শিক্ষিকার পদে স্কুলে যোগ দিলেন সোমা দাস। ছবি আশিস দাস
শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা- রাজপথের বসে লড়াই করেছেন নলহাটির সোমা দাস। অবশেষে সেই দীর্ঘ লড়াইয়ের অবসান। স্কুল শিক্ষিকা হিসাবে কাজে যোগ দিলেন নলহাটির ক্যানসার আক্রান্ত সোমা দাস। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে শনিবার তিনি বাড়ির কাছেই নলহাটি ১ নম্বর ব্লকের মধুরা উচ্চ বিদ্যালয়ে বাংলার শিক্ষিকা হিসাবে কাজে যোগদান করেন। তাঁকে সমস্ত রকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক।
Advertisment
সোমা দাস। এতদিন তাঁকে চাকরির দাবিতে আন্দোলনকারী হিসাবেই চিনত বাংলা। এবার তাঁর পরিচয় হল শিক্ষিকা। সোমার বাড়ি নলহাটি ১ নম্বর ব্লকের পাইকপাড়া অঞ্চলের আশ্রমপাড়ায়। বছর চারেক আগে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় বসে সে। পরীক্ষায় তাঁর নাম মেধা তালিকায় থাকলেও অন্যান্য অনেকের মতোই চাকরি জোটেনি তাঁর।
এদিকে শাসক দলের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগে বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। প্রতিবাদে সরকার বিরোধী আন্দোলনে মুখর হন নলহাটির সোমা দাস। বছরখানেক ধরে কলকাতার রাজপথের ধারে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে খোলা আকাশের নিচে অবস্থানে বসেন সোমা সহ বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীরা।
চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে মা, বাবার আশীর্বাদ সোমাকে।
Advertisment
আন্দোলনকারীদের মধ্যে সোমা ছিল ব্যতিক্রম। কারণ সে ক্যানসারে আক্রান্ত। ব্যয়বহুল রোগের চিকিৎসা চালাতে সোমার অর্থের প্রয়োজন। বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেতেই তাঁকে আদালতে ডেকে পাঠান কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সোমার সঙ্গে কথা বলে স্কুল সার্ভিস কমিশনকে দ্রুত সোমার চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ মতো স্কুল সার্ভিস কমিশন সোমাকে তাঁর বাড়ির কাছে মধুরা উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগপত্র দেন।
প্রথমে নিয়োগপত্র নিতে রাজি ছিলেন না সোমা। তবে, শেষ পর্যন্ত কমিশনের দেওয়া নিয়োগপত্র গ্রহণ করেন তিনি। এদিন মধুরা উচ্চ বিদ্যালয়ে বাংলার শিক্ষিকা হিসাবে কাজে যোগদান করেন সোমা।
তাহলে এতদিন যাঁদের সঙ্গে রাজপথে আন্দোলন করেছেন তাঁদের পাশে আর সোমাকে দেখা যাবে না? জবাবে শিক্ষিকা সোমার গলায় আশ্বাসের সুর। বলেন, 'চাকরি পেয়ে আমি খুশি। তবে আমার সঙ্গে আন্দোলনরত সকলে চাকরি পেলে আরও খুশি হতাম। চার বছর পর আমার প্রাপ্য চাকরি পেলাম। নিয়মিত স্কুলে আসব। কিন্তু অবসর সময়ে আমি কলকাতার রাজপথে আন্দোলনকারীদের পাশে থাকব।'
মধুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সব্যসাচী ঘটক বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে আমাদের পদটি খালি হয়ে পরেছিল। সোমা যোগ দেওয়ায় আমরা খুশি। পড়ুয়াদেরও সুবিধা হবে। আমরা সোমাকে সমস্তরকম সাহায্য করে যাব।'