ইসরোর ল্যান্ডার 'বিক্রম' চাঁদের মাটি স্পর্শ করতে পারবে কি না, তখন তা নিয়ে ভারতজুড়ে টানটান উত্তেজনা। বেঙ্গালুরুর সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টারে বসে থাকা বিজ্ঞানীদের বুকের ধুকপুকানি তীব্র আকার নিয়েছে! তার মধ্যেই বুধবার উপগ্রহ মারফত বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে শুরু হল অন্য যুদ্ধ। ইসরোর চন্দ্রাভিযানের লড়াই নিয়ে চূড়ান্ত কৌতুহলী রাজ্যবাসী তার মধ্যেই নজর ফেলল সেদিকে। কারণ, এই প্রথমবার কার্যত মুখোমুখি সোশ্যাল মিডিয়া লড়াইয়ে জড়ালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ইডি-নারদকে হাতিয়ার করে পরস্পরের দিকে কাদা ছোড়ার লড়াইয়ে তখন এ বলছেন আমায় দেখ, ও বলছেন আমায়। চন্দ্রাভিযানের সাফল্যে মধ্যে সামান্য বিরতি। তারপরই ফের শুরু হল যুদ্ধ।
শুরুটা অবশ্য করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের বুধবার প্রেস বিজ্ঞপ্তি টুইট করে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা লেখেন, 'আমি একজনের স্মৃতিকে একটু চাঙ্গা করে দিতে চাই, যিনি বারবার বলছেন তদন্তকারী সংস্থা তাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণ দিতে পারলে তিনি স্বেচ্ছায় ফাঁসির মঞ্চের দিকে হেঁটে যাবেন। রাজ্যবাসী অবশ্য তাঁর কথাকে ধর্তব্যের মধ্যে আনেন না। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার দরকার নেই। আপনি বরং তদন্তকারী সংস্থার অফিসে যান। আশা করি, আপনার বিবেককে জাগ্রত করতে এটুকুই যথেষ্ট।'
বিকেল তখন ৪টা ৯। শুভেন্দুর টুইট প্রকাশিত হতেই ১২ মিনিট পরে ধেয়ে এল অভিষেকের জবাব। নারদ-কাণ্ডে শুভেন্দুর ছবি পোস্ট করে অভিষেক টুইট করেন, 'আপনার বিবেক জাগ্রত করার জন্য এই ছবিটাই যথেষ্ট। আপনি কবে তদন্ত সংস্থার দফতরে যাবেন, জিজ্ঞাসা করতে পারি কি?'
বিকেল ৫টা বাজার ৪ মিনিট আগে ফের আক্রমণে গেলেন শুভেন্দু। তিনি আবার নারদ-কাণ্ডে সৌগত রায়, ফিরহাদ হাকিম, কাকলি ঘোষ দস্তিদারের ছবি টুইট করে লিখলেন, 'এব্যাপারে আপনি আপনার কাকা ফিরহাদ হাকিম, দাদু সৌগত রায়, পিসি কাকলি ঘোষদস্তিদারকে জিজ্ঞাসা করছেন না কেন?' একইসঙ্গে, অভিষেকের ছবিতে কেবল তাঁকে খবরের কাগজ হাতে দেখা যাচ্ছে, সেকথাও মনে করিয়ে দেন শুভেন্দু।
দক্ষিণ কলকাতা থেকে জবাব গেল বিকেল ৫টা ৪০-এ। নারদ-কাণ্ডে শুভেন্দু অধিকারীর ভিডিও পোস্ট করে অভিষেক লিখলেন, 'ইডির ডিরেক্টর ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরকে আমার খোলা চ্যালেঞ্জ, নারদ-কাণ্ডে এফআইআরে যাঁদের নাম আছে, তাঁদের সকলের বিরুদ্ধেই তদন্ত হোক। এছাড়াও, ভিডিওটি যুক্ত করা হল, যাতে এই চাক্ষুষ প্রমাণ অতীতে এবং চিরকাল উভয়ক্ষেত্রেই আপনার মধ্যে থাকা নির্লজ্জতার প্রমাণ হয়ে থাকে।'
এরপর চন্দ্রাভিযানে ইসরোর সাফল্য নিয়ে সবাই মগ্ন হয়ে পড়ে। অভিষেক-শুভেন্দু দু'জনকেই দেখা যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ইসরোকে সফল অভিযানের জন্য শুভেচ্ছা জানাতে। রাত ৮টায় ফের টুইটবাণ ছুড়লেন শুভেন্দু। তাঁর ভিডিও-সহ অভিষেক যে পোস্ট করেছিলেন, সেই টুইটের জবাবে। শুভেন্দু লেখেন, 'আপনি একটি বিরোধিতাহীন এবং সুপ্রতিষ্ঠিত সত্য জানতে চান? তা হল, আপনি আপনার ঘনিষ্ঠজন এবং আত্মীয়দেরকে অপরাধের আয়ের প্রাপক বানিয়ে তাঁদের সহযোগী বানিয়েছেন। এটা লজ্জাজনক যে তাঁরা সম্ভবত নিয়োগ এবং অন্যান্য আর্থিক কেলেঙ্কারির আনুষঙ্গিক হিসেবে বিবেচিত হবে। এছাড়াও আপনি কি আমাদের জানাতে পারেন রুজিরা নারুলা কে? আর, মানেকা গম্ভীর? যেহেতু আপনি লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের পরিচালক ছিলেন, আপনি কি দয়া করে বর্তমান পরিচালকদের নাম দিয়ে আমাদের আলোকিত করতে পারবেন?'
'বিদ্যাসাগরের দেশের ছেলে' যেন শেষ টুইটে বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, 'মেদিনীপুরের ছেলে' হারতে জানে না।