LGBTQ ইস্যুতে উত্তাল সংস্কৃত কলেজ। এই ইস্যুতে এক শিক্ষিকা তথা অধ্যাপিকা ড. মৌসুমী সেন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে ক্লাস চলাকালীন প্রকাশ্যে অপমানের অভিযোগ এনেছেন ইশিতা দাস নামে এক পড়ুয়া। ঘটনার প্রতিবাদে ইশিতার পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁর সহপাঠীরাও। ওই অধ্যাপিকাকে ক্ষমা চাইতে হবে। এই দাবিতে পড়ুয়ারা কলেজের মধ্যেই আন্দোলনে নেমেছেন। গোটা ঘটনাটি বিস্তারিত জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন ইশিতা।
Advertisment
তিনি লিখেছেন, 'আমি সংস্কৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ঈশিতা দাস। আজকে যে ঘটনাটির বিবরণ দিতে চলেছি তা খুবই স্পর্শকাতর। গত ১৯ জুলাই, বুধবার, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের পিজি স্তরের ক্লাস চলাকালীন আমারই বিভাগের একজন অধ্যাপিকা ড. মৌসুমী সেন ভট্টাচার্য LGBTQ+ কমিউনিটির উদ্দেশ্যে কু-রুচিকর মন্তব্য করেন। যা অত্যন্ত অপমানজনক আমার জন্য।'
ওই ছাত্রীর দাবি, অভিযুক্ত শিক্ষিকা বলেছেন যে, '১| Queer Theory একটি Sham অর্থাৎ এটি একটি 'ভান করা' বিষয়, যা জনসমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। ২| Queer Community-র মানুষরা মূলত Psychotic, Barren, Defective অর্থাৎ তিনি তাঁদেরকে মানুষ বলে মনে করেন না বা মনে করলেও তিনি ভাবেন তাঁরা যথেষ্ট ত্রুটিপূর্ণ। ৩| মার্কসবাদ পড়াতে গিয়ে তিনি 'পরিবার' বিষয়টি নিয়েও ভুল তথ্য দেন এবং এই ক্ষেত্রে তিনি বলেন Queer Community-র মানুষরা পরিবার ভাঙার কারণ। তাই কখনও তাঁরা পরিবার তৈরি করতে পারবেন না। ৪| Adoption এর বিষয়ে তাঁর মতামত হল, adoption এর ক্ষেত্রে যেহেতু যাঁকে দত্তক নেওয়া হচ্ছে, তার পূর্ব পরিচয় প্রায়ই অজ্ঞাত, তাই এটি সমাজের কাছে কখনও গ্রহণযোগ্য নয়। ৫| তিনি এ-ও বলেছেন যে LGBTQ+ বিষয়টি abnormal, তিনি কোনওভাবে এই ধরনের কমিউনিটিকে সমর্থন করেন না। ৬| সাম্প্রতিককালে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে PRIDE MONTH উদযাপন উপলক্ষে একটি চলচ্চিত্র দেখানো হয়, যার নাম 'GAY INDIA MATRIMONY', এটি দেবলিনা মজুমদারের নির্দেশনায় তৈরি। অধ্যাপিকা যেহেতু কমিউনিটিকে সমর্থন করেন না, তাই তিনি এই চলচ্চিত্রটিকেও যারপরনাই ছোট করেছেন এবং বলেছেন তিনি সেদিন ইচ্ছেকৃতভাবে উপস্থিত ছিলেন না। কারণ, তাঁর কাছে এগুলো অর্থহীন।'
ইশিতার দাবি, 'তাঁর এই ধরনের মন্তব্য শুনে আমার ক্লাসরুমের মধ্যেই একটি Panic Attack হয় এবং আমি শারীরিক, সর্বোপরি মানসিকভাবে humiliated অনুভব করায় সেই মুহূর্তেই ক্লাস থেকে বেরিয়ে যাই। পরে আমি আমার সহপাঠীদের থেকে জানতে পারি যে তিনি বলেছেন, আমি ইচ্ছাকৃতভাবে অভদ্র আচরণ করেছি এবং ওঁনাকে অপমান করেছি। শুধু তাই নয়, তিনি ক্লাসের বাকিদের কাছেও আমার বিষয় ভুল তথ্য দেন। তিনি বলেন, আমার বাবা নাকি তাঁকে ফোন করে নানান অভিযোগ জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে আমি ভুল পথে চলে যাচ্ছি। এছাড়াও QUEER COMMUNITY-কে তিনি ABCD ETC হিসেবে সম্বোধন করে তীব্রভাবে কটাক্ষও করেছেন।'
ইশিতার অভিযোগ, 'তিনি যে Homophobic এবং Queerphobic, তা আমার কাছে যথেষ্ট পরিষ্কার। কিন্তু, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এইভাবে Homophobia এবং QUEERPHOBIA ছড়ানোর জন্য আমি তাঁর বিরুদ্ধে তীব্র ধিক্কার জানাই। এছাড়াও তিনি নানান সময় নানান ভাবে ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের আর্থিক স্বচ্ছলতা নিয়ে নানান ধরনের অপমানজনক মন্তব্য পেশ করেছেন এবং জাতিগত ও বৈষম্যমূলক মতামত পোষণ করেছেন। আমি উক্ত ঘটনার বিরুদ্ধে এবং ওঁনার আচরণের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে অভিযোগ জানাই, যার কোন সদুত্তর আমি পাইনি।'
আবেদনে কাজ না-হওয়ায় তাঁরা আন্দোলনে নেমেছেন বলেই জানান ইশিতা। তিনি বলেন, 'তাই আজ ২৬ শে জুলাই আমি এবং আমার বন্ধুরা একত্রিত হয়ে ড. মৌসুমি সেন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে সক্রিয় আন্দোলন চালাই। আমাদের দাবি ছিল, তিনি যাতে সকলের সামনে ক্ষমা চান এবং কথা দেন যে তিনি এই ধরনের বিরূপ মন্তব্যের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট করবেন না এবং HOMOPHOBIA এবং QUEERPHOBIA ছড়াবেন না। এখানেই শেষ হয়নি, পরে আমরা জানতে পারি ওই অধ্যাপিকা ইংরেজি বিভাগের বাকি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উদ্দেশ্যে বিদ্বেষমূলক আচরণ করেছেন এবং বলেছেন যে তাঁরাই নাকি আমাদেরকে উসকেছেন এই ধরনের আন্দোলনের জন্য।'
আন্দোলনকারী ছাত্রীর বক্তব্য, 'বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় নব্য চিন্তার আধার। তিনি নিজেও আজকে জীবিত থাকলে মানুষের লিঙ্গগত পরিচয় নিয়ে এই ধরনের বিরূপ মন্তব্যের বিরোধিতা করতেন। আমি এবং আমার বন্ধুরা সকলেই চাই যত শীঘ্র সম্ভব এই সমস্যার সমাধান হোক। কারণ, আমরা মনে করি যে একজন মানুষের একমাত্র পরিচয় সে মানুষ। তাঁর লিঙ্গগত বা অন্য পরিচয় কী, তা নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই। সকলের অধিকার এখানে সমান।'
LGBTQ ইস্যুতে উত্তাল সংস্কৃত কলেজ, শিক্ষিকাকে ক্ষমা চাইতে হবে, দাবিতে আন্দোলনে পড়ুয়ারা
এর আগে কলেজে এই সংক্রান্ত একটি চলচ্চিত্র দেখানো হয়েছিল।
Follow Us
LGBTQ ইস্যুতে উত্তাল সংস্কৃত কলেজ। এই ইস্যুতে এক শিক্ষিকা তথা অধ্যাপিকা ড. মৌসুমী সেন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে ক্লাস চলাকালীন প্রকাশ্যে অপমানের অভিযোগ এনেছেন ইশিতা দাস নামে এক পড়ুয়া। ঘটনার প্রতিবাদে ইশিতার পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁর সহপাঠীরাও। ওই অধ্যাপিকাকে ক্ষমা চাইতে হবে। এই দাবিতে পড়ুয়ারা কলেজের মধ্যেই আন্দোলনে নেমেছেন। গোটা ঘটনাটি বিস্তারিত জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন ইশিতা।
তিনি লিখেছেন, 'আমি সংস্কৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ঈশিতা দাস। আজকে যে ঘটনাটির বিবরণ দিতে চলেছি তা খুবই স্পর্শকাতর। গত ১৯ জুলাই, বুধবার, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের পিজি স্তরের ক্লাস চলাকালীন আমারই বিভাগের একজন অধ্যাপিকা ড. মৌসুমী সেন ভট্টাচার্য LGBTQ+ কমিউনিটির উদ্দেশ্যে কু-রুচিকর মন্তব্য করেন। যা অত্যন্ত অপমানজনক আমার জন্য।'
ওই ছাত্রীর দাবি, অভিযুক্ত শিক্ষিকা বলেছেন যে, '১| Queer Theory একটি Sham অর্থাৎ এটি একটি 'ভান করা' বিষয়, যা জনসমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। ২| Queer Community-র মানুষরা মূলত Psychotic, Barren, Defective অর্থাৎ তিনি তাঁদেরকে মানুষ বলে মনে করেন না বা মনে করলেও তিনি ভাবেন তাঁরা যথেষ্ট ত্রুটিপূর্ণ। ৩| মার্কসবাদ পড়াতে গিয়ে তিনি 'পরিবার' বিষয়টি নিয়েও ভুল তথ্য দেন এবং এই ক্ষেত্রে তিনি বলেন Queer Community-র মানুষরা পরিবার ভাঙার কারণ। তাই কখনও তাঁরা পরিবার তৈরি করতে পারবেন না। ৪| Adoption এর বিষয়ে তাঁর মতামত হল, adoption এর ক্ষেত্রে যেহেতু যাঁকে দত্তক নেওয়া হচ্ছে, তার পূর্ব পরিচয় প্রায়ই অজ্ঞাত, তাই এটি সমাজের কাছে কখনও গ্রহণযোগ্য নয়। ৫| তিনি এ-ও বলেছেন যে LGBTQ+ বিষয়টি abnormal, তিনি কোনওভাবে এই ধরনের কমিউনিটিকে সমর্থন করেন না। ৬| সাম্প্রতিককালে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে PRIDE MONTH উদযাপন উপলক্ষে একটি চলচ্চিত্র দেখানো হয়, যার নাম 'GAY INDIA MATRIMONY', এটি দেবলিনা মজুমদারের নির্দেশনায় তৈরি। অধ্যাপিকা যেহেতু কমিউনিটিকে সমর্থন করেন না, তাই তিনি এই চলচ্চিত্রটিকেও যারপরনাই ছোট করেছেন এবং বলেছেন তিনি সেদিন ইচ্ছেকৃতভাবে উপস্থিত ছিলেন না। কারণ, তাঁর কাছে এগুলো অর্থহীন।'
ইশিতার দাবি, 'তাঁর এই ধরনের মন্তব্য শুনে আমার ক্লাসরুমের মধ্যেই একটি Panic Attack হয় এবং আমি শারীরিক, সর্বোপরি মানসিকভাবে humiliated অনুভব করায় সেই মুহূর্তেই ক্লাস থেকে বেরিয়ে যাই। পরে আমি আমার সহপাঠীদের থেকে জানতে পারি যে তিনি বলেছেন, আমি ইচ্ছাকৃতভাবে অভদ্র আচরণ করেছি এবং ওঁনাকে অপমান করেছি। শুধু তাই নয়, তিনি ক্লাসের বাকিদের কাছেও আমার বিষয় ভুল তথ্য দেন। তিনি বলেন, আমার বাবা নাকি তাঁকে ফোন করে নানান অভিযোগ জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে আমি ভুল পথে চলে যাচ্ছি। এছাড়াও QUEER COMMUNITY-কে তিনি ABCD ETC হিসেবে সম্বোধন করে তীব্রভাবে কটাক্ষও করেছেন।'
ইশিতার অভিযোগ, 'তিনি যে Homophobic এবং Queerphobic, তা আমার কাছে যথেষ্ট পরিষ্কার। কিন্তু, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এইভাবে Homophobia এবং QUEERPHOBIA ছড়ানোর জন্য আমি তাঁর বিরুদ্ধে তীব্র ধিক্কার জানাই। এছাড়াও তিনি নানান সময় নানান ভাবে ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের আর্থিক স্বচ্ছলতা নিয়ে নানান ধরনের অপমানজনক মন্তব্য পেশ করেছেন এবং জাতিগত ও বৈষম্যমূলক মতামত পোষণ করেছেন। আমি উক্ত ঘটনার বিরুদ্ধে এবং ওঁনার আচরণের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে অভিযোগ জানাই, যার কোন সদুত্তর আমি পাইনি।'
আবেদনে কাজ না-হওয়ায় তাঁরা আন্দোলনে নেমেছেন বলেই জানান ইশিতা। তিনি বলেন, 'তাই আজ ২৬ শে জুলাই আমি এবং আমার বন্ধুরা একত্রিত হয়ে ড. মৌসুমি সেন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে সক্রিয় আন্দোলন চালাই। আমাদের দাবি ছিল, তিনি যাতে সকলের সামনে ক্ষমা চান এবং কথা দেন যে তিনি এই ধরনের বিরূপ মন্তব্যের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট করবেন না এবং HOMOPHOBIA এবং QUEERPHOBIA ছড়াবেন না। এখানেই শেষ হয়নি, পরে আমরা জানতে পারি ওই অধ্যাপিকা ইংরেজি বিভাগের বাকি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উদ্দেশ্যে বিদ্বেষমূলক আচরণ করেছেন এবং বলেছেন যে তাঁরাই নাকি আমাদেরকে উসকেছেন এই ধরনের আন্দোলনের জন্য।'
আরও পড়ুন- ‘হাতি চলে বাজার, কুত্তা ভোকে হাজার’, অভিষেক বিদেশযাত্রা করতেই কড়া জবাব তৃণমূল মুখপাত্রের
আন্দোলনকারী ছাত্রীর বক্তব্য, 'বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় নব্য চিন্তার আধার। তিনি নিজেও আজকে জীবিত থাকলে মানুষের লিঙ্গগত পরিচয় নিয়ে এই ধরনের বিরূপ মন্তব্যের বিরোধিতা করতেন। আমি এবং আমার বন্ধুরা সকলেই চাই যত শীঘ্র সম্ভব এই সমস্যার সমাধান হোক। কারণ, আমরা মনে করি যে একজন মানুষের একমাত্র পরিচয় সে মানুষ। তাঁর লিঙ্গগত বা অন্য পরিচয় কী, তা নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই। সকলের অধিকার এখানে সমান।'