ক্রিকেট নিয়ে তরজার রেশ, কোচবিহারের রাস মেলায় বাংলাদেশি পণ্য বয়কটের ডাক!

খেলার আঁচ মেলায় যাতে না পরে তারই অবেদন করেছেন কোচবিহারের পুরপ্রধান, ভিন্নমত কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়কের।

খেলার আঁচ মেলায় যাতে না পরে তারই অবেদন করেছেন কোচবিহারের পুরপ্রধান, ভিন্নমত কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়কের।

IE Bangla Web Desk & Rajit Das
New Update
Sarcasm on the Indian cricket team many Indians request Bangladeshis not to stall at the Rush Mela in Cooch Behar , ক্রিকেট নিয়ে তরজার রেশ, কোচবিহারের রাস মেলায় বাংলাদেশি পণ্য বয়কটের ডাক!

রাস মেলা (ফাইল ছবি)

গত রবিবার ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের হারের পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় উল্লাসে ফেটে পড়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট ফ্যানদের একাংশ। ভারতের হার নিয়ে বাংলাদেশিদের এই 'মাত্রাছাড়া উচ্ছ্বাস' মেনে নিতে পারেননি ভারতীয় সমর্থকরা। এপার বাংলার অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবার ভারতে বাংলাদেশের পণ্য বয়কটের ডাক দিতে শুরু করেছেন অনেকে। আর তার জের এসে পড়েছে কোচবিহারের ঐতিহ্যবাহী রাসমেলা ও আলিপুরদুয়ারের ডুয়ার্স উৎসবে।

Advertisment

উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যতম বৃহৎ এই রাসমেলায় বাংলাদেশি পণ্যের বহু দোকান থাকে। সেই দোকানের পণ্য বয়কট করার কথা বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই প্রচুর পোস্ট হয়েছে। কলকাতাতেও বাংলাদেশ থেকে আসা বই এবং কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশের প্রকাশনা সংস্থাকে বয়কট করার ডাকও দেওয়া হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যদিও শান্তি বজায় রাখতে ও মেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে কোচবিহার পুরসভার তরফে এই ধরণের পোস্ট না করার জন্য অনুরোধ করেছেন চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।

২৬ নভেম্বর শুরু হচ্ছে ঠাকুর মদনমোহনের রাস উৎসব। ২৭ নভেম্বর থেকে শুরু হবে রাসমেলা। প্রতি বছর মেলায় রাজ্য ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন। বাংলাদেশের গুড়, দই, শাড়ি, নোনা ইলিশ কেনার জন্যও ভিড় হয়। এই পরিস্থিতিতে রাসমেলায় বাংলাদেশি পণ্য বয়কট সংক্রান্ত সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে।

এবারও এমজেএন স্টেডিয়ামের মাঠে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা দোকান দেবেন বলে পুরসভা সূত্রে খবর। পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষের বক্তব্য, 'খেলাকে কেন্দ্র করে কে কী লিখেছে, সেটা বিষয় নয়। বড় কথা হচ্ছে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে। এ দেশ থেকেও ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে ব্যবসা করতে যান। ফলে সেই সুসম্পর্ক যাতে বজায় থাকে, সে জন্য আমি সকলকে অনুরোধ করছি, যারা এই ধরনের পোস্ট করছেন, তাঁরা বিরত থাকুন।' তাঁর সংযোজন, 'বাংলাদেশ থেকে ইতিমধ্যেই ১৩ জন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী রাসমেলায় দোকান দিতে চলে এসেছেন। তাঁরা প্রতিবার যেখানে দোকান দেন এবারও তাঁদের সেখানেই জায়গা দেওয়া হবে।'

Advertisment

আর ডুয়ার্স উৎসব কমিটির অন্যতম সদস্য সৌরভ চক্রবর্তীর কথায়, 'উৎসবের আয়োজন নিয়ে আরও বৈঠক হওয়া বাকি। তারপরেই এসব নিয়ে মন্তব্য করব।'

তবে এই বয়কটের ডাকে ভুল কিছু দেখছেন না কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে। তাঁর বক্তব্য, 'যে ভারতের জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হল, সেই ভারতের হারে বাংলাদেশে যেভাবে অঙ্গভঙ্গি, আচরণ, উল্লাস করা হয়েছে, সেই জায়গায় যাঁরা রাসমেলায় বাংলাদেশি পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছেন, তাঁরা দেশপ্রেম থেকেই এই ধরণের ডাক দিয়েছে। এক্ষেত্রে আমার অন্তত কিছু খারাপ বলে মনে হয়নি।'

সোশ্যাল মিডিয়ায় মানিক চাঁদ নামে একজন লিখেছেন, 'কোচবিহার রাসমেলায় যে সমস্ত বাংলাদেশের স্টল দেওয়া হয়, তা অবিলম্বে বয়কটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। সবার ওপরে দেশ। সেই দেশের নামে অপমান, একজন ভারতমাতার সন্তান হয়ে তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি।' ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ছাড়াও বিভিন্ন গ্রুপ থেকে এই ধরনের প্রচুর পোস্টে সোশ্যাল মিডিয়া ছয়লাপ হয়ে রয়েছে। ক্রমশ সেই সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

এদিকে পাহাড়ের হোটেলেও বাংলাদেশিদের ঘর না দেওয়ার গুজব ছড়িয়েছে। জানা গিয়েছে, বিশ্বকাপে ভারতের হারে বাংলাদেশী সমর্থকদের উল্লাস থেকে দার্জিলিংয়ের কোনও এক হোটেল ব্যবসায়ী সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাদেশীদের রুম না দেওয়ার কথা পোস্ট করেছিলেন। সেই বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ায় পাহাড়ে বাংলাদেশি পর্যটকদের মধ্যে।

এই বিষয়ে দার্জিলিং হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক বিজয় কুমার খান্না জানান, এই মুহূর্তে পাহাড়ে প্রচুর বাংলাদেশি পর্যটক রয়েছেন। বাংলাদেশিদের হোটেল না দেওয়ার কোনও কারণ থাকতে পারেনা। খেলার পর কোন বাংলাদেশি সোশ্যাল মিডিয়ায় কী পোস্ট করল তার সঙ্গে সে দেশের বাসিন্দাদের হোটেল না দেওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। আর অ্যাসোসিয়েশনগত ভাবে এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। পাহাড়ের কোনও এক হোটেল মালিক বাংলাদেশীদের ঘর না দেওয়ার সিদ্ধান্ত যদি নিয়ে থাকেন, তবে সেটা তাঁদের বিষয়। সেকানে হস্তক্ষেপ করবে না হোটেল মালিক সংগঠন।

Cooch Behar