আজ থেকে প্রায় ২০০ বছর আগে আদিবাসীদের অধিকারের জন্য গর্জে উঠেছিলেন সাঁওতালরা। শুধু পুরুষরাই নন। তাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ফুলো মুর্মু, ঝানো মুর্মুর মত আদিবাসী মহিলারাও যোগ দিয়েছিলেন বিদ্রোহে। প্রতিবছর হুল বিদ্রোহের দিনটি সেই আত্মত্যাগ এবং লড়াইয়ের সাক্ষী দেয়। সেই গর্জে ওঠার দিনটিও ছিল ৩০ জুন।
Advertisment
তখনও সিপাহি বিদ্রোহ দেখেনি ভারত। সময়টা ১৮৫৫ সাল। তীর ধনুকের মতো পুরনো দিনের অস্ত্র নিয়েই প্রবল প্রতাপশালী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বন্দুক গোলাবারুদের মুখোমুখি হন সাঁওতালরা। ইতিহাসবিদদের অধিকাংশই ব্রিটিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে প্রথম লড়াই হিসেবে সিপাহি বিদ্রোহকে ধরেন। যদিও আদিবাসীদের ওপর গবেষকরা দাবি করেন, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম বলতে হুল বিদ্রোহকেই বোঝায়। মধ্যে ২০০ বছর পেরিয়ে গেছে আজও সেই হুল বিদ্রোহ ভোলেননি সাঁওতালরা। নিজস্ব রীতিনীতিতে আজও তাঁরা হুল বিদ্রোহকে স্মরণ করেন।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক রাহি সোরেন জানিয়েছেন, কৃষক ও সাঁওতালদের প্রতি দীর্ঘ বঞ্চনাই ছিল বিদ্রোহের কারণ। সাঁওতালরা বুঝতে পেরেছিলেন তাঁরা জমিদারদের হাতে শোষিত হচ্ছেন। মহাজনদের দ্বারা শোষিত হচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের দ্বারা শোষিত হচ্ছেন। আর শোষিত হচ্ছেন প্রশাসনের দ্বারা। যে প্রশাসন তাঁদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। আর, তাই বিদ্রোহের পথ বেছে নিয়েছিলেন সাঁওতালরা। রাজমহলের বনভূমি ঘেরা মালভূমি অঞ্চল দামিন-ই-কোহ থেকে বিদ্রোহ ছড়ায়। যা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য সাঁওতাল অধ্যুষিত এলাকাগুলোয়।
অধ্যাপক সোরেন জানান, সেই সময় সাঁওতালরা তাঁদের বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য হয়েছিল। জমিদাররা তাদের বাস্তুচ্যুত করেছিল। যাঁরা চাষ করত না, তাঁদের জোর করতে চাষ করতে বাধ্য করছিল। জোর করে শ্রমিকের কাজ করাচ্ছিল। অর্থ দিচ্ছিল না। উলটে নানাভাবে অত্যাচার চালাচ্ছিল। এভাবেই চলছিল দিনের পর দিন। যার ক্ষোভ বিদ্রোহের মাধ্যমে উগরে দেন সাঁওতালরা। যার জেরে শান্তিপূর্ণ এলাকাগুলোই হয়ে ওঠে উত্তপ্ত। দাবানল ছড়িয়ে পড়ার মতই ছড়ায় হুল বিদ্রোহের আগুন।