Advertisment

শহর থেকে জেলা, বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের রথযাত্রা উৎসবে আজও গেঁথে সোনালী ইতিহাস!

বাংলার রথযাত্রার ইতিহাসও বেশ প্রাচীন। যুগ-যুগ ধরে বাংলার নানা প্রান্তে সাড়ম্বরে পালিত হয়ে আসছে রথযাত্রা উৎসব।

IE Bangla Web Desk এবং Nilotpal Sil
New Update
remembering west bengal popular rath yatra in occassion of rath yatra 2023

বাংলার রথযাত্রার ইতিহাস বেশ পুরনো।

বাংলার রথযাত্রার ইতিহাসও কিন্তু বেশ প্রাচীন। যুগ-যুগ ধরে বাংলার নানা প্রান্তে সাড়ম্বরে পালিত হয়ে আসছে রথযাত্রা উৎসব। এক কথায় বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গেই জড়িয়ে গিয়েছে রথযাত্রা। শহর কলকাতাই হোক বা লাগোয়া হাওড়া-হুগলি, কিংবা রাঢ়বঙ্গের বাঁকুড়া জেলা। বর্ধমানই হোক কিংবা সুদূর উত্তরের কোচবিহার বা শিলিগুড়ি, দশকের পর দশক ধরে অভূতপূর্ব উৎসাহ আর বিপুল উদ্দীপনায় বাংলার দিকে-দিকে রথযাত্রা উৎসব পালিত হয়ে আসছে।

Advertisment

কলকাতায় ইসকনের রথযাত্রা :

১৯৭২ সালে কলকাতার ইসকনের মন্দিরে রথযাত্রা শুরু হয়েছিল। সেই থেকে প্রতি বছর প্রবল উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে রথযাত্রা উৎসব পালন করে আসছে এলগিন রোডের ইসকন মন্দির কর্তৃপক্ষ। দুপুরে ইসকনের মন্দির থেকে রথ বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। এমজি রোডের মল্লিকদের ঠাকুরবাড়িতে নিয়ে গিয়ে সাত দিন ধরে রেখে দেওয়া হয় জগন্নাথ দেব-বলরাম-সুভদ্রাকে। পরে আবার সেই রথ ফিরিয়ে আনা হয় ইসকনের মন্দিরে।

এছাড়াও সেই ইংরেজ আমল থেকে কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে মহা সমারোহে রথযাত্রা উৎসব পালিত হয়ে আসছে। উত্তর কলকাতার প্রামাণিক বাড়ির রথযাত্রা উৎসবও বেশ পুরেনা। প্রায় আড়াইশশো বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে এখানকার রথযাত্রা। এছাড়াও শশীভূষণ দে স্ট্রিটের গৌরাঙ্গ মন্দিরের রথযাত্রা উৎসবও বেশ পুরনো। কলকাতার বেশ কিছু বনেদি বাড়িতেও রথ টানার রেওয়াজ আজও জারি রয়েছে।

হুগলির মাহেশের রথ :

বাঙালি ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে হুগলির শ্রীরামপুরের মাহেশের রথযাত্রা উৎসব। ৬২৭ বছরের পুরনো এই রথযাত্রা ঘিরে উন্মাদনার শেষ নেই। গোটা দেশের মধ্যে মাহেশের রথ দ্বিতীয় প্রাচীনতম। তবে বাংলার ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে পুরনো রথযাত্রা উৎসব। মাহেশের রথযাত্রা দেখতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কাতারে কাতারে মানুষ গিয়ে ভিড় জমান।

বাঁকুড়ার রথযাত্রা :

সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের রথযাত্রা। পাঁচচূড়া মন্দিরের অনুকরণে তৈরি হয়েছিল এখানকার রথ। তবে এই রথযাত্রার আলাদা একটি বিশেষত্ব রয়েছে। এই রথে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা থাকেন না। শ্রী শ্রী রাধামদন গোপাল জিউ সওয়ার হন রথে। এটাই এখানকার প্রাচীন রীতি। সেই রীতি আজও অটুট। গোটা বিষ্ণুপুর যেন ভেঙে পড়ে এই রথযাত্রার উৎসবে সামিল হতে। ভিনজেলা থেকেও অনেকে ছুটে যান এখানকার রথযাত্রা উৎসবে সামিল হতে।

পুরুলিয়ার রথযাত্রা :

দেড়শো বছরের প্রাচীন পুরুলিয়ার মণি বাইজির রথ। ১৮৯৮ সালে পুরুলিয়ার চকবাজারে একটি মন্দির তৈরি করেছিলেন মুন্নি বাই নামে এক বাইজি। পরে সেই মন্দিরে রাধাগোবিন্দ জিউয়ের অধিষ্ঠান ঘটিয়ে শুরু হয় রথযাত্রা। বর্তমানে কয়াল পরিবার এই রথযাত্রার দায়িত্ব সামলাচ্ছে। পুরুলিয়ায় এই রথযাত্রা উৎসব ঘিরে চূড়ান্ত উন্মাদনা তৈরি হয়।

বর্ধমানের রথযাত্রা :

বর্ধমান শহরের রাজবাড়ির রথও বেশ প্রাচীন। রাধাবল্লভের রথই বর্ধমান শহরের বাসিন্দাদের কাছে রাজবাড়ির রথ নামে পরিচিত। কথিত আছে জামালপুরের কুলীন গ্রামে শ্রীচৈতণ্যদেব এসেছিলন। পুরীর রথের রশির নাকি বেশ কিছুটা ইঁদুরে কেটে দিয়েছিল। শ্রীচৈতণ্যদেবের শিষ্য সত্যরাজকে কুলীন গ্রাম থেকে নতুন রশি আনতে বলেছিলেন। সেই রীতি আজও চলছে। কুলীন গ্রামের রথের রশি আজও পাঠানো হয় পুরীতে।

শিলিগুড়ির রথযাত্রা :

উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ির রথযাত্রা উৎসবও বেশ প্রাচীন। ইসকনের মন্দিরের রথযাত্রা উৎসব ঘিরে ব্যাপক উন্মাদনা থাকে গোটা শিলিগুড়ি শহরে। মন্দির প্রাঙ্গণ রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে ঢেলে সাজানো হয়।

কোচবিহারের রথযাত্রা :

কোচবিহারের মদনমোহনের রথযাত্রা ঘিরে বিপুল ভক্ত সমাগম ঘটে প্রতি বছর। মদনমোহনের মন্দির থেকে প্রতি বছর রথযাত্রা বের করা হয়। রাজার আমল থেকই রথযাত্রার দিনে ঠাকুর মদনমোহন চড়েন রথে। প্রাচীন সেই রীতি মেনে আজও নিজ গৌরবে চলছে মদনমোহন রথযাত্রা উৎসব।

Puri Rath Yatra 2023 West Bengal Rath yatra
Advertisment