করোনাকালে স্যালন ও বিউটি পার্লার শিল্প ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিধি-নিষেধ মেনে স্যালন ও পার্লার খোলায় ছাড়পত্র দিয়েছে রাজ্য সরকার। তবুও সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কায় অনেকেই এখনও পর্যন্ত স্যালন ও পার্লারের পথ এড়িয়েই চলছেন। অতিমারীর কোপে মাসের পর মাস ধরে আর্থিক ক্ষতি সামাল দিতে না পেরে গত দু'বছরে বন্ধ হয়েছে বহু স্যালন ও বিউটি পার্লার। কাজ হারিয়েছেন বহু কর্মী। স্যালন ও বিউটি পার্লারে মন্দার কারবারের ছবিটা রাজ্যজুড়ে একই। এই পরিস্থিতিতে এবার সরব পার্লার ও স্যালন মালিকরা। স্যালন বা পার্লার থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা নেই বলেই মনে করেন 'ওনার ফর এভার'-এর সদস্যরা। এই নামেই একটি সংগঠন তৈরি করেছেন এরাজ্যের স্যালন ও বিউটি পার্লারের কর্ণধাররা।
স্যালন ও বিউটি পার্লারের কাজে পুরুষদের পাশাপাশি অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাজ করতে দেখা যায় মহিলাদেরই। এই শিল্প মূলত মহিলারাই দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। রাজ্যজুড়ে লক্ষ-লক্ষ মহিলা-পুরুষ এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। ২০২০-র মার্চ থেকই অন্যান্য শিল্পের পাশাপাশি দারুণ খরা নেমে এসেছে এই শিল্পেও। বিশেষ করে শারীরিক দূরত্ব-বিধি মানার নিয়মের গেরোয় লাটে ওঠার জোগাড় হয় এই শিল্প। ২০২০-র মার্চের পর থেকেই ব্যবসায় মন্দা। একে একে বন্ধ হতে তাকে স্যালন-পার্লার। শহর কলকাতা-সহ জেলায়-জেলায় একই ছবি। বহু মানুষ ইতিমধ্যেই কাজ খুইয়েছেন। সংসার চালাতে অনেকে বাধ্য হয়ে পেশা বদলেছেন।
যদিও বর্তমানে বিধি-নিষেধ মেনে পার্লার ও স্যালনে ফের কাজ শুরুর অনুমতি দিয়েছে রাজ্য সরকার। ৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে স্যালন-পার্লারে। তবুও ক্রেতার ভাঁটা চলছেই। করোনা ছড়ানোর আশঙ্কায় এখনও অনেকেই স্যালন-পার্লারে যেতে সাহস করছেন না। স্যালন-পার্লারের কর্ণধারদের দাবি, তাঁদের দোকানগুলিতে সব-রকম সতর্কতা নেন কর্মীরা। নিয়মিত স্যানিটাইজেশনও চলে। কর্মীদের প্রত্যেকে করোনা টিকার দুটি ডোজই নিয়েছেন। এরপরেও ক্রেতারা আসছেন না, বা যত ক্লায়েন্ট আসছেন তাতে করে ব্যাবসা চালিয়ে যাওয়াই কঠিন হচ্ছে।
রাজ্যজুড়ে বিউটি পার্লার ও স্যালন শিল্পকে বাঁচাতে এবার একযোগে আওয়াজ তুলেছে 'ওনার ফর এভার'। স্যালন ও বিউটি পার্লারদের কর্ণধারদের একটি সংগঠন। তাঁদের আবেদন, আতঙ্ক সরিয়ে ফের ক্লায়েন্ট ফিরুক স্যালন-বিউটি পার্লারে।
আরও পড়ুন- আপনার শরীরে কি ওমিক্রন দ্বিতীয়বার হানা দিতে পারে? জেনে নিন বিশেষজ্ঞের মতামত
শহর কলকাতায় প্রখ্যাত স্যালন চেনের কর্ণধার সোমা ঘোষ। তিনিও এই শিল্পে নেমে আসা দারুণ মন্দায় ঘোর বিপাকে পড়েছেন। আগে তাঁর নিজেরই পাঁচটি স্যালন ছিল। ব্যবসায় বিপুল মন্দার জেরে বাধ্য হয়ে দু'টি স্যালন তিনি বন্ধ করে দিয়েছেন।
তাঁর কথায়, ''ছোট-বড় সব স্যালনেই স্যানিটাইজ করা হচ্ছে। কিন্তু ক্লায়েন্টরা আসতে এখনও ভয় পাচ্ছেন। ব্যবসার পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে গিয়েছে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ব্যবসা ভালো হয়। এটা বিয়ের মরশুম। কড়াকড়ির জেরে মানুষ আসতে ভয় পাচ্ছেন। সরকার অনুমতি দিলেও তাই ব্যবসা শিকেয় ওঠার জোগাড়। স্যালন থেকে করোনা ছড়াচ্ছে এই কথা ঠিক নয়। আমাদের কর্মীরা ডাবল ডোজের টিকা নিয়েছেন। মুখে মাস্ক পরে কাজ করছেন তাঁরা।'' শুধু কলকাতা শহরেই ২৫ শতাংশ স্যালন মহামারীর কোপে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে দাবি তাঁর।