রোজ ভ্যালি কাণ্ডে এবার ইডির হাতে তুরুপের তাস হতে চলেছেন ব্যবসায়ী সুদীপ্ত রায় চৌধুরী। সাম্প্রতিক তদন্তে বেশ কিছু নতুন তথ্য উঠে এসেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের হাতে। জানা গিয়েছে, শুধুমাত্র ২ কোটি টাকা দিয়ে তদন্ত করে 'ম্যানেজ' করে দেওয়া নয়, ইডির প্রাক্তন এক আধিকারিককে একটি আস্ত ফ্ল্যাট ভেট দেন রোজ ভ্যালি কর্তা গৌতম কুন্ডু। সূত্রের খবর, গোপন ওই বৈঠক হয়েছিল বিধাননগরের এক থানায়। ইডির তদন্তে সেই সব তথ্য উঠে এসেছে, যা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারিরা।
রোজ ভ্যালি কর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রেক্ষিতে সুদীপ্ত রায় চৌধুরীকে টানা জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেপ্তার করে ইডি। সূত্রের খবর, ইডি জানতে পেরেছে সল্ট লেকের একটি থানায় বৈঠক হয় সুদীপ্ত রায় চৌধুরী, রোজ ভ্যালি কর্তা গৌতম কুন্ডু ও তৎকালীন ইডির দায়িত্বপ্রাপ্ত এক আধিকারিকের মধ্যে। সেই মধ্যস্থতায় এক পুলিশ কর্তা এবং বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমের এক সাংবাদিকও হাজির ছিলেন বলে ওই সূত্রের দাবি। এই ধরনের মধ্যস্থতা করাই মূল কাজ সুদীপ্তর। জানা গিয়েছে, ওই বৈঠকের ফলস্বরূপ নিউ টাউনের একটি ফ্ল্যাট ভেট দেওয়া হয়েছিল ইডির ওই আধিকারককে। একটাই উদ্দেশ্য ছিল, যাতে রোজ ভ্যালির তদন্তে ঢিলে দেওয়া হয়। শেষমেষ অবশ্য কোনও কাজ হয়নি, ইডি গ্রেপ্তার করে গৌতম কুন্ডুকে।
আরও পড়ুন: রোজ ভ্যালি কাণ্ডে ইডি-র জালে ব্যবসায়ী সুদীপ্ত রায়চৌধুরী
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, সুদীপ্ত রায় চৌধুরী ছিলেন ব্যবসায়ী কম, মধ্যস্থতাকারী বেশি। গৌতম কুন্ডু ইডিকে জানিয়েছেন, তাঁর কাছে থেকে ২ কোটি টাকা নেন সুদীপ্ত। কিন্তু তদন্তকারিদের দাবি, ওই ২ কোটি টাকা শুধু নয়, সুদীপ্ত নানাভাবেই রোজ ভ্যালির টাকা সাফাই করেছেন। ওই সূত্রের দাবি, ওই টাকা নানাভাবে ঘুরপথে ব্যবসার কাজে লাগিয়েছেন তিনি। অন্যান্য চিট ফান্ড থেকে টাকা নিয়েছেন কী না, তাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারিরা।
জানা গিয়েছে, বিলিতি মদের বোতলের ছিপি তৈরির ব্যবসা সুদীপ্তর। তাঁর সঙ্গে একাধিক নেতা-মন্ত্রী, পুলিশ আধিকারিক, অভিনয় জগতের সেলিব্রিটির সঙ্গে ওঠাবসা। এবার দুর্গাপুজোর দিনগুলোতে বাড়িতে জোরদার পার্টিও হয়েছে। সেখানে টলিউডের অভিনেত্রীরাও ছিলেন বলে খবর। তদন্তকারিরা মনে করছেন, এইসব সম্পর্ক তৈরি করতেই মধ্যস্থতা করেন সুদীপ্ত। এইভাবে অর্থ আত্মসাৎ করাই তাঁর কাজ বলে মনে করছেন তদন্তকারিরা।
ব্যাঙ্কশাল আদালত ১২ নভেম্বর পর্যন্ত তাঁকে বিচার বিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, পরে জেরা করার জন্য তাকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদন জানাবে তারা। সূত্রের খবর, সুদীপ্তর বাজেয়াপ্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং নথিপত্র খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারিরা। সেই সব নথি খতিয়ে দেখার পর ফের জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন পড়বে বলে মনে করছেন ইডির আধিকারিকরা। ইডি মনে করছে, বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির মালিক এই সুদীপ্ত। কীভাবে এত সম্পত্তির মালিক হলেন, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ইডি সূত্রে খবর, জেরায় ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথা স্বীকার করেছেন সুদীপ্ত। পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গেও যোগাযোগের কথা স্বীকার করেছেন। তাঁকে সূত্র করেই তাবড় নেতা-আধিকারিকদের কাছে পৌঁছতে চাইছে ইডি। নজরে রয়েছেন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা। সূত্রের খবর, পুরো বিষয়টি সিবিআই-ও নজরে রাখছে।