য। কংগ্রেস রাজ্যে তার পরিচয় হারিয়েছে। কারণ, সিপিএমের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য কংগ্রেসের চেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যবাসীর কাছে অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য ঠেকেছে। এখন, সেই সিপিএমের সঙ্গে জোট করার পরে, রাজ্যবাসী কংগ্রেসের ওপর তার বিশ্বাস সম্পূর্ণ হারিয়েছে। সেই বিশ্বাসকে পুনরুজ্জীবিত করতে, কংগ্রেসের নিঃশর্তভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থাকা উচিত। এই রাজ্যে কংগ্রেস একমাত্র তাহলেই পুনরুজ্জীবিত হতে পারে।'
আরও পড়ুন- হজের সময় বিপদে পড়লে, এমনকী মারা গেলেও আছে সহায়তার ব্যবস্থা, কীভাবে জেনে নিন
গোটা ব্যাপারে প্রতিক্রিয়ায় সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, 'কংগ্রেস যা করবে, সেটা তাদের প্রদেশ এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের ব্যাপার। এই ব্যাপারে আমাদের কিছু বলার নেই।'