Inspirational story: তীব্র গরমে যখন অস্থির গোটা বাংলা। এক ফোঁটা বৃষ্টির অপেক্ষায় যখন বাংলার মানুষ আকাশপানে চেয়ে রয়েছেন ঠিক তখনই তীব্র দাবদাহকে দূরে সরিয়ে সংসার চালাতে ট্রেনে শাড়ি, কুর্তি ফেরি করে বেড়াচ্ছেন বাঁকুড়ার বৃষ্টি পাল। বৃষ্টির এই লড়াইকাহিনী ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোড়ন ফেলেছে।
স্বামী চাকরি করতেন একটি বেসরকারি সংস্থায়। হঠাৎ করেই স্বামীর চাকরি চলে যাওয়ার পরই সংসারের হাল ধরতে ট্রেনে শাড়ি, কুর্তি, নাইটি ফেরি করতে শুরু করেন ভূগোলে মাস্টার্স, বি.এড করা এই মেয়েটা। প্রথম দিকে লড়াইটা কঠিন মনে হলেও আজ লোকাল ট্রেনটাই যেন এক আস্ত মন্দির বৃষ্টির কাছে।
বাঁকুড়ার সুপ্রিয়া পাল, তাঁকে অবশ্য সকলেই বৃষ্টি নামেই চেনেন সকলে। নিজের লড়াইয়ের মাধ্যমে আর পাঁচটা মেয়েকে স্বাবলম্বী করতে নিজেই খুলেছেন 'বৃষ্টির লড়াই' নামে একটি ফেসবুক পেজ। আর তাতেই বৃষ্টির কঠিন জীবন জার্নির কাহিনী চোখে জল এনে দিতে বাধ্য।
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে সংসারের যাবতীয় কাজ সামলে হাতে দুটো ভারী ব্যাগ নিয়ে ছোটেন স্টেশনের দিকে। লক্ষ্য একটাই ট্রেনে ডেইলি প্যাসেঞ্জার যাত্রীদের কাছে শাড়ি, কুর্তি, নাইটি বিক্রি। লোকাল ট্রেনে কামরায় হাসি মুখেই চলে বিকিকিনি। অফিস টাইম শেষ লোকাল বাসে ফেরি করেন বৃষ্টি। বিকেলে ফের ট্রেনে বিক্রিবাট্টার পর্ব শেষ করে ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফেরেন তিনি। বাড়িতে স্বামী, সন্তান সকলেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন তাঁর জন্য।
ভূগোলে মাস্টার্স করেও চাকরি না পেয়ে লোকাল ট্রেনে এভাবে শাড়ি বিক্রি করতে দেখে সমাজের অনেকেই তাঁকে কটু কথা বলতে ছাড়েননি। কিন্তু সেসবে বিশেষ আমল না দিয়ে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেন তিনি। আজ ধীরে ধীরে কিছুটা হলেও আর্থিক অনটন কেটেছে। সংসারের হাল ফিরলেও লোকাল ট্রেনের লড়াইটা কিন্তু আজও জারি রয়েছে তাঁর।
সামান্য এই উপার্জনের টাকা দিয়েই গ্রামে স্বামীকে একটা দোকানও করে দিয়েছেন তিনি। বৃষ্টি বিশ্বাস করেন সংসার চালানোর দায় একা কখনওই পুরুষের নয়। তাই তো স্বামীর কঠিন সময়ে শাড়ি, কুর্তি, সালোয়ার নিয়ে লোকাল ট্রেনের কামরায় বিক্রি করতে এক মুহূর্তের জন্যও ভাবেননি তিনি।
বৃষ্টি বলেন, 'বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি থেকেই মাস্টার্স সম্পূর্ণ করে ইচ্ছে ছিল একটা চাকরি করার। ইতিমধ্যেই বি.এডও করি। কিন্তু চাকরি জোটেনি। হঠাৎ করেই স্বামীর চাকরি চলে যাওয়ায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। সংসারের জন্য কিছু করতেই হবে এই ভেবেই বেরিয়ে পড়ি শাড়ি, কুর্তি নিয়ে লোকাল ট্রেনে। প্রথম প্রথম চোখে জল আসলেও, ওসব এখন অতীত। আজ বহু দূর দূরান্ত থেকে মানুষজন আমার লড়াইয়ে পাশে থেকেছেন। আমার থেকে শাড়ি, পোশাক কিনে আমার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। লাখ মানুষের ভালবাসা আমি পেয়েছি। সেটা আমার কাছে সব চেয়ে বড় তৃপ্তি'।
সাধারণ ঘরের মেয়েদের কাছে বৃষ্টি আজ এক অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। বৃষ্টির কথায়, ''আমি মেয়েদের বলতে চাই, জীবনে কোনও পরিস্থিতিতেই হাল ছাড়বে না। লড়াই চালিয়ে যাবে। সময়ও তোমার কাছে এসে মাথা নত করতে বাধ্য করবে"।