New Update
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/01/malda-Lead.jpg)
পরিবারে শোকের ছায়া। ইনসেটে মৃত কিশোর। ছবি কৌশিক দে
"ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এরকম মারণ খেলা বন্ধ হওয়া দরকার। মোবাইলে টিকটক দেখেই সর্বনাশ হচ্ছে অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের। টিকটক গেম খেলতে গিয়েই এদিন গ্রামেরই এক কিশোর নির্মমভাবে মারা গিয়েছে।"
পরিবারে শোকের ছায়া। ইনসেটে মৃত কিশোর। ছবি কৌশিক দে
হুগলীর চুঁচুড়ার পর এবার টিকটককাণ্ডে চাঞ্চল্য় ছড়়াল মালদায়। টিকটক-এ নাটকীয় ছবি ভাইরাল করতে গিয়ে মৃত্যু হল এক যুবকের। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে পুখুরিয়া থানার পীরগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের পীরগায় এলাকায়। হুগলির চুঁচুড়া এলাকায় এর আগে টিকটককাণ্ডে গৃহবধূ নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। এবার মালদায় টিকটক 'খেলতে গিয়ে' মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ল এক যুবক। এই ঘটনায় পুখুরিয়া এলাকা জুড়ে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে রাস্তার একটি সিমেন্টের পোলে হাত-মুখ বাঁধা অবস্থায় ওই যুবকের নিথর দেহ দেখতে পান গ্রামবাসীরা। এরপরই ঘটনার খবর পেয়ে ওই এলাকায় পৌঁছয় পুকুরিয়া থানার পুলিশ। ওই কিশোরের দেহ উদ্ধারের পর মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। এরপরই চিকিৎসকেরা ওই কিশোরকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে দুই বন্ধুর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি পুরো ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুখুরিয়া থানা। মৃত কিশোরের দুই বন্ধু পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম কারিম শেখ (১৮)। তাঁর বাড়ি পিরগায় এলাকায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাড়ির সামনে তিন বন্ধু মিলে নাটকীয় ভঙ্গিমায় টিকটক-এ ভিডিও আপলোড করার খেলায় মত্ত ছিল। সেই খেলার জন্যই সিমেন্টের একটি খুঁটিতে করিম শেখের হাত-পা বাঁধা হয়েছিল। মুখে প্লাস্টিক গুঁজে তার উপর নাক, মুখে কাপড় দিয়ে বেঁধেও দেওয়া হয়েছিল। নাটকীয় ভঙ্গিমায় চলছিল টিকটক-এ ভিডিও আপলোড করার কাজ। সেই সময়েই শ্বাসকষ্টে অচৈতন্য হয়ে পড়ে ওই কিশোর। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে করিমের সঙ্গে থাকা দুই বন্ধুও এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় বলে খবর। এরপর রাতে কিছু মানুষ ওই রাস্তা দিয়ে ফেরার সময় হাত-পা বাঁধা অবস্থায় কারিম শেখের দেহ দেখতে পান। তৎক্ষণাৎ বাড়ির লোকেদের খবর দেওয়ার পাশাপাশি ওই যুবককে নিয়ে যাওয়া হয় আড়াইডাঙ্গা গ্রামীণ হাসপাতালে। পরে তাঁকে মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করে।
মৃত কিশোরের বাবা হায়াত আলি পেশায় দিনমজুর। মা লিলু বিবি গৃহবধু। যদিও ওই কিশোর পড়াশোনা আগেই ছেড়ে দিয়েছিল। হায়াত আলির বক্তব্য, এর আগেও বন্ধুদের খপ্পরে পড়ে এরকম টিকটক গেম খেলতে গিয়ে মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এসেছে তাঁর ছেলে। তারপর আবার সকলের অজান্তেই এদিন বাড়ি থেকে ২০০ মিটার দূরে রাস্তার ধারে দুই বন্ধুর সঙ্গে টিক টক গেম খেলছিল।
হায়াত আলিও অভিযোগ, "ছেলে একটি সিমেন্টের খুঁটি তে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ছিল । ওর মুখে প্লাস্টিক ঢুকিয়ে কাপড় দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল । তাতেই শ্বাসকষ্টে দমবন্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় কারিম শেখ । এই ঘটনার পিছনে ছেলের দুই বন্ধু আব্দুল শেখ এবং জাকির শেখ জড়িত রয়েছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে পুখুরিয়া থানায় পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে।" মৃত কিশোরের মামা বলেন, "মোবাইলে ছবি আপলোড করার জন্যই এই মারণ খেলা শুরু করেছিল। আমরা আগে কিছু জানতে পারিনি। পরে যখন জানতে পারলাম ততক্ষণে সব শেষ। আব্দুল শেখ এবং জাকির শেখ ভাগ্নের শ্বাসকষ্টের সমস্যা বুঝেও কেন ওকে খুঁটির বন্ধন থেকে মুক্ত করল না, সেটাও বুঝতে পারছি না।" ষড়যন্ত্র করেই ভাগ্নেকে খুন করা হয়েছে। এমনই অভিযোগ তুলেছেন ওই কিশোরের মামা রবিউল শেখ।
পীরগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য মাসিদুর রহমান বলেন, "ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এরকম মারণ খেলা বন্ধ হওয়া দরকার। মোবাইলে টিকটক দেখেই সর্বনাশ হচ্ছে অল্প বয়সী ছেলেমেয়েদের। টিকটক গেম খেলতে গিয়েই এদিন গ্রামেরই এক কিশোর নির্মমভাবে মারা গিয়েছে। ঘটনাটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। পুরো বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।"
পুখুরিয়া থানার পুলিশ জানিয়েছে, টিকটক গেম খেলতে গিয়ে বিপত্তি ঘটে ওই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। তবে এই ঘটনার পিছনে মৃত কিশোরের দুই বন্ধুর নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ঘটনার পর থেকে তারা পলাতক। অভিযুক্ত দুইজনের খোঁজ চালানো হচ্ছে।