Earth Day 2019: মিড ডে মিল থেকে তৈরি হচ্ছে জৈব সার, চলছে ওদের সবুজের অভিযান

বইয়ের পাতা থেকেই ওরা শিখেছে আবর্জনা কী ভাবে রিসাইকেল করে পরিবেশের কাজে লাগানো যায়। বিশ্ব বসুন্ধরা দিবসে রইল কিছু সবুজ পাগল কচিকাঁচাদের গল্প।

বইয়ের পাতা থেকেই ওরা শিখেছে আবর্জনা কী ভাবে রিসাইকেল করে পরিবেশের কাজে লাগানো যায়। বিশ্ব বসুন্ধরা দিবসে রইল কিছু সবুজ পাগল কচিকাঁচাদের গল্প।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার প্রত্যন্ত সাগর ব্লক। সেখানকার চৌরঙ্গী প্রাইমারি স্কুল। সচরাচর খবরে আসে না। তবে স্কুলের কচিকাঁচারা মিলে যা করেছে, শিরোনামে আসার মত। মিড ডে মিলের উচ্ছিষ্ট থেকে জৈব সার তৈরি করে স্কুলের মাঠেই বেশ কিছু স্থানীয় প্রজাতির ধান চাষ করছে খুদে পড়ুয়ারা। বিশ্ব বসুন্ধরা দিবসে সেই সব খুদে বিস্ময়দের কথাই শোনা যাক একটু।

Advertisment

সুন্দরবন অঞ্চলে আগে বেশ কিছু দেশি ধান চাষ হতো, যেগুলো এখন আর হয়না। দুপুরের মিড ডে মিলের উচ্ছিষ্ট থেকে জৈব সার তৈরি করে তালদি, মুগাই, হ্যাংরা, গোসাবা, কেরল সুন্দরী ধান চাষে মেতেছে চৌরঙ্গী স্কুলের বাচ্চাগুলো। না, এ সব শিখতে শহরে এসে 'স্পেশাল ক্লাস' করতে হয়নি দিনের পর দিন। বইয়ের পাতা থেকেই ওরা শিখেছে আবর্জনা কী ভাবে রিসাইকেল করে পরিবেশের কাজে লাগানো যায়। শুধু পাঠক্রম সম্পূর্ণ করতেই যেন ছোট ছোট পড়ুয়ারা সোম থেকে শনি স্কুলে না আসে, তা সুনিশ্চিত করেছেন প্রধানশিক্ষক তাপস মণ্ডল। সবুজের অভিযানে নিয়মিত তাঁর কচিকাঁচাদের উৎসাহ দিচ্ছেন তাপসবাবু।

আরও পড়ুন, ‘সবুজ বনে’ গড়ে উঠছে জীবন্ত এক মিউজিয়াম

Advertisment

কোন চারার জন্য কোন সার লাগবে, কোন আবর্জনা থেকে রিসাইকেল হবে কী, তা তদারকি করছেন পরিবেশবিদ ডঃ অমলেশ মিশ্র। অমলেশ বাবু জানালেন, "বাচ্চারা যা পড়ছে, তা যেন ব্যবহারিক জীবনে কাজে লাগাতে পারে তারা, এটাই আমাদের উদ্দেশ্য। সুন্দরবন অঞ্চলে এককালে এমন অনেক প্রকারের ধান হত, যেগুলো আজ আর হয়না। এখন বাজার তো মুনাফার কথা ভেবে চাষ করে। কিন্তু সুন্দরবনের জলবায়ু, মাটি তো বাংলার বাকি অংশের থেকে আলাদা। শুধুমাত্র জলা ভূমিতে লবণাক্ত মাটিতে কিছু স্থানীয় ধান চাষ হত, কিছু বছর আগেও। আবার সেই ধানের বীজ রোয়া হয়েছে স্কুল চত্বরে।

publive-image মানুষের মাঝে দেওয়াল গড়তে শেখেনি ওরা, তার পরিবর্তে গড়ে তুলেছে সবুজ পাঁচিল

নন  বায়োডিগ্রেডেবল অর্থাৎ মাটিতে মিশে যায় না, প্লাস্টিক সহ এমন বর্জ্য ফেলার জন্য লাল রঙের ডাস্টবিন, কাগজ ফেলার জন্য সবুজ রঙের ডাস্টবিন, আর পচন শীল ও মিড ডে মিলে র বর্জ্য ফেলার জন্য হলুদ রঙের ডাস্টবিনব্যবহার করে স্কুল পড়ুয়ারা। পড়ুয়াদের ব্যবহার করার পর ফেলে দেওয়া জিনিস পত্র থেকে বর্জ্য গুলি কে কাজে লাগিয়ে পুর্নব্যবহারযোগ্য জিনিসপত্র তৈরী করছে শিশুরাই।

২০১৪ সাল থেকেই প্রধানশিক্ষক মশাইয়ের ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্কুলে শুরু হয় অরণ্য সপ্তাহ উদযাপন। তারপর একটু একটু করে সরকারি-বেসরকারি এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে পড়ুয়া এবং পড়ুয়াদের অভিভাবকদের বোঝানো শুরু হল প্লাস্টিক মুক্ত পরিবেশের প্রয়োজনীয়তা। তাপসবাবুর বিশ্বাস, ১৫০ জন ছেলে মেয়ের থেকে সচেতনতা ছড়াবে ওদের বাবা মায়েদের মধ্যে, সেখান থেকে প্রতিবেশীদের মধ্যে।

কথা হল চতুর্থ শ্রেণির আয়ুষ, রুমাইয়া, শ্রেয়াদের সঙ্গে। ইট কাঠ পাথরের জঞ্জালের শহরে বড় হওয়া একই বয়সি আর পাঁচটা বাচ্চার মতো সায়েন্স কিমবা ম্যাথস ট্যালেন্ট সার্চের মেধা তালিকায় হয়তো এদের নাম থাকে না। বছর শেষে পরীক্ষার নম্বর যোগ হবে না জেনেও ওরা খেয়াল রাখে আবর্জনা, সব্জির খোসা কোথায় ফেলা হল, কী ভাবে কাজে লাগানো যায় সে সব কে।

publive-image

ছাত্র ছাত্রীদের নামেই রাখা হয় চারা গাছেদের নাম...সোমাশ্রী গাছ, নবনিতা গাছ... নিজেদের কচি কচি অস্তিত্বের সঙ্গে যাতে মিশে যায় সবুজ চারাগুলোর নাম। ইটের ওপর ইট গেঁথে মানুষের মাঝে দেওয়াল তুলতে শেখেনি ওরা। শুধু জেনেছে পাঁচিল যদি তুলতেই হয়, তা যেন হয় সবুজ পাঁচিল।

আয়ুষ মুখার্জি এবং রুমাইয়া খাতুনকে জিগ্যেস করলে আর সবার মতোই ওরাও বলে ডাক্তার অথবা শিক্ষক হতে চায়। তবে এইসব চাওয়া ছাপিয়ে ওরা চায় দূষণমুক্ত একটা পৃথিবী। ওদের স্বপ্ন সত্যি হোক।