PM Modi's Economic Advisory Council Member Sanjeev Sanyal On Bengal And Bengali: পশ্চিমবঙ্গ ও বাঙালির 'অধঃপতন' নিয়ে মন্তব্য করে তৃণমূলের রোষে প্রধানমন্ত্রী মোদীর অর্থিক কাউন্সিলের সদস্য তথা অর্থনীতিবিদ সঞ্জীব সান্যাল। তাঁকে 'এ কালের মীরজাফর' বলে কটাক্ষ করেছে রাজ্যের শাসক দল।
এক পডকাস্ট সাক্ষাৎকারে অর্থনীতিবিদ সঞ্জীব সান্যালের দাবি, 'প্রথমবার যখন তিনি (জ্যোতি বসু) নির্বাচিত হন, ততদিনে মরিচঝাঁপি গণহত্যা হয়ে গিয়েছে। তাঁর আমলেই ব্যবসা বন্ধ হতে শুরু করেছিল। থাঁর শাসনে বিদ্যুৎ সরবরাহের অব্যবস্থাপনা হয়েছিল। আমার মনে আছে আমি যখন বড় হচ্ছি তখন আমার বাড়ির কাজ মূলত হত লণ্ঠন এবং মোমবাতির আলোয়। এটা আমি আমি দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছি বলে নয়, আমি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছি, কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় এটাই দস্তুর ছিল। কয়েক বছর আগেও যত্রতত্র জেনারেটর পাওয়া যেত।'
অর্থনীতিবিদ সান্যালের প্রশ্ন, 'প্রশ্ন হল, প্রশাসন পরিচালনায় দক্ষতার অভাব থাকা সত্ত্বেও কেন তারা তাঁকে বারবার ভোটে জেতাল বাঙালিরা ? কিছুটা অবশ্য নির্বাচনী অনিয়ম ছিল। বুথ ক্যাপচারিং একটি শিল্প আকারে রূপান্তরিত হয়েছিল। কিন্তু আমার মনে হয় এর বড় কারণ বাঙালির উচ্চাকাঙ্ক্ষার দারিদ্র্য।'
সমাজের দৈনতা বোঝাতে গিয়ে মোদীর আর্থিক কাউন্সিলের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য বলেছেন, 'যদি আপনার সমাজ আশা করে যে জীবনের সর্বোচ্চ রূপ হল একজন ইউনিয়ন নেতা বা আড্ডার বুদ্ধিজীবী তাহলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। আপনার আকাঙ্খা হচ্ছে যে- আপনি ধূমপান করে বসে আছেন এবং ওল্ড মংকে চুমুক দিচ্ছেন, কিছু করার পরিবর্তে বাকি বিশ্বের বিচার করছেন। এটাই যদি সমাজের আকাঙ্খা হয় অথবা যদি মৃণাল সেনের চলচ্চিত্রগুলি আপনার সমাজের আকাঙ্ক্ষা হয়, তবে আপনি যা পেয়েছেন সেই নিয়ে অভিযোগ করবেন না।'
সঞ্জীব সান্যালের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সরব তৃণমূল। এক্স হ্যান্ডেলে পোস্টে লেখা হয়েছে, 'বাংলাবিদ্বেষী বিজেপি নিজেদের সব মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আর্থিক উপদেষ্টা এবং আধুনিক দিনের মীরজাফরদের তালিকায় নতুন সংযোজন সঞ্জীব সান্যাল বাংলার গৌরবময় সংস্কৃতির প্রকাশ্যে সমালোচনা করে নিজেকেই বোকা বানিয়েছেন। বাংলা-বিরোধী বিজেপি নেতাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, তিনি আমাদের সাংস্কৃতিক আদর্শ মৃণাল সেন এবং আনন্দের শহর কলকাতার প্রভূত সংস্কৃতিকে উপহাস করেছেন।'
তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের কথায়, 'তাঁর জানা উচিত যে- বাংলা আজ যা ভাবে, ভারত আগামীকাল তা ভাবে। সঙ্গীত, সংস্কৃতি, শিক্ষা, অর্থনীতি, গবেষণা, বিজ্ঞানসহ সব ক্ষেত্রেই বাংলা এগিয়ে আছে। বাংলার প্রকল্পগুলি বিভিন্ন রাজ্যে অনুকরণ করা হয়। তাই বাংলাকে অপমান করার অধিকার তাঁর নেই। তিনি হয়তো সেই সময়ের সমালোচনা করতে পারেন যখন সিপিআই(এম) ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু তাঁর প্রধান লক্ষ্য ছিল বাঙালিদের অপমান করা।'
তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার তাঁর এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, 'প্রধানমন্ত্রীর এই বাঙালি অর্থনৈতিক উপদেষ্টাকে আমি চিনি। সারা জীবন দিল্লি আর বিদেশেই থেকেছেন। বাংলা অক্ষরও জানেন না। এঁর মতো কিছু বিশ্বাসঘাতক বাঙালি বিজেপি আর মোদীর ব্যক্তিগত বঙ্গবিরোধী বিষ আর আক্রোশকে উস্কে দিয়ে নিজেদের আখের গোছাচ্ছে। ছি!'
পাল্টা বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বলেছেন, 'বাংলাকে নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলছেন। বাংলায় যা চলছে সে কারণেই এসব হচ্ছে। এখন বাংলা মানেই দুর্নীতি… কিন্তু একই সঙ্গে এটাও সত্যি যে কারও মন্তব্য কাউকে কষ্ট দিলে সে এমনসব মন্তব্য থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারে।' একইসঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, 'কিন্তু বাংলায় এখন কী হচ্ছে? যারা কাট মানি নেয়, দুর্নীতিবাজ নেতারা, প্রতি সন্ধ্যায় কী ঘটছে সেগুলো খতিয়ে দেখুন।'