দলগত ভাবে টিএমসি অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে দ্বিতীয় সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান রবিবার বয়কট করেছে। কিন্তু, তাতে 'তৃণমূল' কংগ্রেসেরই দুই সাংসদ শিশির ও দিব্যেন্দু অধিকারীর কোনও যায় আসে না। খাতায়-কলমে টিএমসিতে থাকলেও যাঁরা দীর্ঘদিন দলের সঙ্গে সম্পর্ক ঘুচিয়ে ফেলেছেন। পরিবারের অন্য সদস্য শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। বাংলায় বিজেপির অন্যতম মুখ। দলীয় নির্দেশকে উপেক্ষা করে তাই শিশির-দিব্যেন্দুকেও দেখা গেল দিল্লিতে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তাঁরা সৌজন্য বিনিময়ও করলেন।
নতুন সংসদ ভবন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে দিয়ে উদ্বোধন করানো উচিত। তার বদলে কেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বোধন করবেন? এই প্রশ্ন তুলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কট করেছে দেশের ২০টি বিরোধী দল। সেই তালিকায় তৃণমূল কংগ্রেসও আছে। ২০০৯ সাল থেকে টানা তিনবার তৃণমূলের প্রতীকে কাঁথি থেকে সাংসদ হয়েছেন শিশির অধিকারী। তাঁর ছেলে দিব্যেন্দুও ২০১৬ সালে তৃণমূলের প্রতীকে লোকসভা উপনির্বাচন জেতেন। তারপর ২০১৯ সালেও তৃণমূলের প্রতীকে লোকসভায় প্রবেশ করেছেন। শুধু তাই নয়। অতীতে তাঁরা তৃণমূলের প্রতীকে বিধায়কও হয়েছিলেন। কিন্তু, সেসব ইতিহাস ২০২০ সালে হলদি নদীর জলে ভেসে যায়।
২০২০-র ১৯ ডিসেম্বর, শিশির অধিকারীর ছেলে শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দিতেই অধিকারী পরিবারের বাসভবন শান্তিকুঞ্জ আর কালীঘাটের হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের ব্যানার্জি বাড়ির দূরত্বটা যেন বেড়ে যায়। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শুভেন্দুকে হারাতে নন্দীগ্রাম থেকে প্রার্থী হন খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, তিনি হেরে যান। তারপর, দুই পরিবারের সম্পর্কটাও তলানিতে ঠেকে। শিশির অধিকারীর সাংসদ পদ খারিজের জন্য লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে আবেদন জানান তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি যুক্তি দেখান যে ২০২১ সালের ১ মার্চ, এগরায় অমিত শাহের সভায় হাজির ছিলেন শিশির অধিকারী। সেখানে তিনি বক্তৃতাও করেছেন। তাই শিশির অধিকারী কিছুতেই তৃণমূলের সাংসদ নন। তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। পালটা শিশির অধিকারী দাবি করেন যে তিনি তৃণমূলেই আছেন।
আরও পড়ুন- দেশের মধ্যে প্রথম, মমতার বাংলায় প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি নীল-সাদা রাস্তা
এই বিতর্ক আরও বাড়িয়ে শিশির ও দিব্যেন্দু অধিকারী উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দলের নির্দেশ অমান্য করেছেন। তৃণমূল কংগ্রেস উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটদানে বিরত থাকলেও অধিকারী বাড়ির সাংসদরা ভোটদানে অংশ নিয়েছিলেন। সেজন্য দিব্যেন্দু অধিকারীকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠিয়েছিল তৃণমূল। যদিও সেই নোটিশকে আমল না-দিয়ে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দিব্যেন্দু তাঁর বাবা শিশির অধিকারীকে নিয়ে যোগ দিলেন।