Shantiniketan Kopai: “আমাদের ছোট নদী চলে আঁকেবাঁকে / বৈশাখ মাসে তাঁর হাঁটু জল থাকে”। কোপাই নদীকে নিয়েই এই পদ্য লিখেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস জুড়েও রয়েছে কোপাই নদীর কথা। হাঁসুলি বাঁকের উপকথা এই কোপাই নদীকে ঘিরেই।
রবীন্দ্রনাথ, তারাশঙ্করের কোপাই নদী আর ভালো নেই। দিনের পর দিন নদীর পার দখল করে গজিয়ে উঠছে হোটেল, রেস্তোঁরা। এখন আবার মন্দিরের নামে গজিয়ে উঠছে অট্টালিকা। কোপায় বাঁচাতে নদীর তীরে অবস্থান-বিক্ষোভে বসেছিলেন শান্তিনিকেতন খোয়াই সাহিত্য সংস্কৃতি সমিতি। তাঁরা জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীকেও চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন জমি দখলের কথা।
শান্তিনিকেতনের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে কোপাই নদী। আঞ্চলিক নাম শাল নদী। এটি ময়ূরাক্ষী নদীর একটি উপনদী। রবীন্দ্রনাথের লেখনিতে আমরা কোপাই নদীকে পাই প্রতিবেশিনী কোপাই নদী হিসেবে। সেই কোপাই নদীর পাড় দখল করে চলছে অবৈধ নির্মাণ। এভাবে দিনের পর দিন কোপাই নদী দখল করে নির্মাণ কাজ চললে আগামী দিনে আর নদীর অস্তিত্বই থাকবে না, দিন-দিন এমনই আশঙ্কা বাড়ছে।
কোপাই বাঁচাতে অবস্থান বিক্ষোভে অধ্যাপকরা।
আরও পড়ুন- Premium: বাড়িতেই ব্যবসা, কম খরচেই চটজটলদি মোটা টাকা আয়! বেকারদের দিশা দেখাচ্ছেন এই ব্যক্তি
কোপাই নদীর জলের উপর নির্ভর করেন স্থানীয় মানুষজন। নদীতে গ্রীষ্মকালে জল পান করে গৃহপালিত পশুও। সেই নদীর এখন চরম দূরবস্থা। নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালি, মাটি তোলা চলছে। কোপাই নদীকে বাঁচাতে বিশ্বভারতীর পাঠভবনের অধ্যাপক কিশোর ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে নদীর তীরে চলে অবস্থান বিক্ষোভ। সেখানে সামিল হয়েছিলেন বিশ্বভারতীর অধ্যাপক, কর্মী, পরিবেশবিদ অনেকেই।
কোপাই নদীর পাড়ে এমনই সব নির্মাণ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
বিশ্বভারতীর পাঠভবনের অধ্যাপক কিশোর ভট্টাচার্য বলেন, “কোপাই নদী রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নের নদী। শান্তিনিকেতনে ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছে কোপাই নদী বেশ পছন্দের। কবিগুরু তাঁর লেখনিতে কোপাই নদীকে প্রতিবেশিনী নদী হিসাবে বর্ণনা করেছেন। সেই নদীকে বাঁচাতে আমাদের অবস্থান। জানি না কার মদতে কোপাই নদী দখল করে গজিয়ে উঠছে রেস্তোঁরা, অট্টালিকা। প্রকৃতিকে ধ্বংস করে মানুষ বাঁচতে পারে না। আদিবাসী গ্রামের মানুষজন এই নদীতে স্নান করেন। তাঁদের গবাদি পশুকে স্নান করান।"
নদীর পাড় ঘেঁষে তৈরি পাঁচিল।
তিনি আরও বলেন, "এরকম একটা নদীকে লোপাট করে সংস্কৃতি বেঁচে থাকতে পারে না। মুখ্যমন্ত্রী সম্ভবত বিষয়টি জানেন না। আমরা একশোজন অধ্যাপক-অধ্যাপিকার সাক্ষরিত অভিযোগপত্র মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠাব। জেলাশাসক, বিশ্বভারতীর ছাত্র মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহার কাছেও প্রতিলিপি জমা দেব। আমাদের লক্ষ্য কোপাই নদী বাঁচানো”। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “রবীন্দ্রনাথের স্বপ্নের নদীকে বাঁচাতে আমাদের অবস্থান। কোপাই নদীকে আমাদের বাঁচাতেই হবে।”