সন্দেশখালিতে তৃণমূলের 'বাহুবলী'দের হাতে দিনের পর দিন ধরে যৌন নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছেন এলাকার মহিলাদের একটি বড় অংশকে, এমনই অভিযোগ উঠেছে। মারাত্মক এই অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূলকে (TMC) কাঠগড়ায় তুলে সোচ্চার বিরোধী বিজেপি (BJP)। এই আবহেই সন্দেশখালির পাঁচ মহিলা মুখোমুখি হয়েছিলেন দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের। তাঁরা জানালেন, শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন তাঁরাও, তবে ভয়ে এখনও চুপ করে আছেন।
সন্দেশলির (Sandeshkhali) 'ত্রাস' শেখ শাহজাহান (Sheikh Shahjahan) এখনও পলাতক। তাই শাহজাহান ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস করেছেন ওই মহিলারা। তাঁদের আরও দাবি, উত্তম সরদার (Uttam Sardar)-সহ শেখ শাহজাহানের অনুগামীরা দিনের পর দিন ধরে তাদের উপর অত্যাচার চালিয়েছে। তৃণমূলের লোকজন গভীর রাতেও সভার আড়ালে তাদের রিসর্ট, পার্টি অফিস বা স্কুল ভবনে ডেকে পাঠিয়েছে।
এই পাঁচ মহিলার মধ্যে কয়েকজন ইতিমধ্যেই রাজ্য মহিলা কমিশনে তাঁদের বিবৃতি দিয়েছেন। ১২ ফেব্রুয়ারি রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের (CV Ananda Bose) সন্দেশখালি সফরের সময়েও এঁরা নিজেদের অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কেন তাঁরা আগে পুলিশের কাছে যাননি জানতে চাইলে, মহিলারা জানান, পুলিশও অভিযুক্তদের আড়াল করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে। তাদের জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।
আরও পড়ুন- Digha: দিঘা যাচ্ছেন? এখবর আগে পড়ুন! পর্যটকদের জন্যই যুগান্তকারী এই উদ্যোগ
এদিকে, এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর থেকে উত্তম সরদার-সহ অন্যদের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা দায়ের করা হয়েছে। উত্তম সরদার তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সদস্য। গ্রেফতারের কয়েক ঘন্টা পরেই দল থেকে উত্তমকে সাসপেন্ড করা হয়।
বারাসত রেঞ্জের ডিআইজি সুমিত কুমার বলেন, “আমরা ডিআইজি সিআইডি (সোমা দাস মিত্র) এর নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল গঠন করেছি। সেই দলটি মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন বা শ্লীলতাহানির অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করছে।"
আরও পড়ুন- Central Force: আধাসেনায় মুড়ে যাবে বাংলা! কাশ্মীরের চেয়েও বিপুল সংখ্যায় কেন্দ্রীয় বাহিনী রাজ্যে
অন্যদিকে, বুধবার গভীর রাতে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ সন্দেশখালি ইস্যুতে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, “রাজ্য মহিলা কমিশনের তদন্তে এখনও পর্যন্ত মহিলাদের ধর্ষণের কোনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ডিআইজি সিআইডি ও জেলা পুলিশের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের মহিলা ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং টিম তদন্ত করছে। সম্প্রতি সন্দেশখালি সফরের পর জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তাঁরা বলেছেন যে তাদের তদন্তের সময় স্থানীয় নারীদের ধর্ষণের কোনও অভিযোগ তাঁরা পাননি। এটি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে যে প্রাপ্ত সমস্ত অভিযোগ এবং অভিযোগ যথাযথভাবে তদন্ত করা হবে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
যদিও এর আগে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস জানিয়েছেন, তিনি গ্রামবাসীদের কাছ থেকে পুরুষদের অবর্তমানে মহিলাদের উপর নির্যাতন ও যৌন হয়রানি ও অভিযুক্তদের পুলিশের সাথে হাত মিলিয়ে কাজ করার অভিযোগ পেয়েছেন। রাজ্যপাল সুপারিশ করেছেন যে তদন্তের জন্য একটি বিশেষ টাস্ক ফোর্স বা বিশেষ তদন্ত দল গঠন করা হোক এবং এব্যাপারে বিচার বিভাগীয় তদন্ত বিবেচনা করা হোক।
রাজ্যের সেচ মন্ত্রী এবং উত্তর ২৪ পরগণার তৃণমূল নেতা নেতা পার্থ ভৌমিক (Partha Bhowmick) ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, "যৌন নির্যাতনের অভিযোগগুলি বানোনো এবং ভিত্তিহীন"। আমরা আমাদের দলের নেতাদের একটি অংশের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ পেয়েছি। যারা এটা করেছে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। এবং যারা তাদের জমির জন্য টাকা পাননি, স্থানীয় পার্টি ইউনিট তাদের ক্ষতিপূরণ দেবে।"
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে এক মহিলা বলেছেন, “মিটিং এর অজুহাতে রাত ১০টায় আমাদের ডেকে আনাকে আপনি কী বলছেন? যখন খুশি আমাদের ছুঁয়েছে। যেখানে খুশি। আমাদের শাড়ি টানছে। আমার সঙ্গে অনেকবারই এটা হয়েছে। আমি একা নই।" ওই মহিলা আরও জানিয়েছেন অন্যদের মতো তিনিও তৃণমূলেরই সমর্থক। পঞ্চায়েতের অধীনে পরিচালিত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর (SHG) সদস্যও তিনি। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সভার নামে ওই মহিলাদের অসময়ে ডাকা হতো। ২০২০ সাল থেকেই এই ঘটনা চলছে বলে ওই মহিলার অভিযোগ।
এদিকে, সন্দশখালিতে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে ওই মহিলার বাড়ির কাছে একটি পুলিশ পিকেট তৈরি হয়েছে। সন্দেশখালি থানার কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। ‘উইমেন হেল্প ডেস্ক’ চিহ্নিত একটি ঘরের ভিতরে গন্ডগোল নিয়ন্ত্রণে পুলিশকর্মীদের বসে থাকতে দেখা গিয়েছে।
এলাকার বছর কুড়ির আর এক তরুণীও মারাত্মক অভিযোগ করেছেন। তিনি জানান স্বনির্ভর গোষ্ঠীর এক নেতার বাড়িতে তাঁদের ডেকে পাঠানো হতো। তরুণী বলেন, “ওরা আমাদের মিটিং-এর জন্য ডাকত। কখনও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মিটিং কখনও পার্টির মিটিং। আমাদের স্বামীদের ডাকত না। আমরা যখন সেখানে গিয়েছিলাম, সেখানে বলা হল জয়ের জন্য কাজ করতে হবে। আমি সহ কয়েকজন মহিলাকে পিছন ফিরে থাকতে বলা হয়েছিল। তারা আমার শাড়ি টানবে এবং আমাকে অনুপযুক্তভাবে স্পর্শ করবে। আমি চুপ করে রইলাম। কারণ আমি জানতাম প্রতিবাদ করলে কি হত।” ওই তরুণীর আরও অভিযোগ, তাঁদের পরিবারের এক বিঘা জমিও তৃণমূল নেতারা দখল করে মাছ চাষের ভেড়ি বানিয়েছে।