ভারতের শেষ রেলস্টেশন সিঙ্গাবাদ। কথিত আছে, এক সময় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে মালদহের এই সিঙ্গাবাদ রেল স্টেশন হয়েই ট্রেনে ঢাকা গিয়েছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু থেকে শুরু করে মহাত্মা গান্ধীর মতো অনেক মহান ব্যক্তিত্ব। মালদহের এই সিঙ্গাবাদ স্টেশনকে যাতে হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়, সেব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে মাঝপথেই সেই উদ্যোগ থমকে পড়েছে। এমনকী দেশের শেষ রেল স্টেশন সিঙ্গাবাদে যাওয়া একমাত্র যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলও এখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে এই স্টেশন দিয়ে বাংলাদেশে মাঝেমধ্যে পণ্যবাহী কয়েকটি মালগাড়ি চলাচল করে।
এনএফ রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে পুরাতন মালদহ কোর্ট স্টেশন থেকে সিঙ্গাবাদ পর্যন্ত একটি যাত্রীবাহী ট্রেন চলতো। কিন্তু পরবর্তী সময়ে রেল কর্তৃপক্ষ সেই যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়। যাত্রী না হওয়ার কারণে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছিল, সেই কারণেই এই রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সিঙ্গাবাদ স্টেশনের পরেই রয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত । সীমান্তের ওপারে রয়েছে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা।
সিঙ্গাবাদ স্টেশনটি মালদহের হবিবপুর ব্লকের শ্রীরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পড়ে। সিঙ্গাবাদ স্টেশনের সামনে রেল লাইনের ধারে ফলকে জ্বলজ্বল করছে বেশ কিছু লেখা। যেখানে লেখা রয়েছে দেশের শেষ স্টেশন সিঙ্গাবাদ। দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে স্টেশনটি বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সিঙ্গাবাদ স্টেশন থেকে ফের চালু হোক যাত্রীবাহী ট্রেন পরিষেবা, এমনই চাইছেন জেলাবাসী। এই স্টেশনটিকে হেরিটেজ হিসেবেও ঘোষণার দাবি উঠেছে।
সিঙ্গাবাদ স্টেশনটি হবিবপুর বিধানসভা এবং উত্তর মালদহ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। বিধায়ক ও সাসংদ দুজনেই কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির প্রতিনিধি। সিঙ্গাবাদ স্টেশনের ঐতিহাসিক গুরুত্বকে মর্যাদা দেওয়ার ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য কোনও উদ্যোগই নেননি বিধায়ক-সাংসদ, এমনই অভিযোগ স্থানীয়দের। জেলার বেশ কয়েকজন প্রবীণদের কথায়, সিঙ্গাবাদ স্টেশনটি ব্রিটিশ আমলে তৈরি। সেই সময়ে সিঙ্গাবাদ হয়েই ঢাকা যাতায়াত করতেন বহু মহান ব্যক্তিত্ব। একটা সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গাবাদ স্টেশনকে হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের অসহযোগিতার দরুণ এখনও পর্যন্ত সেব্যাপারে যথোপযুক্ত কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।
আরও পড়ুন- ঢেউয়ের তোড়ে উল্টে গেল নৌকা, বরাতজোরে রক্ষে মৎস্যজীবীদের
জেলার বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি রহিম বক্সি জানিয়েছেন, একটি মাত্র যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করতো সিঙ্গাবাদ পর্যন্ত। বর্তমানে সেটিও বন্ধ করে দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গাবাদ স্টেশনকে হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীন থাকায় সেই কাজ এগোয়নি বলে অবিযোগ তাঁর। যদিও এব্যাপারে এনএফ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। উত্তর মালদহের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু জানিয়েছেন, সিঙ্গাবাদ স্টেশন ঘিরে জেলার মানুষের অনেক আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। সিঙ্গাবাদ স্টেশনের গুরুত্ব বোঝাতে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রেল মন্ত্রককে চিঠি দেওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগী হচ্ছেন তিনি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন