হিন্দু ধর্ম অনুসারে মা সরস্বতী হলেন বিদ্যার আরাধ্য দেবী। প্রায় প্রত্যেক সরস্বতী পুজো অনুষ্ঠিত হয়। পুজো উপলক্ষ্যে বাঙালি বাড়িতে ছোট থেকে বড় সকলেই মেতে ওঠেন। ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে সরস্বতী পুজো নিঃসন্দেহেই এক বিশেষ মাহাত্ম্য বহন করে। বাড়ির পাশাপাশি প্রতিটি শিক্ষা প্রাঙ্গনে মা সরস্বতীর আরাধনা করা হয়।
সরস্বতী পুজোর দিন বাচ্চাদের হাতেখড়ি দেওয়ানোর রীতি প্রচলিত আছে। হাতেখড়ি আক্ষরিক ভাবে দেবী সরস্বতীকে সাক্ষী রেখে, তাঁর আশীর্বাদ নিয়ে পড়াশুনার জগতে প্রবেশের আনুষ্ঠানিক সূচনা। এদিনই অক্ষরের সঙ্গে বাচ্চাদের হাতেখড়ির মাধ্যমে প্রথম পরিচয় পর্বটা হয়ে থাকে। মা, বাবা সেই সঙ্গে ঠাকুরমশাই শিশুর হাত ধরে শ্লেটের উপর তাকে খড়ি দিয়ে অ, আ ক, খ থেকে শুরু করে A B C D লেখা শেখান। এভাবেই শিক্ষার জগতে প্রথম আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রবেশ ঘটে বাচ্চাদের।
তবে আজকের ডিজিট্যাল দুনিয়ায় কোথায় যেন হারিয়ে যেতে বসেছে শ্লেট-চকের সেই ঐতিহ্য। বদলে বাচ্চাদের হাতেখড়ি দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ডিজিট্যাল শ্লেটের। বাজারে ছেয়ে গিয়েছে এই শ্লেটে। এক্ষেত্রে ভুল কিছু লিখলেও মোছামুছির ঝামেলা নেই। এক বোতামে ভ্যানিশ হয়ে যাবে লেখাটা। পাশাপাশি এই ধরণের গ্যাজেট বাচ্চাদের কাছেও বেশ আকর্ষনীয়। শ্লেট-চকের জায়গায় অনেকটাই বেড়েছে এই জাতীয় ডিজিট্যাল শ্লেটের বিক্রি।
ফ্লিলকার্ট থেকে শুরু করে খুচরো দোকান রমরমা ডিকিট্যাল শ্লেটের। এই বিষয়ে বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, “এই শ্লেট কাঠের শ্লেটের মতই কালো রঙের বোর্ড। চকের বদলে রয়েছে পেন্সিল। চারপাশ বাহারি রঙের বর্ডার দেওয়া। দেখতে বেশ নজরকাড়া। ট্যাবের সাইজের ৮ ইঞ্চির এই ডিজিট্যাল শ্লেটের দাম পড়ছে ৯০ থেকে ১৬০ টাকার মধ্যে। বাচ্চাদের মধ্যে এই শ্লেটের জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। বাবা-মায়েরাও ডিজিট্যাল শ্লেটেই সন্তানদের হাতেখড়ি দেওয়াচ্ছেন ফলে কাঠের শ্লেটের চাহিদা ও জোগান দুটোই কমেছে”।
কেন এত আকর্ষণ এই ডিজিট্যাল শ্লেটের প্রতি বাচ্চাদের? এই শ্লেটে কোন কিছু লিখলে তা মুছে ফেলার ঝক্কি প্রায় নেই। ফোনের ম্যাসেজের ডিলিট অপশনের মত এতেও রয়েছে ডিলিট অপশন। লেখা হয়ে গেলে এক ক্লিলেই সব লেখাটাই ভ্যানিশ হয়ে যাবে মুহূর্তেই। স্বভাবতই বাচ্চাদের ছোট থেকে যেভাব গ্যাজেটের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে তাতে শ্লেট-চকের বদলে যে স্মার্ট শ্লেটের চাহিদা-বিক্রি বাড়বে সেটাই স্বাভাবিক এমনটাই জানিয়েছেন শিক্ষিকা নন্দিতা ঘোষ। পাশাপাশি তিনি আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন, আগামী দিনে বাজার থেকে হয়তো বা উধাও হয়ে যাবে ঐতিহ্যের সেই কাঠের শ্লেট।