তাক লাগানো প্রতিভায় ‘বিশ্বসেরার মুকুট’! ফের একবার নিজের দক্ষতায় বিচারকদের মন জিতে নিয়ে জুটল বিশ্বসেরার সম্মান। মাত্র ৬ বছর বয়স থেকেই মাউথ অর্গান শেখা। সুরের জাদুতে সম্ভ্রম যে সহজেই যে কাউকেই পিছনে ফেলে সাফল্যের লম্বা দৌড়ে এগিয়ে যেতে সক্ষম সেটা আঁচ করতে পেরেছিলেন তার শিক্ষক। মাউথ অর্গান এবং তবলা দুটোতেই সমান দক্ষতা বছর ১১-এর সম্ভ্রমের। পাঠভবন ডানকুনির ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া সম্ভ্রম ২০২১-সালেই তাক লাগানো প্রতিভার জেরে নাম তোলে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে।
পরের বছর নিজের চেষ্টায় আর অসাধারণ দক্ষতায় সম্ভ্রম নাম তোলে এশিয়া বুক অফ রেকর্ডসে। আর সব ছাপিয়ে টানা এক ঘন্টা ননস্টপ ৪৮টি গান মাউথ অর্গানে বাজিয়ে ‘World Book Of Records’-এ নাম তোলে বছর ১১-এর সম্ভ্রম। ওয়ার্ল্ড বুক অফ রেকর্ড’স লন্ডনের পক্ষ থেকে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে সম্ভ্রমকে ডেকে সম্মান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বিরল প্রতিভার তাকে পুরস্কৃতও করা হয়। সম্ভ্রমের ঝুলিতে ইতিমধ্যেই এসেছে ওয়ার্ল্ড বুক অফ রেকর্ডসে খ্যাতিও।
সম্ভ্রমের এই বিরল কৃতিত্ব যেমন খুশি পরিবার পরিজন তেমনই খুশি মাউথ অর্গান শিক্ষক প্রবাল চ্যাটার্জি এবং তবলায় শিক্ষকঅরিত্র ব্যানার্জি। দুজনেই শ্রীরামপুরের বাসিন্দা। সম্ভ্রমের এই সাফল্য প্রসঙ্গে তারা বলেন, ‘মাত্র ১১ বছর বয়সেই পড়াশুনা সামলে একের পর এক খ্যাতি অর্জন করেছে সম্ভ্রম। যে কোন কিছু শেখার আগ্রহ এবং সেটাকে সমান ভাবে রপ্ত ও তালিম দেওইয়ার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে সাফল্যের চাবিকাঠি। সম্ভ্রমকে সব সময় যেন নতুন কিছু করার খিদে তাড়া করে বেড়ায়। আর সেই থেকেই ওর সঙ্গীতের প্রতি প্রবল ভালবাসা। আগামী দিনে সম্ভ্রমের থেকে আমাদের সকলের অনেক বেশি প্রতাশ্যা রয়েছে এবং আমরা আশাবাদী ও সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে’।
সন্তানের এই সাফল্যে বেজায় খুশি পরিবার। সম্ভ্রমের বাবা সঞ্জয় দাস ছেলের এই সাফল্য প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘সম্ভ্রম খুব ছোটবেলা থেকেই মিউজিক-এর ভক্ত, গান বাজলেই ও সবকিছু ভুলে চুপ করে সেটা শুনত। আমরা সকলের চেয়েছিলাম সম্ভ্রম পড়াশুনার পাশাপাশি কিছু করুক। ওর নিজের পছন্দের কোন বিষয় নিয়ে এগিয়ে যাক ও। প্রথমে ছেলেকে নাচে ভর্তি করলেও সেই ভাবে ও তাতে উন্নতি করতে পারেনি কিন্তু যখনই ওকে মিউজিক অর্থাৎ মাউথ অর্গান-এ ভর্তি করা হয় তখন থেকেই ওর আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতই। খুব কম সময়ের ও অনেকটাই উন্নতি করেছে। খুব কম সময়ে একটি গানকে ও মাউথ অর্গানে তুলে নিতে পারে এটাই ওর দক্ষতা। আর তার জেরেই আসে একের পর এক সাফল্য’।
ছেলের কৃতিত্ব আনন্দে আত্মহারা মা শুভ্রাদেবী। তিনি আরও বলেন, ‘এখনকার অনেক মা-বাবাই তাঁদের সন্তানদের ওপর অনেক কিছুই চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন, অনেক ক্ষেত্রে যা বাচ্চাদের স্বাভাবিক প্রতিভা ও বিকাশকে নানাভাবে ব্যাহত করতে পারে।বাচ্চাদের তাদের মত করে বড় হতে দিন, ওদের ইচ্ছা আগ্রহের দিকে বাড়তি নজর রাখুন, কারণ প্রতিটি বাচ্চা’ই কিছু কিছু প্রতিভা নিয়েই জন্মায় বাবা-মায়ের কাজ সেই প্রতিভা যাতে বিকশিত হয় সেই দিকটা নিশ্চিত করা।”
তিনি বলেন, “আমি চাই, আমার ছেলে বড় হয়েও ওর ইচ্ছাকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলুক। সঙ্গীতই ওই উৎসাহ, অণুপ্রেরণা”। সম্ভ্রমের সাফল্যে খুশি ওর সহপাঠীরাও। দাদা সম্ভ্রমের মাউথ অর্গান তাক লাগিয়ে দেয় দু’বছরের বোন সমৃতাকেও। নিজের সাফল্য সম্পর্কে বেশি কিছু না বললেও, সম্ভ্রমের আগামীর লক্ষ্য ভারতের বাইরে আয়োজিত নানান সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কার ছিনিয়ে নিয়ে আসা