Advertisment

খিচুড়ির পাতে কিলবিল করছে সাপের বাচ্চা, শিশুদের খাইয়ে আত্মারাম খাঁচা ছাড়ার জোগাড়!

এই ঘটনায় গুরুতর গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। তদন্ত শুরু করেছে ব্লক প্রশাসন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
snake are found at icds centres food in east burdwan jamalpur

রান্না করা খিচুরিতে সাপের বাচ্চা। ছবি: প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়।

শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের পুষ্টির জন্য অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে দেওয়া হয় রান্না করা খাবার। সেই খাবারেই মিলল মরা সাপের বাচ্চা। সেই খাবার খেয়ে আতঙ্কেই 'অসুস্থ' শিশুরা। অনেকেই ভর্তি হয় হাসপাতালে। ঘটনায় ঘুম উড়েছে প্রশাসনেরও। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের তরফে প্রতিনিয়ত স্বাস্থ্যের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে ওই শিশুদের। ঘটনার উচ্চ পর্যারের তদন্তের নির্দেশ ব্লক প্রশাসনেরও।

Advertisment

পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের বাগকালাপাহাড় গ্রামে রয়েছে একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। এই কেন্দ্রেই রান্না করা খিচুড়িতে মিলেছে মরা একটি সাপের বাচ্চা। ঘটনা জানতেই সর্বত্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওই খিচুড়ি খেয়ে ভয়েই অসুস্থ হয়ে পড়ে অনেক শিশু। তড়িঘড়ি চিকিৎসার জন্য ৬ শিশুকে নিয়ে যাওয়া হয় জামালপুর ব্লক হাসপাতালে। বুধবার এই ঘটনার খবর পেয়ে জামালপুরের বিডিও ও সিডিপিও ব্লক হাসপাতালে ছুটে যান। শিশুদের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে খোঁজ খবর নেন তাঁরা।

কী করে ঘটল এই মহা-বিপত্তি? তদন্ত শুরু করেছে ব্লক প্রশাসন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে , জামালপুরের পাড়াতল ২ পঞ্চায়েত এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম বাগকালাপাহাড়। শিশু ও গর্ভবতী মিলিয়ে ওই গ্রামের ১৩৬ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে পুষ্টিদায়ক খাবার পাওয়ার জন্য ৫৪ জনের নাম নথিভুক্ত রয়েছে । তাঁরা মূলত খোরদোপলাশি,কাঠালডাঙা ও বাগকালাপাহাড় গ্রামেরই বাসিন্দা।

অন্যান্য দিনের মতো বুধবারও ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে শিশু ও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খিচুড়ি রান্না হয়। বেলা ১০টার মধ্যে রান্না শেষ হলে শিশু ও গর্ভবতীদের কেউ থালা, কেউ বাটিতে করে সেই খিচুড়ি নিয়ে বাড়িতে চলে যান। ঘরে বসে খিচুড়ি খেতে গিয়ে এক শিশুর অভিভাবকদের চোখ কপালে ওঠে। তাঁরা দেখেন, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে দেওয়া গরম খিচুড়ির মধ্যে একটি মরা সাপের বাচ্চা রয়ে আছে ।

আরও পড়ুন- ভবানীপুরে জোড়া খুনে গ্রেফতার ২, গায়ে কাঁটা তোলার মতো তথ্যে তোলপাড়

এই ঘটনা দেখেই ওই শিশু ও তাঁর পরিবারের লোকজন আঁতকে ওঠেন। তাঁরাই ছুটে গিয়ে গ্রামের অন্য শিশুর পরিবার ও গর্ভবতীদের বিষয়টি জানান। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের দেওয়া খিচুড়ি না খাওয়ার জন্য প্রত্যেককে সতর্ক করেন তাঁরা। ততক্ষণে অবশ্য অনেক শিশু ও মহিলা খিচুড়ি খেয়ে ফেলেছিল। শিশুদের অভিভাবকরা এই ঘটনা জেনে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। আতঙ্কে শিশুদের নিয়ে তাঁরা ছোটেন জামালপুর হাসপাতালে। চিকিৎসকরা শিশুদের শারীরিক অবস্থা খতিয়ে দেখেন। বেশ কিছু সময় তাদের নজরদারিতে রেখে দেন। পরে তাদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয় ।

হাসপাতালে আসা এক শিশুর মা গৌরী মুদি জানান, বাগকালাপাহাড় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে যে খিচুড়ি রান্না হয়েছিল তাতে সাপ ছিল। ওই সাপ-সহ রান্না করা খিচুড়ি সবাইকে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে দেওয়া হয় । অজান্তে সেই খিচুড়ি তিনি তাঁর বাচ্চা খাওয়া শুরু করে দেন। হঠাৎ থালায় গোটা সাপের বাচ্চা দেখতে পান তিনি । এর পরেই দ্রুত শিশুকে নিয়ে জামালপুর হাসপাতালে ছুটে যান।

হাসপাতালে থাকা অপর শিশুর মা রেখা মুদি বলেন, ''অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে খিচুড়ি রান্না হওয়ার সময়ে তাতে আস্ত একটা সাপ পড়ে যায়। সেটা কেউ খেয়াল করেনি। সাপ-সহ খিচুড়ি রান্না হয়ে যায়। সেই খিচুড়ি শিশু ও গর্ভবতীদের দেওয়াও হয়ে যায় । খিচুড়ি খাওয়ার সময়ে জানা যায়, তাতে সাপ ছিল। সেই খিচুড়ি আমার বাচ্চাও খেয়ে ফেলেছে।''

আরও পড়ুন- উত্তরবঙ্গে সহায় বরুণদেব! দক্ষিণে অসহনীয় গরম থেকে রেহাই কবে?

শিশুদের সঙ্গে হাসপাতালেই ছিলেন ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের দিদিমণি জ্যোৎস্না ঘোষ। তিনি বলেন, ''খিচুড়ি রান্নার সময়ে তাতে আস্ত একটা সাপের বাচ্চা কখন যে পড়ে গেল তা কারও নজরে আসেনি। সাপ-সহ খিচুড়ি রান্না হয়ে যাওয়ার পর সেন্টারের শিশু ও প্রসূতিদের তা ভাগ করে দেওয়া হয়। এক শিশু বাড়িতে গিয়ে খিচুড়ি খাওয়ায় সময়ে তাতে সাপ দেখতে পায়। ওই শিশু ও তাঁর পরিবার থালা-সমেত ওই খিচুড়ি সেন্টারে নিয়ে এসে দেখায়।'' তিনি আরও বলেন, ''আট জন শিশু ওই খিচুড়ি খেয়ে ফেলেছিল। তাঁদের হাসপাতালে পাঠিয়ে বাকিদের খিচুড়ি না খাওয়ার জন্য বলে পাঠানো হয়।''

এদিকে, জামালপুর হাসপাতালের বিএমওএইচ ঋত্বিক ঘোষ বলেন, ''শিশুদের তেমন কোনও অসুস্থতা দেখা যায়নি। তবুও ৬ শিশুকে বেশ কিছু সময় অবজারভেশনে রেখে পরে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।'' এদিকে এত বড় ঘটনা ঘটলেও জামালপুর ব্লকের সিডিপিও সুশোভন রায় মুখে কার্যত কুলুপ এঁটেছেন। বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন, ''শিশুদের বড় কোনও বিপদ হয়নি এটাই রক্ষে।''

বুধবার ১৩৬ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকা কাউকে কিছু না জানিয়েই অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি এলাকারই অন্য একজনকে রান্নার জন্য দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তবে নিয়ম অনুযায়ী এটা তিনি করতে পারেন না। যদিও ইতিমধ্যেই ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রত্যেককে শোকজ নোটিশ ধরানো হয়েছে।

আইসিডিএস-এর জেলা প্রকল্প আধিকারিক পাপিয়া হালদার চট্টোপাধ্যায় বলেন, "এই ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। কারও গাফিলতি রয়েছে কিনা, সেটা দেখা হচ্ছে।" এসডিও (বর্ধমান দক্ষিণ) কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল বলেন, "সিডিপিও একটি রিপোর্ট দিচ্ছেন। ওই রিপোর্ট দেখেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবা হবে।" অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "মহকুমাশাসক কথা বলেছেন। তাঁর কাছ থেকে একটা রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। ওই রিপোর্ট জেলাশাসকের কাছে পাঠানো হবে।"

West Bengal East Burdwan Child illness
Advertisment