Advertisment

দেবীর স্বপ্নাদেশে নবমীতে থোড় দিয়ে পুজো, বুড়িমার ইতিহাস চমকে দেওয়ার মতো

বাড়ির থেকে বারোয়ারি হয়ে ওঠার ইতিহাস বহন করছে এই পুজো

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

বুড়িমার পুজো

পুজোয় এই ৫টা দিন যেন একেবারেই বাঁধন ছাড়া আনন্দে মেতে ওঠেন সকলে। সকলের মধ্যে একেবারেই কোনওরকম ভেদাভেদ, মনোমালিন্যের রেশ টুকু নেই। সারা গ্রামের মানুষ নিজেদের আনন্দেই লিপ্ত হন এই বাড়ি এবং বারোয়ারি মিলিত পুজোয়। হুগলি জেলার সোমড়াবাজার এলাকার মানুষদের কাছে পুজো মানেই প্রাণের চেয়েও প্রিয় 'বুড়িমা'। আর এই পুজোকে ঘিরেই রয়েছে কমপক্ষে ৪৫০ বছরের বেশি ইতিহাস। 

Advertisment

বাঙালির আবেগ অনুভূতি মিলিয়েই পুজোর পাঁচদিন। আর পশ্চিমবঙ্গের নানান প্রান্তের দুর্গাপুজো বহুবছর ধরে ইতিহাসকে যত্ন করে রেখেছে নিজের কোলে। শোনা যায়, আগে সোমড়া অঞ্চলের এই পুজোর হর্তা কর্তা বিধাতা ছিলেন সেখানকার গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ব শ্রী পাঁচুগোপাল মুখোপাধ্যায়। তিনিই মাতৃ আরাধনার ভার নিজের হাতে তুলে নেন এবং সেই সময় এটি মুখার্জি বাড়ির পূজো হিসেবেই পরিচিত ছিল। নিষ্ঠাভরে মায়ের আরাধনায় কোনওরকম খামতি রাখতেন না মুখুজ্জে বাবু। 

রয়েছে বেশ কিছু নিজস্ব ইতিহাস প্রসঙ্গ। তাদের পারিবারিক সদস্যদের সূত্রে খবর, একসময় তাদের আর্থিক অবস্থা এতটাই সঙ্গীন হয়ে পরে পুজো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন পাঁচুগোপাল মুখোপাধ্যায়। পরবর্তীতে দেবী দুর্গা স্বপ্নাদেশ দিয়েই নাকি বলেছিলেন, কিছুই লাগবে না শুধু নবমীতে থোড় দিয়ে পুজো দিলেই হবে। সেই নিয়ম আজও সমানতালে বহাল। বুড়িমাকে প্রথা মেনেই নবমী তিথিতে থোড় নৈবেদ্য হিসেবে অর্পণ করা হয়। 

রয়েছে আরেকটি গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো ইতিহাস। বেশ অল্প বয়সেই পরলোক গমন করেন পাঁচুগোপালবাবু এবং তাঁর স্ত্রী। ছোট ছোট পাঁচ ছেলেমেয়েকে তাদের মামাবাড়িতে নিয়ে চলে যাওয়া হয়। বাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে থাকে। কিন্তু পুজো হবে না! গ্রামের মানুষ মানতে একেবারেই নারাজ। বেশ কয়েকবছর পুজো বন্ধ থাকার পরেই গ্রামের মানুষদের ইচ্ছে এবং ব্যাকুলতা আবার পুজো শুরু করার অনুমতি পায়। তবে এখানেই আছে এক নিতান্তই টুইস্ট। বাড়ির পুজো এবার সর্বজনীন পুজোয় পরিণত হয়। ক্লাব কর্তৃপক্ষ থেকেই এই পুজোর দায়ভার গ্রহণ করা হয়।  

কিন্তু বিপত্তি একেবারেই কমেনি। পুনরায় দেবীর আরাধনা শুরু হওয়ার পরে, প্রথাগত পুরনো বেদিতেই পুজো করা হত। সেই থেকেই পরপর তিন বছর একের পর এক দুঃসংবাদ ঘটতে থাকে। অনেকেই বলেন, যে পুরোহিত পুজো করতেন সেই নাকি মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়তেন। ফলেই এর এক বিধান নির্ধারিত করা আবশ্যিক ছিল। পুরনো বেদীর পাশেই কাঁচামাটি দিয়ে নতুন একটি বেদি তৈরি করে এখন সেখানেই পুজো করা হয়।

এখনও কিন্তু সমানতালে পরিবারের লোকেরা এবং গ্রামের সকলেই একসঙ্গে দিব্বি আনন্দেই উদযাপন করছেন বুড়িমা'র এই ঐতিহ্যবাহী পুজো। পাঁচদিন ব্যাপী আনন্দ অনুষ্ঠান হই হুল্লোড়, যাত্রাপালা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়েই দিন কোথায় পার হয়ে যায়। তাদের সদস্যদের সূত্রে জানা গেছে, আদতেই সো মড়া অঞ্চলের কোনও পুরোহিত এই পুজো করেন না। দুর থেকে আগত পুরোহিতকে ৫ দিনের জন্য উমা আরাধনায় লিপ্ত করা হয়। লোকমুখে এই পুজো 'বুড়িমা' পুজো নামেই আজও এক অসামান্য ইতিহাস বহন করে চলেছে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

West Bengal durga puja 2021
Advertisment