Advertisment

Premium: ভগৎ সিংকে নিয়ে ১৮ দিন লুকিয়েছিলেন এখানেই, সোনালী স্মৃতি আঁকড়ে বটুকেশ্বর দত্তের গ্রাম

Republic Day 2024: প্রতি বছর বটুকেশ্বর দত্তের জন্মদিন হোক কিংবা স্বাধীনতা দিবস বা সাধারণতন্ত্র দিবস, বিপ্লবীর বসতভিটেয় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এগ্রামের বাসিন্দারা। এবছরেও তাঁর অন্যথা হয়নি। বীর বিপ্লবীর বসতভিটেয় সাধারণতন্দ্র দিবসের সকালে জড়ো হয়েছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। দেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মান জানানো হয়েছে বীর বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তকে।

IE Bangla Web Desk এবং Nilotpal Sil
New Update
Purba Bardhaman Khandaghosh Batukeshwar Dutta, পূর্ব বর্ধমান খণ্ডঘোষ বটুকেশ্বর দত্ত

Batukeshwar Dutta: প্রজাতন্ত্র দিবসে বীর বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের ভসতভিটেয় তাঁকে ও ভগৎ সিংকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন।

Batukeshwar Dutta: ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্ত (Batukeshwar Dutta)। ভারতের মুক্তিযোদ্ধা ভগৎ সিংয়ের (Bhagat Singh) সহকারী বটুকেশ্বর দত্ত ১৯১০ সালের ১৮ নভেম্বর অধুনা পূর্ব বর্ধমান (Purba Bardhaman) জেলার খণ্ডঘোষের ওঁয়াড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। দেশের স্বাধীনতার জন্যে বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের আবদান কখনই ভুলতে চান না ওঁয়াড়ি গ্রামের বাসিন্দারা। তাই তাঁরা ওঁয়াড়ি গ্রামে বিপ্লবীর পৈতৃক ভিটে ও বসতবাড়ি বহুকাল ধরে আগলে রেখেছেন। এমনকী ওঁয়াড়ি গ্রাম নিবাসী বিপ্লবীর গুণমুগ্ধরা মিলে 'বটুকেশ্বর দত্ত স্মৃতি সংরক্ষণ' কমিটিও গঠন করেছেন।

Advertisment

বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের বসতবাড়ি ও ভিটে এখন রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে। বিপ্লবীর বসতবাড়ি ও ভিটের সংস্কারের কাজ হয়েছে। সেখানে বসানো হয়েছে বিপ্লবীর আবক্ষ মূর্তি। প্রতি বছর বটুকেশ্বর দত্তের জন্মদিবস থেকে শুরু করে দেশের সাধারণতন্ত্র দিবস (Republic Day) ও স্বাধীনতা দিবসের (Independence Day) দিনে ওঁয়াড়ি গ্রামের বাসিন্দারা বটুকেশ্বর দত্তের জন্ম ভিটেয় উপস্থিত হয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।

publive-image

রাজ্য সরকারের উদ্যোগে সংস্কারের পর বর্তমানে বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের বাড়ি।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের নাম। বিপ্লবী ভগৎ সিংয়ের ভাবশিষ্য হিসেবেই পরিচিত বটুকেশ্বর দত্ত। তিনি এবং ভগৎ সিং মিলে ১৯২৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর বোমা নিক্ষেপ করে অত্যাচারী ইংরেজ পুলিশ অফিসার স্যাণ্ডারসনকে লাহোরে হত্যা করেন। তারপর থেকে দুই বিপ্লবীকে ধরতে ইংরেজ পুলিশ শুরু করে চিরুনি তল্লাশি। গ্রেফতারি এড়াতে ইংরেজ পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে ভগৎ সিংকে সঙ্গে নিয়ে ওঁয়াড়ি গ্রামে চলে আসেন বটুকেশ্বর দত্ত। সেই খবর পেয়ে ইংরেজ পুলিশ ওঁয়াড়ি গ্রামে পৌছে বটুকেশ্বর দত্তের বাড়ি ঘিরে ফেলে। তখন ভগৎ সিংকে সঙ্গে নিয়ে বটুকেশ্বর দত্ত প্রতিবেশী নগেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষের বাড়ির পাতাল ঘরে আত্মগোপন করেন। দুই বিপ্লবী ১৮ দিন ওই পাতাল ঘরে আত্মগোপন করে থাকেন। পাতালঘরে বসেই তাঁরা পার্লামেন্টে বোমা নিক্ষেপের পরিকল্পনা সেরে ফেলেন।

এরপরে ফের ইংরেজ পুলিশের চোখে ধুলো দিয়েই অকুতোভয় এই দুই বিপ্লবী মহিলার ছদ্মবেশে ওঁয়াড়ি গ্রাম ছেড়ে বেরিয়ে যান। নগেন্দ্রপ্রসাদের উত্তরসূরি প্রণব ঘোষ প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর স্ত্রী রেখা ঘোঘ জানান, তাঁর শ্বশুরবাড়ির পাতালঘরে দুই বিপ্লবীর আত্মগোপন করে থাকা অবস্থায় রোমহর্ষক পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন। এই কথা তাঁর ঠাকুমা শাশুড়ি পঙ্কজিনী ঘোষের মুখ থেকে শ্বশুরবাড়ির সবাই জানতে পারেন। তিনিও তাঁর স্বামীর কাছ থেকে সেটাই শুনেছেন বলে রেখাদেবী জানান।

দেশের স্বাধীনতার জন্যে বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তর লড়াই আন্দোলন শুধু মাত্র কয়েকটি কর্মকাণ্ডেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ১৯২৯ সালের ৮ এপ্রিল ভগৎ সিংয়ের সঙ্গে দিল্লির কেন্দ্রীয় সংসদ ভবনে বোমা ফাটানোর জন্যেও তিনি বিখ্যাত হয়েছিলেন। বোমা নিক্ষেপের পর তিনি এবং ভগৎ সিং ’ইনকিলাব জিন্দাবাদ ’ স্লোগানে সংসদ ভবন মুখরিত করে তোলেন। দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াকু আন্দোলনে সামিল হওয়ার কঠিন মাশুল দিতে হয়েছিল ভগৎ সিং ও তাঁর সহযোদ্ধা বটুকেশ্বর দত্তকে। ফাঁসিকাঠে জীবনের ইতি ঘটে ভগৎ সিংয়ের। আর জীবনের দীর্ঘ সময় বটুকেশ্বর দত্তকে কাটাতে হয় কারাগারে। সেখানেও তাঁকে হজম করতে হয়েছিল ইংরেজ পুলিশের অমানবিক নির্যাতন।

আরও পড়ুন- Premium: ডানা মেলল স্বপ্ন উড়ান, প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজধানীর কর্তব্যপথে বাংলার ‘অগ্নিকন্যা’

ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে এহেন দেশভক্ত বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্ত কিন্তু যথাযোগ্য মর্যাদাটুকু পাননি। কোনও সরকারি সাহায্য পাওয়া তো দূরের কথা রুটি রুজি জোগাড়ের জন্য বটুকেশ্বর দত্তকে কখনও সিগারেট এজেন্সির এজেন্ট হিসেবে কাজ করে আবার কখনও পাউরুটি বিক্রি করতে হয়েছে। একমাত্র কন্যা ভারতী এবং স্বামী বটুকেশ্বর দত্তর পাশে দাঁড়াতে স্ত্রী অঞ্জলিদেবী একটি প্রাইভেট স্কুলে শিক্ষকতায় যুক্ত হন। জীবন সায়াহ্নে পৌঁছেও অবহেলার শিকার হয়ে থাকেন বটুকেশ্বর দত্ত। ১৯৬৪ সালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার পর চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে একটা বেড পাওয়ার সৌভাগ্যও তাঁর হয়নি।

আরও পড়ুন- Kolkata Weather Today: কাঁপানো ঠান্ডা পড়তে চলেছে দক্ষিণবঙ্গে ? স্লগ ওভারে ঝড় তুলবে শীত?

শেষে ১৯৬৪ সালের ২২ নভেম্বর বটুকেশ্বর দত্ত দিল্লির সবরমতী হাসপাতালে পৌঁছোন । কিন্তু শারীরিক

অবস্থার উন্নতি আর হয়নি। সেই সময়ে ছেলের সহযোদ্ধা বটুকেশ্বর দত্তের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন ভগৎ সিংয়ের মা বিদ্যাবতী দেবী। শোনা যায় ভগৎ সিংয়ের মায়ের কোলে মাথা রেখেই ১৯৬৫ সালের ২০ জুলাই বটুকেশ্বর দত্ত শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।

বটুকেশ্বর দত্ত স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি মধুসূদন চন্দ্র বলেন,“দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বটুকেশ্বর দত্ত যেমন মর্যাদা পাননি, তেমনই বছরের পর বছর ধরে অনাদরেই পড়ে ছিল বিপ্লবীর বসত বাড়ি ও ভিটা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর বটুকেশ্বর দত্তের বসতবাড়ি, ভিটে ও তার লাগোয়া নগেন্দ্রনাথ ঘোষেদের সেই পাতাল ঘর ’হেরিটেজ’ স্থান হিসাবে ঘোষণা করা হয় । এরপর ২০১৩ সালে রাজ্যের পর্যটন দফতর বটুকেশ্বর দত্তের জন্মভিটে ও পৈতৃক বাড়ি এবং ওই পাতাল ঘর সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বসত ভিটা সহ মাটির দেওয়াল ও টিনের চালার বাড়ির কাঠামো অক্ষুন্ন রেখে হয় সংস্কার কাজ। বটুকেশ্বর দত্ত এবং ভগৎ সিংয়ের আবক্ষ মূর্তিও সেখানে তৈরি হয়েছে। এরপর দেরিতে হলেও ভারতীয় রেল বর্ধমান স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের নামে করেছে।"

পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ অপার্থিব ইসলাম খণ্ডঘোষ ব্লকেরই বাসিন্দা । তিনি বলেন, "এটা আমাদের সৌভাগ্যের যে বটুকেশ্বর দত্তের মতো একজন দেশবরেণ্য বিপ্লবী খণ্ডঘোষের ওঁয়াড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বিপ্লবী ভগৎ সিংয়ের সহযোগি হিসেবে অতি অল্প বয়সেই বটুকেশ্বর দত্ত স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। এইসব মহান বিপ্লবীরা যখন দেশের স্বাধীনতার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তখন মানুষের মধ্যে কোনও বিভেদ ছিল না। কে হিন্দু, কে মুসলমান, কে শিখ, কে ধনী, কে গরিব এই সব কোনও বিচার্য বিষয়ই ছিল না । কেউ মহাত্মা গান্ধী, আবার কেউ নেতাজির ডাকে সাড়া দিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। নেতাজীর আজাদ হিন্দ বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ছিলেন শেখ শাহনওয়াজ । এছাড়াও নেতাজীর সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিলেন হবিবুর রহমান। এই দু’জনেই ছিলেন মুসলিম। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার এত বছর বাদে এখন ধর্মই যেন ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম বিচার্য্য বিষয় হয়ে উঠেছে’। এটাই দুর্ভাগ্যের।"

Batukeshwar Dutta Bhagat Singh West Bengal Republic Day
Advertisment