Advertisment

সিঙ্গুরে টাটাকে ক্ষতিপূরণ! এরপরও শিল্প সম্মেলন থেকে বিরাট আশা মমতা সরকারের

ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার।

IE Bangla Web Desk এবং Chinmoy Bhattacharjee
New Update
Tata Motors compensation

ন্যানো প্ল্যান্টের জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে টিএমসির নিরন্তর প্রচারের জেরেই টাটারা সিঙ্গুর থেকে সরে গিয়েছিল। (এক্সপ্রেস ছবি পার্থ পল)

বাতিল হওয়া সিঙ্গুর ন্যানো প্ল্যান্টের জন্য একটি সালিশি ট্রাইব্যুনালের টাটা মোটরসকে ৭৬৫.৭৮ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণের নির্দেশ তৃণমূল সরকারের কাছে একটা বড় ব্যাপার। আগামী মাসেই সরকার গ্লোবাল বিজনেস সামিটের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিরোধী দল বিজেপি, যারা একটি কেলেঙ্কারিতে রাজ্যের এক মন্ত্রীকে গ্রেফতারের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির প্রচারকে নতুন করে তুলে ধরেছে, তারা এই ঘটনায় টিএমসিকে ফের বেকায়দায় ফেলার নতুন রাস্তা খুঁজে পেয়েছে।

Advertisment

টাটার ন্যানো কারখানার জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে টিএমসির লাগাতার প্রচারের জেরে শেষ পর্যন্ত টাটা মোটরস তাদের কারখানা তৈরির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়েছিল। যদিও এই আন্দোলন বামফ্রন্ট সরকারে পতন ঘটায়। আর, টিএমসিকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। কিন্তু, সিঙ্গুরের আন্দোলন আজও ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের শিল্প-বিরোধী ভাবমূর্তি দূর করার পথে বড় বাধা। তার মধ্যেই বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট ২১ এবং ২২ নভেম্বর কলকাতায় হতে চলেছে। যার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি স্পেন এবং দুবাইতে ১০ দিনের বহুল প্রচারিত সফরে গিয়েছিলেন।

টিএমসি নেতারা অবশ্য জানিয়েছেন যে, টাটাদের ক্ষতিপূরণ এই সম্মেলনের ওপর তেমন একটা প্রভাব ফেলতে পারবে না। তার বদলে টিএমসি নেতাদের দাবি, সবাই জানে যে বিনিয়োগ টানার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী কতটা সিরিয়াস। একই সময়ে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ট্রাইব্যুনালের নির্দেশের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার কথা বিবেচনা করছে বলেও জানা গেছে। পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

টাটা মোটরস এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডের মধ্যে সালিশি প্রক্রিয়া চলছিল। কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানার জন্য মূলধন বিনিয়োগের ক্ষতিপূরণ চেয়েছিল। তার ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছে, ৭৬৫.৭৮ কোটি টাকা টাটাদের দিতে হবে। সঙ্গে, ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে বার্ষিক ১১% সুদের হারে, ক্ষতিপূরণ 'প্রকৃত পুনরুদ্ধার না-হওয়া পর্যন্ত' দিতে হবে। এছাড়াও, টাটারা মামলার খরচ বাবদ ১ কোটি টাকা পাবেন। এই ব্যাপারে

একজন প্রবীণ তৃণমূল নেতা বলেন, 'আমাদের নেত্রী (মমতা) স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে বাংলায় কৃষি এবং শিল্প একসঙ্গে চলে। সিঙ্গুর ছিল আমাদের বিজয় এবং কৃষকদের জয়, তাঁদের জমি ফেরত দেওয়ার মধ্যে দিয়ে সেই জয় নিশ্চিত হয়েছে। এই ঘটনায় যে নতুন ডেভলপমেন্ট (টাটা মোটরস দাবি) হয়েছে, তার বিরুদ্ধে যে আইনি উপায় আছে, আমরা সেগুলো অনুসরণ করব।'

বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী টাটাদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের রায়কে একটি 'ল্যান্ডমার্ক' নির্দেশ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি সোমবার সোশ্যাল মিডিয়া X-এ পোস্ট করেছেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার শিল্পায়নের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। চাকরিপ্রার্থীদের প্রজন্মকে বাড়ির কাছাকাছি চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। কৃষকদের ফেরত দেওয়া জমি এখন আর কৃষিকাজে ব্যবহার করা যাবে না। তিনি সোনাকে ছাইয়ে পরিণত করেছেন।'

বিরোধী দলনেতা আরও যোগ করেছেন, 'সিঙ্গুরের ঘটনা বাংলার শিল্প ট্র্যাজেডি। এটা রাজ্যের দুর্বল আর্থিক অবস্থাকে এক অন্তহীন অন্ধকার সুড়ঙ্গে ঢুকিয়ে দিয়েছে।' তাঁর অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের স্বার্থপরতার কারণে এমনটা করেছেন। এই ব্যাপারে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছেন যে বাংলায় বাধার সম্মুখীন হয়ে টাটারা ন্যানো প্ল্যান্ট গুজরাটে সরিয়ে নিয়েছিল। সুকান্ত মজুমদার বলেন, 'টাটারা যখন চলে গেল, তখন বলেছিল যে তারা একজন এম (মমতার)-এর জন্য বাংলা ছাড়ছে। আর, অন্য এম (নরেন্দ্র মোদী)-এর জন্য গুজরাট যাচ্ছে। পরের জন দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। আর, আগের জন বাংলাকে ধ্বংস করেছেন।'

সিপি(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে আক্রমণ করে বলেছেন, তৃণমূলের 'অহংকার এবং ধ্বংসাত্মক রাজনীতির জন্য' টাটা গোষ্ঠী সিঙ্গুর ছেড়েছে। টাটা মোটরস ২০০৬ সালের ১৮ মে ন্যানো কারখানা স্থাপনের ঘোষণা করেছিল। বামফ্রন্ট সরকার তার জন্য সিঙ্গুরে টাটা মোটরসে ৯৯৭.৫ একর জমি দিয়েছিল। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে, জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অংশ হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২৬ দিন অনশন করেছিলেন।

২০০৮ সালের ৩ অক্টোবর, টাটা মোটরস ঘোষণা করে যে তারা এই প্রকল্পটিকে বাংলার বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট, সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয় যে অধিগ্রহণ করা জমি কৃষকদের ফেরত দেওয়া হবে। সিঙ্গুর ছাড়াও বিরোধী আসনে থাকাকালীন নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল টিএমসি। রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পরে সিঙ্গুর আন্দোলন ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তকভুক্ত হয়েছে।

টাইমলাইন

১৮ মে, ২০০৬: টাটা মোটরস সিঙ্গুরে একটি ন্যানো কারখানা করার কথা ঘোষণা করে। সেজন্য ৯৯৭.৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে।

জুলাই ১৮, ২০০৬: টিএমসি নেত্রী মমতা ব্যানার্জি প্রতীকী প্রতিবাদের অংশ হিসেবে প্রকল্পের জায়গার কাছে ধান বপন করেন।

জানুয়ারী ২১, ২০০৭: টাটা মোটরস ওই জায়গায় নির্মাণ শুরু করে।

৩ ডিসেম্বর, ২০০৭: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় অনির্দিষ্টকালের অনশন শুরু করেন।

২৮ ডিসেম্বর, ২০০৭: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর অনশন শেষ করেন।

২৮ আগস্ট, ২০০৮: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ন্যানো সাইটের কাছে একটি ধরনা শুরু করেন

৩ অক্টোবর, ২০০৮: টাটা মোটরস সিঙ্গুর থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

২০ মে, ২০১১: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন টিএমসি রাজ্যে ক্ষমতায় আসে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হন।

১৪ জুন, ২০১১: সিঙ্গুর ভূমি পুনর্বাসন ও উন্নয়ন বিল বিধানসভায় পাস হয়।

৩১ আগস্ট, ২০১৬: সুপ্রিম কোর্ট আদেশ দেয় যে জমি কৃষকদের ফেরত দেওয়া হবে।

Mamata Banerjee Singur Movement Tata Motors Court Order Tata nano
Advertisment