অবশেষে নিজের পরিবারকে খুঁজে পেল মাতৃহারা শিশু। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি রেলপুলিশের হাতে উদ্ধার হওয়া শিশুকন্যাটির খবর সোশাল মিডিয়া সূত্রে জানতে পেরে পরিজনেরা শনিবার সকালেই হাজির হয় নিউ জলপাইগুড়ির রেল হাসপাতালে। পরিবারের তরফেই জানানো হয় শিশু কন্যাটি তাঁদের সকলের প্রিয় 'আয়েষা'। এদিকে তল্লাশি চালাতেই শিলিগুড়ির রেললাইনের পাশে পাওয়া যায় শিশুটির মায়ের রক্তাক্ত নিথর দেহও। মর্গে পৌঁছে আয়েসার মা আশালুনকে শনাক্ত করে পরিবারের লোকজন।
পরম যত্নে লালিত হচ্ছে উদ্ধারকৃত কন্যা শিশু। ছবি- সন্দীপ সরকার
এই ঘটনায় পরিবারের তরফে উঠে আসছে এক ভয়ঙ্কর অভিযোগ। পরিবারের দাবি, বাড়িতে মানসিক অবসাদগ্রস্ত স্বামীকে রেখে সাদ্দাম নামের এক যুবকের সঙ্গে সোমবার পাহাড়ে ঘুরতে যাবে বলে এক বছরের আয়েষাকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় আশালুন। সেই সাদ্দামই মা এবং মেয়েকে রেললাইনে ফেলে দিয়ে প্রাণে মেরে ফেলতে চেয়েছে বলে দাবি করে পরিবার। শনিবার সকালে আয়েষাকে নিতে নিউ জলপাইগুড়ি হাসপাতালে আসে তার দিদা এবং মামা।
ঠিক কী হয়েছিল?
শিশুকন্যা আয়েষার দিদা মুক্তারি খাতুন পুলিশকে জানিয়েছেন, গত সোমবার সকালে পাহাড়ে ঘুরতে যাওয়ার নাম করে স্থানীয় এক যুবক মহম্মদ সাদ্দামের সঙ্গে বাড়ি থেকে বের হয় তাঁর মেয়ে আশালুন এবং ১০ মাসের কন্যা আয়েষা খাতুন। এরপর থেকেই মা এবং মেয়ের আর কোনও খোঁজ পায়নি পরিবার। আশালুন কাজ করেন পাঞ্জিপাড়া রেল স্টেশনে। ঘরে রয়েছে তাঁর মানসিক ভারসাম্যহীন স্বামী। এরই মধ্যে বারসোই এলাকার মহম্মদ সাদ্দামের সাথে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে আশালুন খাতুনের। অভিযোগ, মহম্মদ সাদ্দামই আশালুনকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে রেল লাইনে ফেলে রেলের চাকায় পিষ্ট করে তাদের আদরের নাতনিকে মারতে চেয়েছে। সাদ্দামের কঠোর শাস্তি দাবি করে আয়েষার পরিবার। ইতিমধ্যেই মহম্মদ সাদ্দামের নামে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছে পরিবার। এদিকে ঘটনার পর থেকেই পলাতক সাদ্দাম। অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।
আরও পড়ুন- শিলিগুড়ির রেললাইন থেকে উদ্ধার এক বছরের শিশুকন্যা
ছোট্ট আয়েষা। ছবি- সন্দীপ সরকার
উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছিল আশালুনের দেহ। মর্গে গিয়ে তাঁর পরিবারের লোকেরা শনাক্ত করেন আশালুনকে। এদিকে নিউ জলপাইগুড়ি রেল হাসপাতালে অনেকটাই সুস্থ অবস্থায় দেখা গিয়েছে আয়েষা। আয়েষাকে সম্পূর্ন সুস্থ করে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী তার পরিবার। অন্যদিকে, ছোট্ট আয়েষাকে দত্তক নেওয়ার জন্য অনেকেই আসছেন নিউ জলপাইগুড়ি রেল হাসপাতালে। অনেকে যোগাযোগ করছেন চাইল্ড লাইনের সাথেও। আয়েষার পরিবারের খোঁজ মেলায় এখন অনেকটাই স্বস্তিতে রেল হাসপাতালের নার্স এবং চিকিৎসকেরা।
শিলিগুড়ির আরও খবর পড়ুন এখানে