গ্রাম্য পরিবেশে বেড়ে ওঠে। একতারা, বাউল গান এসবের সঙ্গে তাঁর সখ্যতাটা ছোটবেলা থেকেই। সময় পেলেই ছোট একতারাটা নিজের মত করে বাজাতেন। মাঝে মাঝে ছিঁড়ে যেত একতারার তার। আর তা জুড়ে ফের বাজাতেন তিনি। কিন্তু শেষমেশ একদিন ছিঁড়ে যাওয়ায় তার আর জোড়া দেওয়ার মত অবস্থা না থাকায় জোড়েনি সেই ছেঁড়া তার। কিন্তু একতারার সুর বারে বারে দোলা দিয়েছে মনে আঙিনায়। শেষমেশ ঠোঁট ও আঙুলের সাহায্যেই একতারার সুর ফুটিয়ে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে নাম তুললেন নানুরের কুমিরা গ্রামের সৌরভ ঘোষ।
Advertisment
সৌরভের এই সাফল্যে খুশি খুশি মা-বাবা থেকে পরিবার-পরিজনরা। ইংরাজি সাহিত্যের এই শিক্ষক মনে করেন সকলের মধ্যেই রয়েছে প্রতিভা। রয়েছে বিশেষ কিছু ক্ষমতা, দরকার শুধুমাত্র সঠিক অনুশীলন। তাতেই সাফল্য আসতে বাধ্য। ইতিমধ্যেই মিলেছে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসের শংসাপত্রই। স্বাভাবিক ভাবেই প্রত্যন্ত গ্রামে এখন খুশির হাওয়া।
ছোট থেকেই সংগীতের প্রতি অগাধ ভালবাসা। দাদুর থেকেই গান শেখার তালিম। গ্রামের বাউল গানের আর একতারার সুর যেন তাঁকে নেশা ধরাত। পরবর্তীতে একতারার প্রতি আসক্তি। কাজের ফাঁকে একটু সময় পেলেই সুর তুলতেন ছোট সেই একতারায়। কতবার ছিঁড়ে গিয়েছে একতারার তার। তা ফের জোড়া লাগিয়ে নতুন করে বেঁধেছেন সুর। কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন একতারাটা বাজাতে গিয়েই ঘটে বিপত্তি, এমন ভাবে সেই তার ছিঁড়ে যায় যা জোড়া দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে সৌরভের পক্ষে। কিন্তু একতারার সেই সুর যেন তাড়া করে বেড়াতে থাকে শিল্পীকে।
অবশেষে মাথায় আসে এক দারুণ আইডিয়া। মুখে যদি কোনভাবে ফুটিয়ে তোলা যায় এই একই সুর। এমন ভাবনা থেকে ঠোঁট আর আঙুলকে কাজে লাগিয়ে একতারা সুর তুলে ঝড় তোলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। সৌরভের কথায়, ‘সেদিন নিজের সেই সুর আমাকে অবাক করেছিল। আমি বেশ কয়েকটি ভিডিও বানিয়ে সেগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করি। মানুষজন নানান প্রতিক্রিয়া দিতে থাকেন। সকলের মন ছুঁয়ে যায় একতারার সেই সুর। অনেকে আমাকে আরও বেশি অনুশীলন চালানোর পরামর্শ দেন। সেই থেকেই চলে মুখেই একতারার সুর ফোটানোর অবিরাম লড়াই। অবশেষে এক বন্ধুর কথায় আমি সেই ভিডিও আপলোড করি। তাতেই আসে সাফল্য”।
একতারার সুর সৃষ্টি করেই থেমে থাকেন নি সৌরভ। নিয়মিত সঙ্গীত চর্চাও করেন তিনি। এখন এই সাফল্যের পরে নিজে শিক্ষকতার পাশাপাশি কোন বাংলা ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েও কাজ করতে চান সৌরভ। সেরার সেরা স্বীকৃতি ছিনিয়ে নিয়ে সৌরভের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে।