প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে তুষারপাতের আনন্দ নিতে গিয়ে তুষারধসের কবলে পড়ে মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েকজন পর্যটকের। মঙ্গলবার মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে সিকিমে ছাঙ্গুর কাছে। এদিন রাত পর্যন্ত বরফের ধস সরিয়ে ৭ জনের দেহ উদ্ধার করেছে সেনা। মৃতদের তালিকায় রয়েছেন শিলিগুড়ির শক্তিগড়ের বাসিন্দা সৌরভ রায় চৌধুরী (২৮)। তাঁর সঙ্গে মৃতের তালিকায় রয়েছেন বাংলার আরও এক পর্যটক প্রীতম মাইতি। এই মর্মান্তিক ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন কমপক্ষে ৩০ জন দেশ-বিদেশের পর্যটক। আহতদের তালিকায় রয়েছেন শিলিগুড়ির পাপাই সরকার ও রঞ্জিতা দাস। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্তত ১৫০ জন পর্যটক তুষারধসের কবলে পড়েছিলেন। ঘটনার পরপরই উদ্ধারকার্যে হাত লাগায় সেনাবাহিনী, গ্রেফ ও সিকিমের উদ্ধারকারী দল। বরফ সরিয়ে এখনও উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে সেনা। এই ঘটনায় সিকিম প্রশাসনের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে তুষারধসে মৃত পর্যটক সৌরভ রায়চৌধুরীর বাড়ি শিলিগুড়ির শক্তিগড় এলাকায়। একটি বেসরকারি সংস্থায় তিনি কাজ করতেন। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তানের মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়নি দম্পতিকে। বুধবার সকালে মৃতের আত্মীয়রা দেহ আনতে রওনা হয়েছেন সিকিমের উদ্দেশ্যে। সৌরভের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পরতেই এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
তুষারপাতের জেরে বেশ কয়েকদিন ধরেই সিকিমের নাথুলা, ছাঙ্গু এলাকায় পর্যটকদের যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল সিকিম প্রশাসন। মঙ্গলবার সকালে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর ১৩ মাইল পর্যন্ত পর্যটকদের যাতায়াতে অনুমতি দেয় প্রশাসন। অনুমতি পেয়েই শয়ে শয়ে পর্যটকের গাড়ি রওনা দেয় ছাঙ্গুর উদ্দেশ্যে। ১৩ মাইল পর্যন্ত যাওয়ার অনুমতি থাকলেও নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে এগোতে থাকে পর্যটকরা।
১৫ মাইলের কাছে একটি ঝোড়া দিয়ে বরফ জলের স্রোত নামতে দেখে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন পর্যটকরা। সঙ্গে চলছিল সেখানে হালকা তুষারপাত। সেই সময় আচমকাই উঁচু ঝোড়া থেকে তুষারধস নেমে আসে। সেই ধসেই চাপা পরে প্রচুর পর্যটক। সেই সঙ্গে ৬-৭ টি পর্যটকের গাড়ি রাস্তা থেকে গড়িয়ে খাদে পড়েছে বলে খবর।
মঙ্গলবার সন্ধ্যাতে ফের একই জায়গায় নতুনকরে তুষারধস নেমে আসে। ফলে ব্যহত হয় উদ্ধার কাজ। দ্বিতীয় বারের ধসে নতুন করে ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই। জখমদের মধ্যে রয়েছেন কলকাতার বাসিন্দা পুতুল সিং, রাকেশ সিং, তথাগত রায়চৌধুরী, সুমিত দাস ও শিলিগুড়ির রঞ্জিতা দাস ও পাপাই সরকার। এদিন বিকেলে আহতদের সঙ্গে দেখা করতে যান সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম কুমার তামাং। তিনি জানিয়েছেন জখমদের চিকিৎসার সমস্ত দায়িত্ব নেবে সিকিম রাজ্য সরকার। পাশাপাশি মৃতদের দেহ বাড়ি ফেরানোরও ব্যবস্থা করবে সিকিম প্রশাসন।