অনাথ হল হাঁদা ভোঁদা, বাঁটুল দি গ্রেট, নন্টে ফন্টরা। চির ঘুমের দেশে প্রখ্যাত কার্টুনিস্ট নারায়ণ দেবনাথ। বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন ৯৭ পার করা এই শিল্পী-সাহিত্যিক। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ভর্তি ছিলেন নার্সিংহোমে। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে না ফেরার দেশে নারায়ণ দেবনাথ।
গত ছ'দশক ধরে একের পর এক অনবদ্য চরিত্র ফুটিয়ে বাঙালি পাঠক হৃদয়েজুড়ে রয়েছেন নারায়ণ দেবনাথ। স্রস্টার মৃত্যু হল, কিন্তু তাঁর সৃষ্টিতেই অমর হয়ে রইলেন এই কার্টুনিষ্ট, সাহিত্যিক।
প্রবাদপ্রতীম নারায়ণ দেবনাথের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন বাংলা সাহিত্য ও শিল্প জগতের বিশিষ্টরা। সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় শিশুসাহিত্য পাঠককূলে সমাদৃত। নারাযম দেবনাথের মৃত্যিতে শীর্ষেন্দুবাবু শোক প্রকাশ করে বলেন, 'অল্প কথার মানুষ ছিলেন। নিজেকে তুলে ধরতে কখনওই কোনওদিন বেশি কথা বলেনি। বাংলায় কার্টুন নিয়ে খুব যে কাঝ হয়েছে তা নয়। তাঁর সময়তো হয়ইনি। কার্যত তিনিই পথপ্রদর্শক। গত কয়েক দশক ধরে নিরলসভাবে বাংলা কার্টুন নিয়ে কাজ করে বাংলা শিল্পকে সমৃদ্ধ করেছেন নারায়ণবাবু।'
আরও পড়ুন- প্রয়াত ‘হাঁদা ভোদা’র স্রষ্টা প্রবাদপ্রতীম কার্টুনিস্ট নারায়ণ দেবনাথ, শোক প্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর
শিল্পী শুভাপ্রসন্ন বলেন, 'অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন। বাংলার এমন কোনও শিশু নেই যাঁরা তাঁর কমিক্স চরিত্র পড়েনি। তাঁর চরিত্রগুলি অদ্ভূত ভাবে তৈরি করা। তার সঙ্গে অসামান্য গল্প, সঙ্গে ছবি। কত প্রজন্মের শিশুরা তাঁর কাজে আনন্দিত হয়েছে। এই ধরণের মানুষ চলে যাওয়া এক শূন্যতার সৃষ্টি হল। বয়সের ভারে অনেকদিনই তিনি রোগে ভুগছিলেন, কিন্তু তাঁর কল্পনা-কলম ধরার খামতি ছিল না।'
'আমি যেহুতু ছবি আঁকি তাই বুঝতে পারছি এশুধু বাংলার নয়, গোটা ভারতের ক্ষতি। ওনার কাজে অনুপ্রাণিত হতাম। চেষ্টা করতাম ওনার মতো ছবি আঁকার। আজ যেন সেইসবই মনে পড়ছে।'
নারায়ণ দেবনাথের প্রয়াণে সাহিত্যিক স্মরণজিৎ চক্রবর্তী বলেন, 'আমার বই পড়ার শুরু হয়েছিল বাঁটুল দি গ্রেটের হাত ধরে। আমি যখন ছোটবেলায় বাঁটুল দি গ্রেট পড়তে শুরু করি, আমার ইচ্ছা ছিল, বাঁটুল দি গ্রেটের গল্প লিখব। সারাজীবন ভেবেছি, তাঁর সঙ্গে কবে দেখা হবে। ২০১৯ এর অক্টোবর মাসে ওনার বাড়ি যাই। ফিসফ্রাই খেতে উনি খুব ভালবাসতেন। আমি নিয়ে গিয়েছিলাম। আমারা যাঁরা নন্টে-ফন্টে পড়ে বড় হয়েছি, আজ তাঁদেরও অশৌচ।'