রাজ্যে অব্যাহত শুটআউটের ঘটনা। ডালখোলা, খড়গপুর ও কোচবিহারের পর এবার শুটআউট পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড়ে। শনিবার ভরসন্ধ্যায় শক্তিগড়ে দু'নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে ল্যাংচার দোকানের সামনে এই শুটআউটের ঘটনাটি ঘটে। দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত কয়লা মাফিয়া রাজু ঝা। গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর জখম হয়েছেন নিহতের সঙ্গে একই গাড়িতে থাকা আরও একজন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এই ঘটনায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে শক্তিগড় জাতীয় সড়কের ধারে থাকা ব্যবসায়ী মহলে। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছন জেলার পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সিংহ-সহ পুলিশের অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্তারা। ঘটনাস্থলে ব্যারিকেড করে পুলিশ আততায়ীদের খোঁজ শুরু করেছে।
শক্তিগড়ে জাতীয় সড়কের দু'ধারে রয়েছে ল্যাংচা-সহ অন্যান্য মিষ্টান্ন বিক্রির একাধিক দোকান। সন্ধ্যার পর দূরদূরান্তে যাতায়াত করা গাড়ির আরোহীরা ওইসব ল্যাংচার দোকানে দাঁড়িয়ে খাওয়া-দাওয়া সারেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী শনিবার সন্ধ্যার সময় কলকাতামুখী রোডে শক্তিগড়ের একটি ল্যাংচার দোকানের সামনে দাঁড়ায় সাদা রংয়ের ফরচুনা গাড়ি। ওই গাড়ির আরোহীরা, গাড়ি থেকে নামতে না-নামতেই নীলচে রঙের একটি চারচাকা গাড়ি সেখানে এসে দাঁড়ায়। নীলচে রঙের গাড়ি থেকে কয়েকজন নেমেই দাঁড়িয়ে থাকা ওই ফরচুনা গাড়ির আরোহীদের লক্ষ্য করে পরপর গুলি চালায়। গুলি চালিয়ে নীলচে রঙের গাড়িতে চেপেই দুষ্কৃতীরা দ্রুত কলকাতামুখী রাস্তা ধরে পালিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি ,কমবেশি ছয় রাউণ্ড গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। গুলিতে ফরচুনা গাড়ির চালকের পাশের আসনে বসে থাকা একজন আরোহী এবং পিছনের সিটে বসে থাকা রাজু ঝা গুলিবিদ্ধ হন। বরাত জোরে রেহাই পেয়ে যান ফরচুনা গাড়ির চালক। তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে । সেখানে চিকিৎসকরা রাজু ঝা-কে মৃত বলে ঘোষণা করেন। অপরজনের হাতে গুলি লাগায় তিনি প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। আকস্মিক এই ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে যান এলাকায় উপস্থিত মানুষজন। দুষ্কৃতী হামলার শিকার গাড়ির চালক জানিয়েছেন, তাঁরা দুর্গাপুর থেকে কলকাতার দিকে যাচ্ছিলেন। তবে তাঁদের গাড়িতে থাকা আরোহীদের পরিচয় সংবাদমাধ্যমের কাছে এড়িয়ে যান ফরচুনা গাড়ির চালক।
আরও পড়ুন- নিয়োগ দুর্নীতি: ৪৫ কোটি টাকা তুলেছিলেন অয়ন, এক এজেন্টকেই ২৬ কোটি! বিস্ফোরক ED
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, এটি একটি গ্যাং-ওয়ারের ঘটনা হতে পারে। রাজু ঝা কুখ্যাত কয়লা মাফিয়া হিসেবেই দুর্গাপুর এলাকায় পরিচিত ছিলেন। বিভিন্ন থানায় তাঁর নামে অভিযোগ রয়েছে। সিআইডি ইতিপূর্বে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে রাজু ঝা বিজেপিতে যোগ দেন। বাম আমলে কয়লা পাচারে রাজু ঝায়ের হাতেখড়ি হয়। কয়লা পাচার নিয়ে এখন যে তদন্ত চালাচ্ছে ইডি, তার স্ক্যানারেও রাজু ঝা ছিল বলে খবর। এমনই এক সময় রাজু ঝাকে কারা খুন করল, তা নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে। তদন্তে নেমে পুলিশ শক্তিগড়ের ঘটনাস্থল এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা শুরু করার পাশাপাশি জাতীয় সড়ক ও সংলগ্ন সড়ক পথগুলিতে নাকা চেকিং শুরু করেছে। পালসিট টোল প্লাজার সিসিটিভি ফুটেজও পুলিশ খতিয়ে দেখা শুরু করেছে। অন্যান্য জেলার পুলিশকেও আততায়ীদের বিষয়ে খবর দেওয়া হয়েছে। ভিন জেলার পুলিশও আততায়ীদের গাড়ি ধরার জন্য পথে নাকাচেকিং শুরু করেছে।
জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন রাতে জানিয়েছেন, ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শুরু হয়েছে। আততায়ীকে ধরার চেষ্টা চলছে। আততায়ীরা ধরা পড়বেই বলে পুলিশ সুপার আত্মবিশ্বাসী। ফরচুনা গাড়িটি বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ আবদুল লতিফের বলে জানা গিয়েছে। এদিন গাড়িটিতে যে চালক ছিলেন, সে আবদুল লতিফের নিয়োগ করা বলেই জানা গিয়েছে। কয়লা মাফিয়া রাজু ঝা-এর সঙ্গে আবদুল লতিফ ও এনামুলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে খবর মিলেছে। গরু ও কয়লা পাচার-কাণ্ডের তদন্তের দায়িত্বে থাকা সিবিআইয়ের ডাক পাওয়ার পর আবদুল লতিফ গা-ঢাকা দিয়েছেন। এখন তিনি ইলামবাজারে থাকছেন বলে জানা গিয়েছে।