Advertisment

Self-Help Group: সন্দেশখালির পথেই বাংলার এ তল্লাটের মহিলারাও গর্জাচ্ছেন! ভয়ঙ্কর সব অভিযোগ

Burdwan: নারী নির্যাতন নয়, এখানে অন্যসব ভয়ঙ্কর অভিযোগে নিশানায় শাসক দলের নেতা থেকে প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিরা।

IE Bangla Web Desk এবং Rajit Das
New Update
Self-Help Group Scam Burdwan Jamalpur TMC BJP , স্বনির্ভর গোষ্ঠী দুর্নীতি বর্ধমান জামালপুর তৃণমূল বিজেপি

West Bengal: কোটি কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎ ও নানা অনিয়ম বিষয়ে লেখা পোস্টার হাতে নিয়ে আন্দোলনকারীরা।

Allegations Of Corruption In Self-Help Groups: অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে লাড়ইয়ের পথ দেখিয়েছে সন্দেশখালির মহিলারা। ঠিক সেই পথেই এবার আর্থিক দুর্নীতি ও জচ্চুরির বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর বহু মহিলা। সন্দেশখালির মতই তাদেরও নিশানায় শাসক দলের নেতা ও প্রশাসনের কর্তারা। শুধু গর্জে ওঠাই নয়,দুর্নীতি,
জচ্চুরি ও বঞ্চনার কথা লেখা পোস্টার হাতে নিয়ে পথেও নেমে বৃহত্ত্বর লড়াইয়ে ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। আর তাতেই লোকসভা ভোটের মুখে সিঁদুরে মেঘ দখছে শাসক দলের নেতৃত্ব।

Advertisment

স্বনির্ভর গোষ্ঠী (Self Help Group) তৈরিতে ‘দেশের সেরা’ স্বীকৃতি পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। ন্যাশনাল রুরাল লাইভলিহুড মিশনের বিচারে বাংলার এই শিরোপা পাওয়ার কথা গর্বের সঙ্গে অনেক আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন। আর এখন লোকসভা ভোটের মুখে জামালপুরের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর আনা অভিযোগে সেই গর্বই যেন চুরমার হতে বসেছে।

একাধিক স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের আনা অভিযোগ যথেষ্ট চমকে দেওয়ার মতোই। আন্দোলনকারীরা প্রায় দু’বছর ধরে ব্লক প্রশাসন, ব্লক তৃণমূলের সভাপতি,পঞ্চায়েতের প্রধান,উপ-প্রধান সহ লেডি গ্রাম সেবিকার (lGS) বিরুদ্ধে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ও অনিয়মে মদত দেওয়ার অভিযোগ জানিয়েছেন। ন্যায় বিচার চেয়ে তারা জেলা প্রশাসনের নানা মহলে বহু আবেদন নিবেদনও করেছেন। আন্দেলনে অংশ নেওয়া স্বনির্ভর গোষ্ঠীর একজন বলেন, 'সুবিচার পাওয়ার জন্যে শুধু দিন গুনে যাওয়া আর মানতে পারছি না। তাই বিচার পেতে সন্দেশখালির মহিলাদের মতই আন্দোলনে নামার পথ বেছে নিচ্ছি।'

কোটি কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎ ও নানা অনিয়ম বিষয়ে লেখা পোস্টার হাতে নিয়ে আন্দোলনকারীরা শুরুতে জামালপুরের পুলমাথা এলাকায় জড়ো হন। সেখান থেকে মিছিল করে এসে তারা পৌঁছান জামালপুর থানার কাছে সিধু কানুর মূর্তির সামনে। সেখানে বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নেত্রীরা তাঁদের বক্তব্যের মাধ্যমে ব্লকের শাসক দলের নেতা থেকে ব্লক প্রশাসনের কর্তা ও লেডি গ্রাম সেবিকার কার্যত তুলোধনা করেন।

Advertisment

আরও পড়ুন- Shams Iqbal TMC: গার্ডেনরিচ কাণ্ডের ধৃত প্রোমোটারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা, বিতর্কে তৃণমূল কাউন্সিলর শামস ইকবাল

আন্দোলনের অন্যতম মুখ মীরাতাজ বেগম বলেন, 'স্বনির্ভর গোষ্ঠী খোলার মূল উদ্দেশ্যটাই এখন কার্যত ব্যর্থ। এখন শাসক দলের নেতাদের কাছে অর্থ লুটের মাধ্যম হয়ে উঠেছে মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি। মীরাতাজ দাবি করেন, তিনি হলেন স্বনির্ভর গোষ্ঠী নারী চেতনা মহিলা মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির আসল নেত্রী। কিন্তু গোষ্ঠীর অর্থ লুটের পথ সুগম করতে ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মেহেমুদ খাঁন অন্য একজনকে নারী চেতনা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নেত্রী সাজিয়েছেন। একই রকম অন্যায় কাজ আরও বেশ কয়েকটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গেও করা হয়েছে। প্রশাসন এসবের কোন বিহিত না করায় জামালপুরের বেশ কয়েকটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাজ কর্ম লাটে উঠেছে। ওই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর অফিসেও তাই এখন তালা ঝুলছে।'

মীরাতাজের আরও অভিযোগ, 'স্কুল ড্রেস তৈরির নামে কোটি কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে জামালপুরে। সেলাইয়ের ট্রেনিং সম্পূর্ণ করা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের দিয়ে স্কুল ড্রেস তৈরি করানোর নির্দেশ থাকলেও তা মানা হয়নি। সুতির বদলে টেরিকটের নিম্নমানের স্কুল ড্রেস ঘুর পথে আমদানি করে সেগুলি স্কুলে স্কুলে দেওয়া হয়েছে।

বৃক্ষ পাট্টা পেয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা গাছ পরিচর্যা করে বড় করে। কিন্তু পাট্টা প্রাপকদের বঞ্চিত করেই সেই গাছ শাসক দল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্তা ও নেতারা বিক্রী করে দিয়েছেন। এমনকী সরকারী ভাবে দেওয়া ছাগল,হাঁস,মুরগি বিলি বন্টনেও চরম অনিয়ম হয়ে চলেছে। এইসব অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সহ জেলা ও ব্লক প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানো হয়। তারপর থেকে বছরের পর বছর ধরে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরা ন্যায় বিচারের অপেক্ষায় থাকলেও ন্যায় বিচার মেলে না। তাই সন্দেশখালির মহিলাদের কায়দাতেই আন্দোলনে নেমে পড়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।'

শুধু মীরাতাজ বেগম একাই নয়। স্বনির্ভর গোষ্ঠী নিয়ে এমন আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আরও অনেক গোষ্ঠীর মহিলারাও করেছেন। জামালপুর ২ এবং আঝাপুরগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা বিস্ফোরক দাবি করেছেন। জামালপুর ২ পঞ্চায়েতের শ্রীমা মহিলা বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্যা দীপা বিশ্বাস বলেন, 'স্বনির্ভর গোষ্ঠী নিয়ে চুড়ান্ত অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ চলছে। প্রশাসনের যেসব আধিকারিকের উপর স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাজকর্ম দেখভালের দায়িত্ব রয়েছে, তারাই অনিয়মে মদত যোগাচ্ছে ।তাদের ঘুস না দিলে কোন গোষ্ঠী কাজ পায় না। আবার ঘুস দিলেও যে কাজ মিলবে এমন নিশ্চয়তাও নেই। গোষ্ঠীর মহিলাদের প্রশিক্ষণের নামেও লক্ষ লক্ষ টাকা দুর্নীতি হয়ে চলেছে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ভোট হওয়ার সরকারি নিয়ম থাকলেও তা হচ্ছে না। অনিয়ম জারি রাখতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর পরিচালন সমিতির ভোট বছরের পর বছর ধরে আটকে রাখা হয়েছে।'

অন্যদিকে আঝাপুর পঞ্চায়েতের নারীশক্তি সংঘ মহিলা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্যা উমা দাস বলেন, 'বছরের পর বছর ধরে আঝাপুরের বাসিন্দা ঝর্ণা বেগম একাই স্কুল ড্রেসে দেবার অর্ডার পেয়ে যাচ্ছেন। এর পিছনেও রয়েছে বড় সড় আর্থিক কেলেঙ্কারি। তা জেনেও ব্লকের শাসক দলের প্রভাবশালী নেতারা ঝর্ণা বেগমকে মদত যুগিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন সঠিক তদন্ত করলে এই দুর্নীতিতে জড়িত অনেক রাঘববোয়ালের মুখোশ খুলে যেত। কিন্তু সেটা প্রশাসন করেনি। তাই তাঁরা আন্দোলনে নেমেছেন আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে বলে উমা দাস জানিয়েছেন।'

স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের আনা অভিযোগের বিষয়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য জামালপুর ব্লকের বিডিও পার্থসারথী দে-কে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে ফোন কেটে দেন। তবে এনিয়ে জামালপুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মেহেমুদ খাঁন বলেন, 'মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাজকর্ম নিয়ে খবরদারি করার কোন ক্ষমতা প্রশাসন আমায় দেয়নি। কাজেই গোষ্ঠীর কাজকর্ম নিয়ে আমার হস্তক্ষেপ করারও কোন জায়গা নেই। আসলে সিপিএম ও বিজেপির কাছ থেকে মদত পেয়ে জামালপুরের কিছু স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য তৃণমূলের বদনাম করতে এখন পথে নেমেছে। এদের আনা সব অভিযোগই মিথ্যা।'

তৃণমূল নেতার এহেন বক্তব্যের পাল্টা জামালপুর নিবাসী জেলা বিজেপি নেতা জীতেন্দ্রনাথ ডকাল বলেন, 'বহুদিন ধরেই তৃণমূলের নেতারা স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে সামনে রেখে লুটেপুটে খাচ্ছে। তা নিয়ে প্রায় দু’বছর ধরে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। তার পরেও ন্যায় বিচার না পেয়ে গোষ্ঠীর মহিলারা যেই সন্দেশখালির মহিলাদের কায়দায় আন্দেলনে নেমেছে ওমনি তাদের বিজেপির লোক বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে এসব করে কিছু লাভ হবে না। দিন যত এগুবে শাসক দলের নেতাদের চুরি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জামালপুরের মানুষ আরও গর্জে উঠবে।'

tmc bjp East Burdwan burdwan Sandeshkhali
Advertisment