শিল কাটাও, শিল কাটাও- অদ্ভুত এই সুরেই দিনের শুরতে পাড়া শুদ্ধু সকলেই নিজেদের রন্ধনশালা থেকে শিল নোরা বের করে নিয়ে আসতেন। তবে যুগ বদলেছে, প্রযুক্তির উন্নতির ফলে পাল্টে যাচ্ছে কতকিছু। পাল্টে যাচ্ছে শহরের অভ্যাস, পাল্টে যাচ্ছে মধ্যবিত্ত জীবনে নানা নিয়ম। ক্রমশ খোলস বন্দি হচ্ছে কত পেশা। বেশিরভাগ বাড়িতেই এখন মিক্সার গ্রাইন্ডার। শিল নোড়ার ব্যবহার এখন অনেকটা কমেছে। তাদের ব্যবসার এখন কেমন হাল? আজও কী মানুষের ডাক পান তারা?
Advertisment
পনের কুড়ি দিন পর পর বিভিন্ন এলাকায় যান সোনামা কুমার শাউ। এই রোদে জলে ঘুরে ঘুরে শিল কেটে দেন তিনি। কিন্তু এখন তাদের ব্যবসার হাল কেমন? রোজগার খাটুনির তুলনায় অনকটাই কম বলে দাবি তাঁর। সোনামা বললেন, "১৫/২০ বছর ধরে এই ব্যবসা করছি। এই কাজ ছাড়া আর কিছুই জানি না। বাঁধাধরা কাজ তো আর নয়, যেদিন যেমন মানুষ ডাকেন সেদিন তেমন রোজগার হয়। এই কাজ না করলে আর কীভাবে সংসার চলবে।"
কালেভদ্রে, মাঝে মধ্যে কানে আসে শিল কাটাও। কোন কোন এলাকায় যান ছেনি-হাতুড়ি হাতের মানুষগুলি? উত্তরে সোনামা বলেন, "অনেক জায়গায়। শেওরাফুলি থেকে বালি, কোন্নগর, বালি, চন্দননগর ঘুরে ফিরে সব জায়গাতেই যাই। মানুষের থেকে হাঁক পান? পাই, তবে আগের মতো নয়। আগে অনেকেই ডাকতেন, কিন্তু এখন বাড়িতে অনেকেই মিক্সি ব্যবহার করেন। তাই ডাক কমেছে। এখন দিনে ৪-৫ জন অথবা কোনও কোনওদিন ১০ জনও ডাকেন।"
এতবছর ধরে এই কাজ করছেন, শিলে বাটা মশলা আর মিক্সির মশলার মধ্যে পার্থক্য কী বোঝেন? বললেন, "আমি এটাই বলি যে মিক্সীর মশলা কারেন্টের মশলা। এতে লোহা বল অথবা স্টিল ক্ষয়ে ক্ষয়ে মশলায় মিশে যায়। যেটা শরীরের পক্ষে খারাপ। আর এদিকে শিলে বাটা মশলা একেবারেই, স্বাস্থ্যকর। কোনও রাসায়নিক পদার্থ মিশতে পারে না। শুধু তো প্রযুক্তির ব্যবহার করলেই হল না। নিজেকে সুস্থ রাখতে হবে।"
সংসার চালাতে দিনের পর দিন, রোদ ঝড় জলের তোয়াক্কা না করেই এই কাজ করে চলেছেন সোনমার মত অনেকেই। শুধুই রুজি রোজগার, পেট চালানোর তাগিদ - এপাড়া থেকে ওপাড়ায় শিলে কাটাও হেঁকে চলেছেন তারা। কিন্তু আর কতদিন? শিল কাটিয়েদের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তিলোত্তমা থেকে মফস্বলের দীর্ঘ ইতিহাস। প্রযুক্তির সঙ্গে পাল্লা দিতে দিতে অনেক পেশার মতই ক্রমশ যেন থমকানোর পথে শিল কাটাও।