Advertisment

রেণুর স্বপ্ন সফল, যোগ দিলেন সরকারি কাজে, এবার শুধু 'দিদি'র কাছে যাওয়ার আর্জি

রেণুর অদম্য জেদের কাছে তুচ্ছ সবকিছু।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
renu khatun joined state government service

সরকারি দফতরে স্বাগত জানানো হচ্ছে রেণু খাতুনকে। ছবি: প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়

স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের অমানুষিক নির্যাতনও দমিয়ে রাখে পারলো না রেণু খাতুনকে। অবশেষে স্বপ্ন পূরণ হল পূর্ব বধমানের কেতুগ্রামের রেণুর। মঙ্গলবার দুপুরে তিনি জেলা মুখ্য স্বাস্থ দফতরে গিয়ে 'স্টাফ নার্স গ্রেড ২' পদে কাজে যোগ দিলেন। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায়ের কাছ থেকে কাজের দ্বায়িত্বভারও বুঝে নেন রেণু।

Advertisment

রেণু খাতুনের লড়াইকে কর্নিশ জানানোর পাশাপাশি এদিন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা তাঁকে সংবর্ধনাও দেন। কাজে যোগদান করেই রেণু জানিয়ে দেন নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি তাঁর কাজ করে যাবেন। কাজে যোগ দিতে পারার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি ফের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে রেণু। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একবার দেখা করার প্রবল ইচ্ছে প্রকাশ করেন।

সরকারি হাসপাতালের নার্স হওয়ার জন্য রেণু খাতুনের জীবন সংগ্রামের কাহিনী আজও বাংলার মানুষের মনে টাটকা হয়ে রয়েছে । কেতুগ্রামের চিনিসপুর গ্রাম নিবাসী আজিজুল হকের মেয়ে রেণু খাতুন আজ অন্য মহিলাদের কাছে লড়াইয়ের প্রেরণা।

ভালবেসে ২০১৭ সালের অক্টোবর স্থানীয় কোজলসা গ্রাম নিবাসী যুবক সরিফুল শেখকে বিয়ে করেছিলেন রেণু। তার মধ্যেই পাশ করেন নার্সিং প্রশিক্ষণ। পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতোই রেণুর জীবন কাটছিল। একাধিক বেসরকারি সংস্থায় নার্সিংয়ের কাজ করেছেন তিনি। রেণু কিছুদিন আগে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে নার্সপদে চাকরির পরীক্ষা দেন। সেই পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণও হন। সেই চাকরিতে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি দিন গুনছিলেন । কিন্তু সরকারিনার্সের চাকরিতে যোগদানের ক্ষেত্রে চরম বাধা হয়ে দাঁড়ান তাঁর স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন ।

ভালবেসে রেণু যাঁকে জীবন সঙ্গী হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন সেই সরিফুল শেখের মনে ধারণা জন্মায় রেণু সরকারি চাকরিতে যোগ দিলে সে আর তার সঙ্গে সংসার করবে না। রেণু তাঁর হাতছাড়া হয়ে যাবে। তাই রেণু যাতে নার্সের সরকারি চাকরি করতে না পারে তার পরিকল্পনা কষে ফেলে সরিফুল। পরিকল্পনা মতো গত ৪ জুন রাতে ভাড়াটে দুস্কৃতিদের সঙ্গে নিয়ে সরিফুল শ্বশুর বাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা রেণুর ডান হাতের কব্জিতে ধারালো অস্ত্রের কোপ বসিয়ে কেটে দেয়।

নৃশংস ওই ঘটনার পরের দিন অর্থাৎ ৫ জুন রেণুর বাবা আজিজুল হক কেতুগ্রাম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্তে নেমে পুলিশ দু'দিনের মধ্যেই সরিফুলকে গ্রেফতার করে। তারপর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ মুর্শিদাবাদের ভরতপুর থানার তালগ্রাম থেকে গ্রেফতার করে দুই ভাড়াটে দুষ্কৃতী আসরফ আলি শেখ ও হাবিবুর রহমানকে। তিন জনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে পুলিশ জানতে পারে গোটা ঘটনার মাস্টারমাইণ্ড সরিফুলের মাসতুতো ভাই চাঁদ মহম্মদ।পুলিশ তাঁকেও গ্রেফতার করেছে। এখনও চারজনই পুলিশি হেফাজতে রয়েছে।

জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায় জানিয়েছেন, “স্বাস্থ্য ভবন থেকে কোনও নির্দেশ না আসা পর্যন্ত রেণু খাতুন আপাতত জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য দফতরে কর্মরত থাকবেন।” রেণু খাতুন জানান, তিনি যে কাজে এদিন যোগ দিলেন সেই কাজটা হচ্ছে রোগীর সেবা করা। নিষ্ঠার সঙ্গে সেই কাজটা আজীবন তিনি করে যেতে যান। এই শপথই এদিন হৃদয় থেকে তিনি নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন।

প্রশাসন সূত্রে খবর, আগামী ২৭ জুন বর্ধমানে প্রশাসনিক সভায় যোগ দিতে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়। সুযোগ পেলে রেণু খাতুন ওই দিনই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়ে কৃতজ্ঞতা জানাবেন।

East Burdwan burdwan West Bengal
Advertisment