Advertisment

তাক লাগানো চুরিতে প্রশাসনের চক্ষু ছানাবড়া, ভুয়ো সরকারি ওয়েবসাইট খুলে রমরমিয়ে চলছে বালিপাচার

চুরিতে চমক

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
sand smuggling fake government website khondoghosh east burdwan

চলছে বালি তোলার কাজ।

ট্রাকে বালির চোরাচালানের জন্য নকল সরকারি ওয়েবসাইট খুলে তৈরি করা হয়েছিল জাল চালান। ওই জাল চালানের সঙ্গে ‘কিউ আর কোড’ লিঙ্ক করে বালি মাফিয়ারা পুলিশ এবং ভূমি দফতরের অফিসারদের বোকা বানিয়ে বালি পাচার চালাচ্ছিল। গোপন সূত্রে সেই খবর পৌছায় পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিষ সেনের কাছে।পুলিশ সুপারের নির্দেশে জেলা পুলিশ তদন্তে নেমে ওই জালিয়াতি চক্রের চার মাস্টার মাইন্ডকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রচুর জাল চালান, চারটি মোবাইল ফোন, 'গুগল পে' ও 'ফোন পে' র স্ক্রিন শট এবং ভুয়ো সরকারি ওয়েবসাইট ও কিউআর কোডের তথ্য। বালির চোরা চালানের জন্যে মাফিয়ারা এখন ডিজিটাল মাধ্যমকে ব্যবহার করছে জেনে স্তম্ভিত প্রশাসনিক কর্তারা।

Advertisment

পুলিশ সম্প্রতি খণ্ডঘোষের পলেমপুর ও খেজুরহাটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই বালি মাফিয়া চক্রের মূল পাণ্ডা সহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম লায়েক আজহার উদ্দিন, মীর আবু সিদ্দিকি, শেখ মনোজ লস্কর ও মণিরুল হোসেন। ধৃতদের মধ্যে প্রথম দু’জন খণ্ডঘোষের খেজুরহাটি ও কেশবপুরের বসিন্দা। মনোজ বর্ধমানের লস্করদিঘী এবং মণিরুল রায়নার জ্যোৎসাদি গ্রামের বাসিন্দা ।
সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ শুক্রবার চার ধৃতকে বর্ধমান আদালতে পেশ করে পাঁচ দিনের পুলিশি হেপাজতে নিয়েছে।

তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে পুলিশ জানার চেষ্টা করছে,ভুয়ো সরকারি ওয়েবসাইট খুলে ও ভুয়ো চালান তৈরি করে মাফিয়ারা বালি পাচার চক্রের জাল কতদূর ছড়িয়েছে। পুলিশ যদিও প্রাথমিক তদন্তে জেনেছে, ধৃতদের মধ্যে লায়েক আজহারউদ্দিন নকল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভুয়ো চালান তৈরি করত। আর তার এজেন্ট হিসাবে কাজ করতো মীর আবু সিদ্দিকি, শেখ মনোজ লস্কর ও শেখ মণিরুল হোসেন। পুলিশ আরও জানতে পেরেছে যে, খাদান থেকে বেআইনি বালি ট্রাকে করে পাচার করার জন্যে ভুয়ো চালান তৈরি করা হত। বর্তমানে বৈধভাবে ট্রাকে বালি নিয়ে সড়ক পথে যাওয়ার জন্যে (mdtcl.wb.gov.in) ই-চালান ট্রাক চালককে সঙ্গে রাখতে হয়। সেই চালানে ‘কিউআর কোড’ থাকে। যে কোড ‘স্ক্যান’ করে দেখে প্রশাসনের কর্তারা বুঝতে পারেন চালানটি আসল না নকল। বালি মাফিয়া চক্রটি এমন ধরণেরই জাল চালান তৈরি করে বালি পাচার করছিল বলে পুলিশ জেনেছে। পুলিশের অনুমান, পূর্ব বর্ধমান সহ বিভিন্ন জেলায় এই চক্র জাল বিস্তার করেছে।

জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা জানিয়েছেন, বালির নকল চালানের বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন থানায় এফআইআর করা হয়েছিল। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি) ইউনিস রিসিন ইসমাইল বলেন, 'গলসিতে অভিযান চালানোর সময়ে এক দিনে দু’টো ভুয়ো চালান পাওয়া গিয়েছিল।'পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বলেন, 'এই চক্রের কাজ কর্মের জন্য সরকারের রাজস্বে ক্ষতি হচ্ছিল। নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আর কারা কারা এই কাজে জড়িত রয়েছে তা জানা হবে। জেলা প্রশাসনকেও এই ঘটনার সবিস্তার রিপোর্ট করা হয়েছে।'

এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) সুপ্রভাত চক্রবর্তী বলেছেন, ' রাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটের আদলে একটি ভুয়ো ওয়েবসাইট বানিয়েছে চক্রটি। ওই ওয়েবসাইটি হল (mdtcl.wb-gev.in)। এই ওয়েবসাইটি থেকেই বালির ভুয়ো চালান বের করা হয়। তারপর প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে সেটিকে ‘কিউআর কোড’-র সঙ্গে ‘লিঙ্ক’ করিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে সড়ক পথে পুলিশ বা ভুমি দফতরের কোন আধিকারিক যখন ওই কোড ‘স্ক্যান’ করবেন তখন ভুয়ো চালানই দেখা যাবে।'

তদন্তকারী পুলিশ কর্তাদের দাবি খাদান থেকে শুরু করে গন্তব্যস্থল প্রযন্ত বালি পৌঁছানোর কাজে যুক্ত সকলে এই চক্রে যুক্ত রয়েছে। নদি থেকে ট্রাকে বালি লোড হবার পরেই লায়েক আজহারউদ্দিনের কাছে ভুয়ো চালান তৈরির বরাত পৌঁছে যেত। তার পরেই বরাত মতো নকল ওয়েবসাইট থেকে ভুয়ো চালান তৈরি করে তা 'কিউআর কোডের' সঙ্গে ‘লিঙ্ক’ করে তা বিভিন্ন এজেন্টদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হত। এছাড়াও আসল চালানকে ‘স্ক্যান’ করে নিয়ে গাড়ির নম্বর, বৈধ তারিখ, সময় বদলে দিয়ে চালান তৈরি করা হত । এসডিপিও বলেন, 'সেই ভুয়ো চালানও কিউআর কোডে লিঙ্ক করে দেওয়া হত। যা একঝলক দেখে পুলিশ বা প্রশাসনের কর্মীদের আসল না নকল ধরা খুব কঠিন হত। এখন ওয়েবসাইটের নাম আর কিউআর কোডের ছাপ দেখে আসল আর নকলের ফারাক ধরা পড়ে গিয়েছে।'

East Burdwan burdwan
Advertisment