দু-দিনের অভিযানে সফল ধূপগুড়ির অনন্ত। প্রেম ফিরে পেতে একেবারে নেতা নেত্রীদের 'অনুপ্রেরণায়' ধর্ণায় বসেছিলেন তিনি। ঠিক 'অনুপ্রেরণা' নয়, বলা যেতে পারে রাজনৈতিক কায়দায় হাসিল করতে চেয়েছিলেন আট বছরের প্রেম। কোনো ঢাক ঢোল পিটিয়ে নয়, প্রেমিকাকে শাসিয়েও নয়, একেবারে নিপাট ভদ্র ছেলের মত হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে, রোদ-জল-ঝড়-বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে, নাওয়া-খাওয়া ভুলে প্রেমিকার বাড়ির সামনে দু-দিন ধরে বসেছিলেন অনন্ত। মুখে টু শব্দ ও করেননি। একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘আমার ৮ বছর ফিরিয়ে দাও।’ আর অন্য প্ল্যাকার্ডটিতে লেখা, ‘আমার ভালবাসার দাম দাও'। ব্যস, এইটুকু। বাকি কাজটা দায়িত্ব নিয়ে বিয়ে অবধি এগিয়ে নিয়ে গেছেন এলাকাবাসী, সঙ্গে সোশাল মিডিয়া।
কথায় আছে, যার বিয়ে তার হুঁশ নেই, পাড়াপড়শির ঘুম নেই। এই ঘটনায় প্রবাদটার খানিক বাস্তবায়ণ ঘটেছে। অনন্ত মুখে কুলুপ এঁটে, প্ল্যাকার্ড হাতে ধর্নায় ব্যস্ত। ওদিকে প্রেমিকা লিপিকা ও তাঁর পরিবার দরজা বন্ধ করে ঘরের ভিতর। কিন্তু পাড়াপড়শি কী আর চুপ করে থাকেন! তার ওপর এমন মুখরোচক ঘটনা। লিপিকার বাড়ির সামনে জটলা বাঁধতে শুরু করেন তাঁরা। বারবার করে এসে দেখে যান অনন্তকে। যত বেলা গড়ায়, লোকের আনাগোনাও তত বাড়ে। এলাকায় অনন্ত আর লিপিকার না হওয়া প্রেম নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলে ভিড় সামলাতে আসে ধূপগুড়ি থানার পুলিশ। এমন সময় বেরিয়ে আসেন লিপিকার মা। রে রে করে তেড়ে গিয়ে ঘটনার প্রতিবাদ করলেও শেষ সুরাহা হয় না। মাঝখান থেকে তিনি নিজেই অসুস্থ হয়ে ধূপগুড়ি জেলা হাসপাতালে ভর্তি হন। ওদিকে দু-দিন ধরে না খেয়ে থাকায় অসুস্থ হয়ে পড়েন অনন্ত।
দু-দিন পর শেষমেষ বরফ গলে। বিয়েতে রাজি হন লিপিকা। দিনক্ষণ, লগ্ন এসবের বালাই না রেখে পাড়ার লোক আত্মীয়স্বজনের জোরাজুরিতে অনন্ত সিঁদুর তুলে দেন লিপিকার মাথায়। এই সমগ্র ঘটনাই এখন সোশাল মিডিয়ায় বহু চর্চিত ঘটনা। পরিস্থিতির ডামাডোলে, আট বছরের প্রেম, ভালবাসা ফিরে পেলেন অনন্ত। কিন্তু লিপিকার ভেঙে যাওয়া মন কি ফিরে পেতে পারবেন? ভাইরাল হওয়া বিয়ের ভিডিও দেখে এমন প্রশ্ন জেগেছে নেটপাড়ার একাংশে।
অনন্তর দাবি অনুসারে, লিপিকা আট বছর প্রেম করার পর অনন্তকে বিয়ে করতে চান নি, বাবা মায়ের পছন্দ করা ছেলের সঙ্গেই ঘর বাঁধতে চেয়েছিলেন তিনি। অনন্তকে ফোন করে বলা হয়, লিপিকা তাঁকে বিয়ে করবেন না।
এরপরই এই ধর্নার সিদ্ধান্ত নেন অনন্ত।