উত্তরবঙ্গের তিন জেলায় ছ'টি পেট্রোল পাম্পে অ্যাম্বুলেন্সে তেল ভরার নাম করে কর্মীদের মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে পরপর ডাকাতির ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করল শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ দল। শনিবার রাত ও রবিবার দিনভর অভিযান চালিয়ে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া এবং শিলিগুড়ির বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতরা হল মহম্মদ খইরুল, মহম্মদ সৈফুদ্দিন, শিশু পাল, সুব্রত অধিকারি।
পুলিশ সূত্রে খবর, এরা সকলেই চোপড়ার বাসিন্দা। অভিযুক্তদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, মোবাইল ফোন, ও ল্যাপটপ উদ্ধার করেছে পুলিশ। উদ্ধার হয়েছে ডাকাতিতে ব্যবহৃত গাড়ি, মোটরবাইক। পুলিশ জানিয়েছে, গাড়ি ও মোটরবাইক দুইই চুরি করা, এবং বিহারের গাড়ি। গাড়িতে অ্যাম্বুলেন্সের স্টিকার ও হুটার লাগানো হয়েছিল। ধৃতদের অপর এক সঙ্গীকে খুঁজছে পুলিশ। সোমবার চারজনকে আদালতে তুলে হেফাজতে নেয় শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিশের এনজেপি থানা। এদের সকলের বিরুদ্ধেই এর আগে ডাকাতি, চুরি, বেআইনি অস্ত্র রাখা সহ একাধিক মামলা রয়েছে।
আরও পড়ুন: হাওড়ায় চেক জালিয়াতিকাণ্ডে ধৃত মূলচক্রী
গত ১৪ ও ১৮ ডিসেম্বর উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর এবং দার্জিলিংয়ের বিধাননগরে দুটি পাম্পে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ২২ ডিসেম্বর ভোরে দার্জিলিংয়ের ফাঁসিদেওয়ার মহম্মদ বক্স এবং জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি, সীতাগুড়ি, জটিয়াকালীতে তিনটি পাম্পে পরপর ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওইদিন রাত ৯.৩০ নাগাদ মহম্মদ বক্সে ডাকাতির চেষ্টা করে দুস্কৃতীরা। কিন্তু পাম্পকর্মীরা সতর্ক হয়ে যাওয়ায় শূন্যে গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায় ডাকাতরা। ওই রাতেই ১.০০ টা নাগাদ ময়নাগুড়ি, ১.৪৫ নাগাদ সীতাগুড়ি এবং ২.০০ টো নাগাদ জটিয়াকালীর পাম্পে ডাকাতি চালায় দুস্কৃতীরা। যাওয়ার সময় বেধড়ক মারধর করা হয় পাম্পকর্মীদের।
জানা যায়, অ্যাম্বুলেন্সে তেল ভরার নাম করেই ডাকাতি চালাতো অভিযুক্তরা। ওই ঘটনায় সীতাগুড়ি এবং জটিয়াকালীর পাম্প দুটি শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিশের এনজেপির আওতায় আসায় শিলিগুড়ি পুলিশ তদন্ত শুরু করে। এসিপি ইস্ট অচিন্ত্য গুপ্তর নেতৃত্বে কমিশনারেটের সমস্ত থানার আইসি, ওসিদের নিয়ে তৈরি করা হয় বিশেষ দল। শনিবার রাতেই ওই দলের সদস্য খালপাড়া ফাঁড়ির ওসির কাছে খবর আসে, মূল অভিযুক্ত মহম্মদ খইরুল শিলিগুড়ির তেঁতুলতলা এলাকায় লুকিয়ে রয়েছে। খবর পেয়েই পুলিশ মধ্যরাতে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। তাকে জেরা করে পুলিশ রবিবার সকালে ফাঁসিদেওয়ার চটহাটে শিশু পালের খোঁজ পায়। খইরুলকে দিয়েই ফোন করিয়ে শিশু পালকে ধরার ফাঁদ পাতে পুলিশ।
আরও পড়ুন: অবশেষে সিআইডি-র জালে ভারতী ঘনিষ্ঠ সুজিত
শিশু পালকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, সইফুদ্দিন সহ আরও একজন গাড়ি নিয়ে সেভক রোডের একটি গ্যারাজে গিয়েছে। খবর পেয়েই পুলিশ সেখানে হানা দেয়। পুলিশকে দেখে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে মাটিগাড়া এলাকায় ঢুকে পড়ে অভিযুক্তরা। সেই সময় ব্যারিকেড করে বন্ধ করে দেওয়া হয় জাতীয় সড়ক। দু'দিক থেকে পুলিশ তাড়া করে গাড়িটিকে। শেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে অভিযুক্ত। তবে একজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তার খোঁজে শুরু হয়েছে তল্লাশি।
শিলিগুড়ি পুলিশকে কাজে সহায়তা করে দার্জিলিং পুলিশ। ডেপুটি পুলিশ কমিশনার জোন (১) গৌরব লাল বলেন, "অভিযোগ পাওয়ার পরেই আমরা বিশেষ দল গঠন করে তদন্ত শুরু করি। চারজন ধরা পড়েছে। একজন পালিয়ে আছে। সেও ধরা পড়ে যাবে। অভিযুক্তরা সকলেই দাগী আসামী। এদের জেরা করার জন্যে হেফাজতে নেওয়া হবে।"