বাবা হারানোর যন্ত্রনা আজও কুড়ে কুড়ে খায় বছর ৪৫ এর সফিকুলকে। সেদিন রাত্রে অসুস্থ বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পাননি কোন অ্যাম্বুলেন্স। চোখের সামনে বাবার মৃত্যু যেন মাথার ছাদ কেড়ে নিয়েছিল সফিকুলের। বাবাকে হারানোর কষ্ট বুকে চেপে ধরেই সকলের জন্য ‘দুয়ারে অ্যাম্বুলেন্স’ পরিষেবা এনে মানব সেবাই বড় ধর্ম সেকথা আরও একবার প্রমাণ করেছেন রায়গঞ্জের ভিটিয়ারের বাসিন্দা সফিকুল হক। ভিটিয়ার সহ সংলগ্ন একাধিক গ্রাম এমনি পার্শ্ববর্তী বিহারের একাংশ মানুষ এই সুবিধে পেয়ে থাকেন।
শুধুমাত্র একটা ফোন, গভীর রাতে বাড়ির দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে অ্যাম্বুলেন্স। আপাতদৃষ্টিতে সেটিকে দেখে অ্যাম্বুলেন্স বলে মনে না হলেও অসময়ের ভরসা সফিকুলের কালো রঙের সেকেন্ড হ্যাণ্ড স্যান্ট্রো গাড়ি। রাতদুপুরে বিপদে-আপদে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে অসু্স্থ মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের ভরসা সফিকুলের এই গাড়ি।
পেশায় ডেকোরেটার্সের ব্যবসায়ী সফিকুলের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সমাজের সকল স্তরের মানুষ। নিজের এমন উদ্যোগ সম্পর্কে সফিকুল বলেন, ‘চোখের সামনে বাবাকে অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারিনি। বাবাকে হারানোর যন্ত্রনা প্রতিনিয়ত আমাকে আজও তিলে তিলে গ্রাস করছে। আমি চাই আমার গ্রামের আর একটি পরিবারও যাতে এমন ঘটনার মুখোমুখি না হয়’।
তিনি বলেন, ‘রাত বেরাতে গাড়ির অভাবে হাসপাতালে পৌঁছাতে আমাদের অঞ্চলের মানুষের অনেক সমস্যাই হয়। সেকথা ভেবেই আমি নিজেই একটা সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কিনে রাত ১০ টা থেকে ভোর ৬ টা পর্যন্ত বিনামূল্যে গ্রামের মানুষকে অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা দিয়ে থাকি। সেই সঙ্গে পাশেই যারা টাকার অভাবে বিহারের হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যেতে পারেন না তাদেরকেও আমি আমার গাড়ি করে বিনামূল্যে হাসপাতালে পৌঁছে দিই’। পরিষেবা দিতে মাসে প্রায় সাত থেকে আট হাজার টাকার তেল খরচ হয় সফিকুলের। তবে গ্রামের অসহায় মানুষের পাশে থেকে এভাবে তাদের পরিষেবা দিতে পেরে বেজায় খুশি সকলের প্রিয় সফিকুল দা।