অভিনেত্রী সায়ন্তিকা ব্যানার্জীর উপস্থিতিত থাকা কালীন বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠান মঞ্চের ২০০ মিটার দূরে ব্লক সভাপতি পরিবর্তনের দাবিতে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের, টানটান উত্তেজনা এলাকায়, উত্তেজনা এড়াতে মোতায়েন বিশাল পুলিশ বাহিনী, গোষ্ঠী কোন্দল নিয়ে অস্বস্তিতে শাসকদল, খোঁচা বিজেপির
পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে ফের প্রকাশ্যে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। ব্লক সভাপতি পরিবর্তনের দাবিতে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দলেরই কর্মী সমর্থকদের। শুক্রবার বিকেলে মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের অন্তর্গত চাঁচল বিধানসভার চারটি অঞ্চলের পুজো কমিটিগুলিকে নিয়ে ছিল বিজয়া সম্মেলনী ও শারদ সম্মান জ্ঞাপন অনুষ্ঠান হয় তুলসীহাটা বিবেকানন্দ শিশু মন্দিরে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চাঁচল বিধানসভার বিধায়ক নিহাররঞ্জন ঘোষ, হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভার বিধায়ক তাজমুল হোসেন, হরিশ্চন্দ্রপুর ১(বি) ব্লক সভাপতি মানিক দাস, তৃণমূলের১(বি) ব্লকের সভাপতি সুজাতা সাহা, আব্বাস আলি, চন্দ্রশেখর সাহা সহ অন্যান্য ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব বৃন্দ। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী সায়ন্তিকা ব্যানার্জি। পঞ্চায়েত ভোটের আগে বিজয় সম্মেলনী অনুষ্ঠানে অভিনেত্রীকে এনে চমক দেওয়ার চেষ্টা করেছিল শাসকদল। কিন্তু অভিনেত্রীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান মঞ্চের অনতিঁদুরে বিক্ষোভ দেখালো কর্মী সমর্থকরা।
অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে ঠিক ২০০ মিটার দূরে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা। তাদের দাবি ব্লক সভাপতি পরিবর্তন করতে হবে। মানিক দাসকে ব্লক সভাপতি হিসেবে তারা মানবেন না। চাঁচল বিধানসভার অন্তর্গত চারটি অঞ্চলের মধ্যে থেকে কাউকে ব্লক সভাপতি করতে হবে। টায়ার জ্বালিয়ে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা। অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে একদম কাছেই এই বিক্ষোভের জেরে ছড়ায় উত্তেজনা। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মোতায়েন ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন হরিশচন্দ্রপুর থানার আইসি দেওদূত গজমের।
চাঁচল বিধানসভার অন্তর্গত চারটি অঞ্চলের তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের একাংশ এই বিক্ষোভ দেখান। তাদের মতে যেহেতু হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লককে সাংগঠনিক ভাবে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তাই তারা হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভার কাউকে চাঁচল বিধানসভা এলাকায় সভাপতি হিসেবে মেনে নেবেন না। যদিও এই প্রথম নয়, হরিশচন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক সাংগঠনিক ভাবে দুই ভাগে ভাগ করার পর এর আগেও প্রকাশ্যে এসেছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ। চাঁচল বিধানসভার বিধায়ক নিহার রঞ্জন ঘোষের অনুগামী এবং হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভার বিধায়ক তাজমুল হোসেনের অনুগামীদের মধ্যে বারবার দেখা গেছে মতপার্থক্য। যদিও আজ দুই বিধায়ক একই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। আর সেই মঞ্চের অনতিদূরে কর্মী সমর্থকদের এই বিক্ষোভের ফলে স্বাভাবিক ভাবে অস্বস্তিতে পড়েছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।
চলতি বছর তৃণমূলের ব্লক কমিটি ঘোষণাকে হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক কে সাংগঠনিক ভাবে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। চাঁচল বিধানসভার অন্তর্গত তুলসীহাট্টা অঞ্চল, রশিদাবাদ অঞ্চল, কুশিদা অঞ্চল, বরুই অঞ্চল এই চারটি অঞ্চলকে নিয়ে একটি ভাগ এবং হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভার হরিশ্চন্দ্রপুর অঞ্চল, ভিঙ্গল অঞ্চল, মহেন্দ্রপুর অঞ্চল এই তিনটি অঞ্চলকে নিয়ে একটি ভাগ। হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেসের পূর্বতন সভাপতি মানিক দাস চাঁচল বিধানসভার অন্তর্গত চারটি অঞ্চলের সভাপতি দায়িত্ব পান। তবে সাংগঠনিক ভাবে এই ভাগের পর থেকেই বারবার প্রকাশ্যে আসছে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। স্বাভাবিক ভাবে পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূলের জন্য যা অস্বস্তিকর।
রশিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে আসা বিক্ষোভকারী তৃণমূল কর্মী আনোয়ারুল হক বলেন, 'আমরা মমতা ব্যানার্জির আদর্শে দলটা করি। যখন আমাদের ব্লককে সাংগঠনিক ভাবে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে তখন আমরা কেন হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভার কাউকে সভাপতি হিসেবে মেনে নেব। এর ফলে আমাদের কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে। আমাদের বিধানসভার চারটি অঞ্চলের মধ্যে থেকে কাউকে সভাপতি করতে হবে।'
যদিও তৃণমূল ব্লক ১(বি) সভাপতি মানিক দাস এই নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি।
হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভার বিধায়ক কথা রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী তাজমুল হোসেন বলেন, 'বিজয়া সম্মেলনের অনুষ্ঠান ছিল। বিশিষ্ট অভিনেত্রী সায়ন্তিকা ব্যানার্জি উপস্থিত ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে প্রতিটা ব্লকেই হচ্ছে এই অনুষ্ঠান। এই ধরনের কোন বিক্ষোভ হয়নি।'
চাঁচল বিধানসভার বিধায়ক নিহার রঞ্জন ঘোষ বলেন, 'এবার আমাদের দূর্গা পূজার বিশ্বের সেরা স্বীকৃতি পেয়েছে। সেই উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হচ্ছে। আজ বিজয়া সম্মেলনি উপলক্ষে প্রতিটি পুজো কমিটি এবং ক্লাবকে সম্বর্ধনা দেওয়া হলো। যারা এই ধরনের বিক্ষোভ করেছে তারা বিরোধী দলের, তৃণমূলের কেউ না।'
উত্তর মালদা জেলা বিজেপির সাংগঠনিক সম্পাদক রূপেশ আগরওয়াল বলেন, 'দলের মধ্যে কোন শিক্ষা নেই কোন নিয়ম নীতি নেই। যত গুলো কর্মী ততগুলো লবি। মমতা ব্যানার্জির নিজে দল সামলাতে পারছেন না। রাজ্যে একমাত্র এই ব্লকে দুটো সভাপতি। এদের অবস্থা এরকমই হবে।'